ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা শিল্প ॥ মহামারী প্রতিরোধে

প্রকাশিত: ২২:২৯, ৩ জুলাই ২০২০

করোনা শিল্প ॥ মহামারী প্রতিরোধে

রহিম শেখ ॥ করোনার অজুহাতে মহাখালীর একটি গার্মেন্টস কারখানা থেকে চাকরিচ্যুত হন শিরিন বেগম। করোনা লকডাউন সময়ে স্বামীর কাজও বন্ধ। দুই সন্তানকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার তখন পথে। ঠিক তখন খোঁজ পান ‘সংযোগ বাংলাদেশ’ নামের একটি এনজিওর। সেখানে এখন কাজ করছেন সেলাই মেশিনে। তৈরি করছেন গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক। রাজধানীর মহাখালী ও টঙ্গীতে গত মে মাস থেকে সেখানে শিরিনের মতো কাজ হারানো ৫০ গৃহকর্মী গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক বানানোর কাজে যুক্ত হয়েছেন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে তাদের তৈরি মাস্ক ঠাঁই পেয়েছে বিদেশেও। বিভিন্ন গবেষণায় ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাওয়া কাপড়ের বা গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ক তৈরি করছে দেশের ১০টির বেশি পোশাক কারখানা। শুধু মাস্কই নয়, করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব প্রতিরোধে কিছু ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী তৈরিতে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের সামনে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে পিপিই খাত। বিশ্ববাজারে ৫০০ কোটি ডলারের পিপিইর চাহিদা থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান যোগ হচ্ছে এই খাতে। বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৩৬ প্রতিষ্ঠান পিপিই পণ্য উৎপাদন করছে। ইতোমধ্যে পিপিই রফতানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। পিপিই নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে কুয়েত। সারাবিশ্বে পিপিইর চাহিদা বাড়ায় ‘পিপিই শিল্প পার্ক’ স্থাপন করেছে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্যিক জায়ান্ট বেক্সিমো গ্রুপ। শুধু পিপিই নয়, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও সলিউশন তৈরি করছে দেশের কিছু প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে করোনা প্রতিরোধক কাপড় বানাচ্ছে জাবের এ্যান্ড জোবায়ের নামের একটি কোম্পানি। এছাড়া দেশেই তৈরি হচ্ছে ভেন্টিলেটর বা অক্সিজেন সরবরাহকারী যন্ত্র, ফেস প্রোটেকটিভ শিল্ড, সেফটি গগলস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও থার্মোমিটার। জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বমানের পিপিইর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পিপিই তৈরিতে বাংলাদেশের তেমন অভিজ্ঞতা না থাকলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে বেশ কিছু পোশাক কারখানা পিপিই তৈরি শুরু করেছে। বিশ্ববাজারে ৫০০ কোটি ডলারের পিপিইর চাহিদা থাকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান যোগ হচ্ছে এই খাতে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কর্তৃপক্ষের সনদ, দক্ষ কর্মী তৈরি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা গেলে ভবিষ্যতে এই পিপিই দেশের একটি বড় সম্ভাবনার খাত হতে পারে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘বিশ্বের অনেক সংস্থা বাংলাদেশকে পিপিই তৈরির সক্ষম দেশে পরিণত করতে এগিয়ে এসেছে। এটি প্রচলিত পোশাকের চেয়েও একটু ভিন্ন ধরনের। এর সুইং মেশিনগুলোও আলাদা। তাই প্রচলিত প্রোডাকশন লাইনে পিপিই তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের অনেক কারখানা পিপিই তৈরির সক্ষমতা অর্জন করবে।’ তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আইএলও, ডাব্লিউএইচও, ডাব্লিএফপি, ইউনিসেফ এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের কাছে মানসম্মত পিপিই উৎপাদন ও আমাদের উৎপাদন ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা চেয়েছি।’ জানা যায়, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতের প্রায় ৩৬ প্রতিষ্ঠান পিপিই পণ্য উৎপাদন করছে। শুধু পিপিই নয়, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও সলিউশন তৈরি করছে দেশের কিছু প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে ওয়ালটন, মিনিস্টার, স্কয়ার ও এসিআইয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ৩৬ কারখানায় কিছু সুরক্ষা উপকরণ বানাচ্ছে, যেমন হ্যান্ড গ্লাভস, জুতার কভার, মাস্ক ইত্যাদি। তবে এখন পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান এন-৯৫ সনদ দ্বারা স্বীকৃত মাস্ক উৎপাদন করছে, এমন তথ্য নেই। তবে চীনের গাইডলাইন মেনে দেশে কেএন৯৫ মানের মাস্ক তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে দেশীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড। এদিকে বিভিন্ন গবেষণায় ও বিশ্বব্যাপী কাপড়ের বা গেঞ্জি কাপড়ের মাস্ককেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে গেঞ্জি (নিট) কাপড় দিয়ে বানানো মাস্ক তৈরি করছে বেক্সিমকো, রেডিসন, পলমল গ্রুপসহ ১০টির বেশি পোশাক কারখানা। এছাড়া থার্মোমিটার, ভেন্টিলেটরসহ বেশকিছু মেডিক্যাল ইকুমেন্টও তৈরি হচ্ছে দেশে। বিদেশীরা যারা বাংলাদেশ থেকে সুরক্ষা উপকরণ নিতে আগ্রহী তারা জানতে চাইছেন পণ্যগুলো সনদপ্রাপ্ত কিনা, মানসম্পন্ন কিনা। সনদসংক্রান্ত কারণেও অনেক পণ্য রফতানি করা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম জনকণ্ঠকে বলেন, করোনা প্রেক্ষাপটে চাহিদা বেড়েছে এমন পণ্যের মধ্যে আছে মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে আমাদের তৈরি ইকুইপমেন্টের বিষয়ে জানানোও হয়েছে। সরকারের সহযোগিতায় অচিরেই পণ্যগুলোর রফতানি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি। রফতানির ক্ষেত্রে অতিসম্প্রতি যে পণ্যটির চাহিদার বিষয়ে বহির্বিশ্ব থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে সেটি হলো করোনা ধ্বংস করতে সক্ষম এমন কাপড়। পণ্যটি উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান জাবের এ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ঘোষণার পরপরই বিদেশে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। জানা গেছে, জাবের এ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড উৎপাদিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী বিশেষ এ কাপড় দিয়ে মাস্ক, পিপিইর মতো সুরক্ষাসামগ্রীর পাশাপাশি শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেটসহ সব ধরনের পোশাক তৈরি করা যাবে। সুইজারল্যান্ডের দুটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় করোনা ব্লক নামের এই বিশেষ কাপড় নিজেদের টঙ্গীর কারখানায় উৎপাদন করেছে জাবের এ্যান্ড জোবায়ের। ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ করোনাভাইরাস এ কাপড়ের সংস্পর্শে আসার ১২০ সেকেন্ড বা দুই মিনিটের মধ্যে ধ্বংস হবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। জাবের এ্যান্ড জোবায়েরের সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার অনল রায়হান বলেন, আড়াই মাসের পরিশ্রমের ফসল এ করোনা প্রতিরোধী কাপড়। এরই মধ্যে বিদেশের পরীক্ষাগারে আইএসও ১৮১৮৪-এর অধীনে কাপড়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কাপড়টি বাজারজাত করার জন্য আন্তর্জাতিক মান সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সনদ নিয়েছি। বর্তমান কঠিন সময় পার করা রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কাপড়টি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এরই মধ্যে মাস্ক বা কিছু পিপিই উপকরণ রফতানি শুরু হয়েছে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সনদের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও পশ্চিমা দেশগুলোতে রফতানির ক্ষেত্রে সনদের বাধ্যবাধকতা চাওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে এমন পণ্যের মধ্যে আছে মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বলেন, অতিসম্প্রতি মাস্ক, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট জাতীয় পণ্যগুলো রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টের মধ্যে কিছু পণ্যের রফতানি আনুমানিক ৫ থেকে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া পিপিই বা সুরক্ষা উপকরণের রফতানি চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যই হলো রফতানি বাস্কেটকে বৈচিত্র্যময় করা। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন পণ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। এদিকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিসিক শিল্পনগরীগুলোতেও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে। সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে বিসিকে উৎপাদিত এসব পিপিই, স্যানিটাইজার ও মাস্ক সেনাবাহিনী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠানো হচ্ছে। বিসিক সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ বিসিক হোসিয়ারি শিল্পনগরীর মেসার্স টিএ টেক্সল্ট এ্যাপারেলস দৈনিক গড়ে ৮০০ পিস ও মেসার্স মুন্সি ফ্যাশন দৈনিক গড়ে ৫০০ পিস পিপিই উৎপাদন করছে। উৎপাদিত পিপিইগুলো পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগী। এছাড়া ফকির এ্যাপারেলস ও মেসার্স জেএস কটন ৪-৭ এপ্রিল পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৯০০ পিস পিপিই উৎপাদন করে বিভিন্ন পর্যায়ে সরবরাহ করেছে। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরীর মেসার্স নাইটিংগেল ফ্যাশন দৈনিক প্রায় ৭,০০০ পিস পিপিই তৈরি করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করছে। বিসিক শিল্পনগরী বগুড়ায় স্থাপিত ওয়ান ফার্মা লিমিটেড দৈনিক ৩০ হাজার বোতল (তিন টন পরিমাণ) হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করছে যা ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া বিসিক শিল্পনগরী নাটোর, চট্টগ্রামের কালুরঘাট, গাজীপুরের কোনাবাড়ী ও টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীরতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করা হচ্ছে। বিসিক চট্টগ্রাম (কালুরঘাট) শিল্পনগরীর তাজ সায়েন্টিফিক লিমিটেড দৈনিক ২ হাজার পিস মাস্ক উৎপাদন করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরবরাহ করছে। কারখানাটি বিভিন্ন মেডিক্যাল সরঞ্জামাদিও উৎপাদন করছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দেশের একমাত্র ডিস্টিলারি কেরু এ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড। বেক্সিমকোর ‘পিপিই শিল্প পার্ক’ স্থাপন, যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি ॥ গত মাসে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্যিক জায়ান্ট বেক্সিমো গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ লাখ পিপিই গাউন রফতানি করছে। এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণে বিশ্বমানের পিপিই উৎপাদনে সক্ষম মুষ্টিমেয় কিছু দেশের তালিকায় নাম উঠল বাংলাদেশের। যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড হানেস, এসব পিপিই গাউন তৈরির অর্ডার দিয়েছিল। মার্কিন সরকারের কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা ফেমাকে সরবরাহের জন্য বেক্সিমকোর কাছ থেকে গাউন তৈরি করে নেয় ব্র্যান্ডটি। জানতে চাইলে বেক্সিমকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং গ্রুপ পরিচালক সৈয়দ নাভেদ হুসাইন বলেন, পিপিই উৎপাদনের নতুন কেন্দ্র হয়ে ওঠার মতো সকল সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। এটা বিশ্ববাসীকে যেমন সুরক্ষিত রাখবে, ঠিক তেমনি গার্মেন্টস খাতের ৪১ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা তৈরির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক অবদান যোগ করবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সুরক্ষা সরঞ্জাম রফতানিতে বিশ্ববাজারের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যেই একটি ‘পিপিই শিল্প পার্ক’ স্থাপন করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বাণিজ্যিক গ্রুপটি। বেক্সিমকোর শিল্পাঞ্চল থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে নতুন শিল্পকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। জানা গেছে, পিপিই রফতানি বাজারের বিশ্বস্ত নাম হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে বেক্সিমকো এই খাতের শীর্ষ বৈশ্বিক পরামর্শকদের সাহায্য নিচ্ছে। পাশাপাশি পণ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে সব উপকরণ দেশে তৈরির জন্য নানা স্থাপনা প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করছে। এসব কারখানায় পিপিই গাউন থেকে শুরু করে মাস্ক ইত্যাদি উৎপাদন করা হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে মাস্ক-পিপিই তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। ইতোমধ্যে শিকাগোভিত্তিক জেস্ট ডিজাইনসের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তি করেছে বেক্সিমকো। ডেট্রয়েটে স্থানীয় সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় যৌথভাবে একটি পিপিই উৎপাদন কারখানা স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে উভয় প্রতিষ্ঠান। ফেস শিল্ড ও সুরক্ষা চশমা তৈরি করছে ওয়ালটন ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসকদের সুরক্ষায় দেশে প্রথমবারের মতো ফেস শিল্ড ও সুরক্ষা চশমা তৈরি শুরু করেছে প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে এক হাজার ফেস শিল্ড এবং সুরক্ষা চশমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মুর্শেদ বলেন, ‘এটাই দেশে ফেস শিল্ড ও সুরক্ষা চশমা তৈরির প্রথম উদ্যোগ।’ ওয়ালটন জানায়, দেশে কয়েকটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান প্রোটেকটিভ স্যুট, মাস্ক, গ্লাভস, সু কভার, হেডক্যাপের মতো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) তৈরি করলেও ফেস শিল্ড ও সুরক্ষা চশমা তৈরি কিছুটা জটিল হওয়ায় কেউই সেটা শুরু করেনি। মুর্শেদ বলেন, ‘সফলভাবে সুরক্ষা চশমা ও ফেস শিল্ড তৈরির পর এখন পিপিইর সব সামগ্রীই বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। পরবর্তীতে পিপিই রফতানির বিষয়টিও বিবেচনা করা যাবে।’ ফেস শিল্ড ও সুরক্ষা চশমা তৈরির জন্য আগেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়েছে ওয়ালটন। ফুটপাথে সুরক্ষা সামগ্রীর রমরমা ব্যবসা, নেই তদারকি ॥ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরপরই ওষুধের দোকানগুলোতে হ্যান্ড-স্যানিটাইজার, মাস্ক ও গ্লাভস কেনার হিড়িক লেগেছিল। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বেড়েছে মাস্কের চাহিদা। লাঠিতে ঝুলিয়ে অথবা পলিথিনের ব্যাগে করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরেও বিক্রি করা হচ্ছে মাস্ক ও গ্লাভস। রাজধানীর আনাচে কানাচে তৈরি হচ্ছে মাস্ক, পিপিই। এসব সামগ্রীর মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাজার ঘুরলে দেখা যাচ্ছে একসময় একবার ব্যবহারযোগ্য যে মাস্ক ও গ্লাভস ৫ টাকায় বিক্রি হতো এখন তার দাম অন্তত চারগুণ। এসব সামগ্রী খুব সহজে যেমন ফুটপাথে মিলছে, তেমনি হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে। তাদেরই একজন রাকিব হোসেন ফেসবুকে মাস্ক ও গ্লাভস বিক্রি করেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, মাস্ক বিক্রি ও এর মান নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে কোথাও থেকে কোন অনুমোদন নিতে হয়নি। তিনি জানান, আমার কোন বাড়তি অনুমোদন নেই। আমি কোন অনুমতি নেইনি। আমরা যার কাছ থেকে এগুলো নেই উনিই এইগুলো মেনটেইন করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলছেন, ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এটা করে। তারা মাঝে মাঝে অভিযান চালায়।
×