ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

ভালমন্দের বাজেট এবং করোনার ভয়াল থাবা

প্রকাশিত: ১৯:১৩, ২১ জুন ২০২০

ভালমন্দের বাজেট এবং করোনার ভয়াল থাবা

আপাতদৃষ্টিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটটি বেশ বড়। ২০১৯-২০ সালের তুলনায় এটি ৮.৮৭% বেশি হলেও মোট সমষ্টিক আয়, জিডিপির ১৭.৯% অর্থাৎ, এখনও প্রমিত সাইজ সমষ্টিক আয়ের এক-পঞ্চমাংশে (২০%) উন্নীত হয়নি। এবারের বাজেটে অনেক ইতিবাচক দিক আছে। তবে এর বিশাল কয়েকটি নেতিবাচকতা করোনার মারাত্মক বিপর্যস্ততার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে এক ধরনের নিরাশারও সৃষ্টি করেছে। কৃষিখাত ও খাদ্য নিরাপত্তা বলতে দ্বিধা নেই, আলোচিত বাজেটে কৃষিখাতের ভর্তুকি সমুন্নত রেখে (৯৫০০ কোটি) কৃষি উপকরণ কিষান-কিষানির ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় শতকরা ৪ (চার) ভাগ সুদে ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে এবং কর্মসংস্থানের জন্য ২০০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাছাড়া রাজনৈতিক কর্মীসহ যেভাবে কৃষিশ্রমিক জোগাড় করে বোরোধান কাটা হয়েছে (লালমনিরহাট থেকে সুনামগঞ্জের হাওড় এখাকায় ধান কাটার শ্রমিক এসেছেন) তার জন্য সদাশয় সরকার বিশেষ করে কৃষিমন্ত্রী মহোদয়কে অশেষ ধন্যবাদ। এখন যা দেখার বিষয় তা হচ্ছে, মধ্যস্বত্বভোগী তথা কিছু দুর্নীতিবাদ কর্মকর্তা এবং মিল মালিকদের কারসাজিতে হাসিনা সরকার সময়োচিতভাবে ঘোষিত ১০৬০ টাকা মণ দরে ধান সংগ্রহ বিষয়ে যে এন্তার নালিশ রয়েছে, তা দূর করে প্রয়োজনবোধে সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা নিয়ে ৮ (আট) লাখ টন ধান সংগ্রহ করে আগামী এক বছরের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। সমবায় প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে কৃষি উৎপাদন ও বিপণন সমবায় গড়ে তুলে, সমিতিকে অত্যন্ত সুলভ সুদে ঋণ দিয়ে এবং গুদামের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বছরব্যাপী চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা যায়। এতে উৎপাদনকারী দাম ভাল পাবে আর ক্রেতারা ভোগ করবে কম দামে- এটি হতে পারে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের একটি শ্রেষ্ঠ নৈবেদ্য। দালালদের দৌরাত্ম্যে এবং ব্যাংক কর্মকর্তাগণের চেনাজানা গন্ডির বাইরে যেতে অনীহার কারণে করোনা ঝড়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়াগণ এ সকল সুবিধা বঞ্চিত থাকছেন। একটি হিসাব মতে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা লোকের সংখ্যা এখন প্রায় দেড়গুণ হয়ে ৫ (পাঁচ) কোটি। স্বাস্থ্যখাত ২০২০-২১ সালের বাজেটের একটি মোক্ষম দিক হচ্ছে করোনায় দিশেহারা সমন্বয়হীন, দুর্নীতিগ্রস্ত, অদক্ষ, সেকেলে এবং কম ভাগ্যবানদের প্রতি অবহেলাপ্রবণ স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ ২০১৯-২০ সালের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় শতকরা ২৩ ভাগ বৃদ্ধি করে ২২,৮৮৪ কোটি টাকায় উন্নীত করা। তাছাড়া করোনার কারণে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০,০০০ কোটি টাকা। রাখা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সেবাকর্মীগণের প্রণোদনার ব্যবস্থা। সবচেয়ে সুখবর হলো- ১০০ কোটি টাকার একটি গবেষণা বরাদ্দ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় : দুর্নীতির দুর্ভেদ্য প্রাচীর (বলা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটা মানেই দুর্নীতি যেমন, ফেসমাস্ক কেনাতে পুকুর চুরি) ভেদ করে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বাইরে গিয়ে সময়মতো উচিত মূল্যে আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ সকল যন্ত্রপাতি এবং ওষুধপত্র কেনা এবং ন্যায্যভাবে বিতরণ-ব্যবহার করা যাবে কিনা। এ বিষয়ে সংস্কারের কোন উদ্যোগ বাজেটে নেই কেন? একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ড্রাগ প্রশাসন বিভাগ স্থাপন করা গেলে বিত্তবানদের ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার মওজুদ হতো না। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দামে লাগামহীনতা বিরাজ করত না। এই দুর্দিন-সঙ্কটেও কোন কোন বেসরকারী হাসপাতাল অন্যায্য মুনাফায় বিভোর থাকতেন না এবং হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে রাস্তায় রাস্তায় বিনা চিকিৎসায় অনেককেই মরতে হতো না। দেশে-বিদেশে নন্দিত ১৮ বছরের প্রধানমন্ত্রী জনবন্ধু শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- আপনার কল্যাণ রাষ্ট্রে ওপরের সংস্কার একেবারেই আশু কর্তব্য ও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সিএমএসএমই (CMSME) কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মধ্যম পরিধি বা সাইজের শিল্প উদ্যোগ (CMSME) মাধ্যমে কর্মসংস্থান তথা অর্থনৈতিক কর্মকা-ের পুনর্জাগরণ প্রচেষ্টা আলোচিত বাজেটের একটি অন্যতম ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য। ২০,০০০ কোটি টাকার রেয়াতি সুদের (শতকরা ৪.৫ ভাগ) প্রণোদনা প্যাকেজ এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এসএসই বর্ষে প্রধানত স্থানীয় উপাদাননির্ভর, স্বল্প জেস্টেশন পিরিয়ড, বিপুলভাবে কর্মসংস্থান মাধ্যমে দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনকারী অর্থনীতির এই মেরুদন্ডকে লালন করা খুব জরুরী। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো এই উপখাতটিতে বাংলাদেশেও কর্মসংস্থানের শতকরা ৬০-৬৫ ভাগ অর্জন করে প্রকৃত অর্থনীতিকে (রিয়াল ইকোনমি) সমৃদ্ধ করা সম্ভব এবং জরুরী। বাজেটে এ সম্পর্কে তেমন কোন সুনির্দিষ্ট উচ্চবাচ্য নেই। একটি ফোক্যাল পয়েন্ট এখন সময়ের দাবি। বিসিক হোক অথবা এসএম ই ফাউন্ডেশন -এর ব্যাপক আর্থিক, আইনী ও জনবলিক ক্ষমতায়ন জরুরী। সরকার প্রধানের আস্থাভাজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দিলে সিএমএসএমই উৎপাদন বিভিন্নতা (ডাইভারসিটি) অর্থবহ কর্মসংস্থান এবং বণ্টন সুসমতার শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয় ২০২০-২১ সালের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বরাদ্দ ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় মাত্র ১৩,৭০৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৯৫,৫৭৪ কোটি টাকা (বাজেটের শতকরা ১৬.৮৩ ভাগ এবং জিডিপির শতকরা ৩.০১ ভাগ) করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে অসাধারণ দূরদৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনকল্যাণে নিবেদিত এ ধারাটি শুরু করেছিলেন। এখান থেকে পেনশনের টাকা দেয়ার পর বাকিদের জন্য যা থাকে, তা থেকে বিদ্যমান উপকারভোগী ছাড়াও আরএমজি থেকে চাকরিচ্যুতি, প্রবাস ফেরত এবং করোনার কষাঘাতে নিক্ষিপ্তগণের জন্য অন্তত ১,২৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দের সুপারিশ বিবেচনা করা যেতে পারে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্তগণের জন্য দশ টাকা কেজি দরে চাল এবং অন্যান্য ত্রাণে সহায়তায় কতিপয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও জনদ্রোহী যেভাবে ভাগ বসাচ্ছে, তাতে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ চাল উৎপাদনকারী এবং চতুর্থ সর্বোচ্চ মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশ লজ্জা পেতেই পারে। অথচ বিশাল অর্জনে দশ বছর আগেই হাসিনা সরকার ‘মঙ্গা’ শব্দের ধারনাকেই এদেশ থেকে উঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এ মহামারীকালে ত্রাণচোর, নারী নির্যাতনকারী, ইয়াবা কারবারী, মানব পাচারকারী এবং বছরে ৬০০-৭০০ কোটি ডলারের ঘৃণিত মুদ্রা পাচারকারীগণের দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা সম্পর্কে বাজেটে কোন বক্তব্য নেই। বাজেট শুধু প্রবৃদ্ধি মেকি আওয়াজ হতে পারে না। এটি কল্যাণরাষ্ট্রে মানুষের প্রাণ ও মানসম্মান বাঁচানোর দর্শনে সমৃদ্ধ হতে হবে। দেশীয় শিল্পে সুরক্ষা আমদানিকৃত উপাদানে শুল্ক হ্রাস করে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠায় উৎসাহদানের ইতিবাচক ধারাটির প্রশংসা করতেই হবে। সম্প্রতি দুটো শক্তিশালী প্রতিবাদ থেকে জানা যায় যে, দেশে বিপুল পরিমাণ তরল দুধের সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও গুঁড়োদুধ প্যাকেটজাত করণের বৈদেশিক দুধমন্ডের ওপর শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। এটি চালাকি নাকি অজ্ঞতা তা জানি না, তবে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আমদানি শুল্ক ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে যেভাবে বাড়ানো হয়েছিল, সেভাবেই বৃদ্ধি করে দেশী গুঁড়া দুধ বানানোর উদ্যোক্তা চিহ্নিত করে তাদের বিপুলভাবে লালন করে স্বকল্প সংস্থান সৃষ্টির পথ প্রশস্ত করা যায়। অনুরূপভাবে ইস্পাতের আমদানিতেও শুল্ক বাড়ানো জরুরী। রীতিমতো ফলিত গবেষণায় দেশীয়ভাবে শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্র নিশ্চিত ও সমর্থন করে অর্থনীতির বহুমুখীকরণ তথা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান বছরের অভিজ্ঞতা স্পষ্ট করেছে যে, তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে প্রণোদনা ও সব ধরনের সুবিধা সর্বোচ্চ হলেও কর্মী ছাঁটাই চলছে। কারণ বিদেশী ক্রেতাগণ নাকি ক্রয়োদেশ বাতিল করছে। পশ্চাৎলিংকে দেশে বস্ত্র উৎপাদন এবং অগ্রলিংকে উচ্চতর মূল্যের দামী পোশাক এবং নতুন নতুন বাজার সন্ধানের মাধ্যমে এ খাতের বহুমুখী করা হলে আরও বছর পাঁচেক এটি বর্তমান মাপে টিকে থাকবে। বন্ড জালিয়াতির কোন বিচার হচ্ছে না কেন? শুধুমাত্র কিছু বিত্তবানের সুলভ মূল্য আমদানীর স্বার্থে অতি মূল্যায়িত টাকায় রেমিটেন্স ও পোশাক রপ্তানীতে ‘প্রণোদান’ তথা মাল্টিপল এক্সচেঞ্জ রেটের সমূহ বিপদ থেকে সরে আসাটা যত শীঘ্র করা যাবে ততই মঙ্গল। অর্থায়নের গোঁজামিল ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অর্থায়নে জোড়াতালি অত্যন্ত স্পষ্ট। শতকরা ৮.২ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বর্তমান পর্যায়িক ৪.৪ ইনক্রিমেন্টাল ক্যাপিটাল আউটপুট রেশিও (আইকর) বলে দিচ্ছে যে, জিডিপির শতকরা ৩৬ ভাগ বিনিয়োগ করতে হবে। বাজেটে বলা হয়েছে বর্তমান বছরের শতকরা ১৩ ভাগ থেকে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ শতকরা ২৫ ভাগে উন্নীত হবে। করোনায় লন্ডভন্ড এবং মূলত ব্যাংকের আকর্ষণীয় লভ্যাংশ নিয়ে সন্তুষ্ট শক্তিশালী কার্টেলভুক্ত ব্যক্তিখাতের ব্যাংক মালিকরা এ ধরনের বিনিয়োগ উল্লম্ফন দেবেন, তা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। আবার মূলধন মার্কেট বীমা প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল থেকেও আসছে না। অদ্ভুত বিধান বিএসইসিতে : একটি কোম্পানিতে যার শতকরা দুই ভাগ ইকুইটি নেই, তিনি সেখানে পরিচালক হতে পারবেন না। কালো টাকা সাদাকরণ বিভিন্ন শাসনামলে ১৬ বার ব্যর্থ প্রয়াসের পরও এবার আবার কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক ব্যবস্থা বাজেটে রাখা হয়েছে। মাত্র শতকরা ১০ ভাগ কর দিয়ে কালো টাকার মালিকগণ তাদের প্রশ্নবিদ্ধ উপায়ে কব্জা করা অবৈধ অর্থ সাদা করে ফেলতে পারবেন বিনা প্রশ্নে এবং তা মূলত আবাসন খাত ও পুঁজিবাবারে বিনিয়োগ সাপেক্ষ। অনৈতিক হলেও শেষবারের মত কঠিন শর্তাবলীর মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় (যা সরকারের নীতির কারনেও সৃষ্টি হয়) এবং অবৈধ কালো টাকা আয়করনের স্তরে নির্দিষ্ট করা আয়কর দিয়ে অর্থনীতির মূল ধারায় এনে যে কোন খাতে বিনিয়োগ করা যাবে এই শর্ত সমূহে যে- (ক) এ সম্পর্কে ভবিষ্যতে কোন প্রশ্ন করা যাবে না, (খ) ০১.০৭.২০২১ তারিখে কারও কাছে কোন কালো টাকা থাকলে তা সরকার বাজেয়াফত করতে পারবে এবং এ সম্পর্কে কোন আপত্তি আদালতে গ্রাহ্য হবে না, (গ) ব্যাংকিং সিসটেম, শুল্ক প্রশাসন, বেসামরিক বিমান চলাচল, স্থল ও নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগে কালো টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাবার সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়া হবে এবং (ঘ) ২০১৯-২০ বাজেট কালে ঘোষিত স্ক্যানিং মেশিন বসিয়ে আমদানির ওভারইনভয়েসিং এবং রফতানির আন্ডারইনভয়েসিং-এর সব রাস্তা রুদ্ধ করা হবে (সূত্র ২০১৯-২০ বাজেট বক্তৃতার পৃষ্ঠা ১৪ প্যারা ৪৮)। একটি দর্শন ও কৌশলগত কর্মপরিকল্পনার সন্ধানে বিশ্বে অর্থনীতির কক্ষপথে বিশাল উত্থান পতন এমনিতেই শুরু হয়েছিল। গণচীনের উহানে প্রথম জানা করোনা ভাইরাস যে তান্ডবে বিশ্বকে ছারখার করে দিচ্ছে, তাতে চীন অর্থনীতির বৃহত্তম পরাশক্তি হিসাবে উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ইন্দোনেশিয়ায় দেশান্তর করেছে। আবার চীন স্বদেশ এবং বিদেশ থেকে শ্রমঘনসহ অনেক কলকারখানা স্থানান্তর করছে। বেশিরভাগ গন্তব্য ভিয়েতনাম। যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলীয়সহ পশ্চিমা বিশ্ব চৈনিক ছাত্রদের ভিসা বাতিল করছে। দক্ষিণ কোরিয়ান ইপিজেডের অন্যায় জেদের কারণে আমরা নমনীয় না হয়ে বিরোধ জিইয়ে রেখে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছি (২০১৭ সালে স্যামসং-এর বিশাল বিনিয়োগ ভিয়েতনামে চলে যায়)। অর্থনীতির অক্ষশক্তি প্রতিযোগিতার খুবই উদভ্রান্ত হয়ে চীন মিত্র খুঁজছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান এমনকি রাশিয়াও চীনের সঙ্গে নেই। বিগত ১১ বছরে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থার সুযোগ এবং জনবন্ধু শেখ হাসিনার অসামান্য কূটনীতি কৌশলে বাংলাদেশ খুবই ভাল অবস্থানে। বর্তমান অস্থিতিশীল পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ আমরা কিভাবে চীনের সঙ্গে দর কষাকষি করতে পারি, তার ‘হোমওয়ার্ক’ হচ্ছে কি! চীনারা শ্রম ঘন চামড়া ও পাদুকা শিল্প, খেলাধুলার সরঞ্জাম, সাইকেল, মোটরসাইকেল, মোটরযান সংযোজন ও তৈরি পোশাক কারখানা দেশান্তর করবে। অন্য দেশে পাঠাবে কোটি ছাত্রছাত্রী। আমাদের উচিত হবে গভীরভাবে গবেষণা বিশ্লেষণ ও কৌশল নির্ধারণ করা। করোনার তান্ডব শেষ হলেই বিশ্ব অর্থনীতি লম্ফমান হবে। এতে বিপুলভাবে লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে বিসিজি বলেছিল যে, বাংলাদেশ সোয়া কোটি লোকের কাছে মাথাপিছু পাঁচ হাজার ডলারের আয় আছে (কর দেন মাত্র পঁচিশ লাখ)। এরই সূত্র ধরে মাস্টারকার্ড বলেছিল যে বাংলাদেশে উদীয়মান ভোক্তা বিলাস পণ্যের চাহিদাকারী মধ্যবিত্ত এত বেশি যে, এখানে শিল্প স্থাপন খুবই লাভজনক হবে। অর্থাৎ, এফডিআই-এর স্বর্গরাজ্য হতে পারে বাংলাদেশ। করোনার ভ্যাকসিন মাস দুই তিনের মধ্যেই বাজারে আসবে বলে অনুমান। বাংলাদেশ কি বেশি বেশি পরিমাণে এই ভ্যাকসিন কেনার যোগাযোগ ও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে! জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত এবং তাঁরই সুযোগ্য জ্যেষ্ঠ সন্তান নেতৃত্বের বিচক্ষণতার শীর্ষে থাকা শেখ হাসিনার অর্জিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের পুনরুত্থান ঘটাতেই হবে। ‘চাটার দল’ সাবধান, হুঁশিয়ার। লেখক : অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক ও সমাজকর্মী
×