ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলমগীর কবির

মিতুলদের ঈদ উপহার

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৩০ মে ২০২০

মিতুলদের ঈদ উপহার

মিতুলদের ইশকুলে লম্বা ছুটি হয়েছে। করোনার জন্য। কিছুদিন ছুটি ভালই উপভোগ করল সে। মায়ের হাতের রান্না খেতে পারল। তার মা শিক্ষকতা করেন। অনেক ব্যস্ততায় দিন কেটে যেত মায়ের। মায়ের হাতের রান্না ভারি মজার। মাকে সে ছোট্ট বেলার মতো কাছে পেয়েছে আবার। বাবার অফিসও ছুটি। তার বাবাকে অন্য সময় তেমন কাছে পেত না। এখন পেয়েছে। ওদের বাসায় একটা লাইব্রেরি আছে। অনেক অনেক বই। মজার মজার বই। সেখান থেকে বই পড়তে এখন আর মিতুলের বাধা রইল না। মিতুলের পছন্দ গোয়েন্দা গল্প। ভালভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল ওর। কিন্তু দেশের অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। যারা নিম্নবিত্ত মানুষ,তাদের কষ্ট বেড়ে গেছে। ঘরে খাবার নেই অনেকের। কাজ নেই। সামনে আবার ঈদ। মিতুল এসব বিষয় নিয়েও রোজ ভাবে। তাদের জন্য যদি কিছু করতে পারত সে। বিকেল বেলা গল্পের বই পড়ছিল মিতুল। তখন মোবাইল ফোন হাতে মিতুলের ঘরে মিতুলের মা এলেন। মা বললেন, মিতুল, আবির ফোন দিয়েছে। কথা বল। মিতুলকে মা ফোন দিয়ে চলে গেলেন। আবির মিতুলের ক্লাসমেট। মিতুলের ভাল বন্ধু। -হ্যালো আবির। -মিতুল, কেমন আছিস। -ভাল আছি। তুই কেমন আছিস? -আমিও ভাল আছি। -তোকে একটা কারণে ফোন দিয়েছি। -কারণ ছাড়া ফোন দিবি না, তা আমার জানা আছে। কী কারণ তা বল? মিতুলের কথায় আবির মোটেও রাগ করল না। হাসল। তারপর বলল, তুই তো জানিস আমাদের আশপাশের অনেক মানুষ ভাল নেই। অভাবে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমরা সব বন্ধু মিলে তাদের জন্য কিছু করতে পারি না? তুই কি বলিস? মিতুল বলল, আমিও তাই ভাবছিলাম। খুবই ভাল একটা কাজ হবে। আর কদিন পরেই তো ঈদ। আচ্ছা তুই কাজ শুরু করে দে। তুই ওইদিকে দেখ আমি এই দিকটা দেখছি। মিতুলের বেশ আনন্দ হলো। সে অনেকগুলো ভাল বন্ধু পেয়েছে এই জীবনে। মা বাবাকে সব খুলে বলতেই, মা বাবা খুব খুশি হলেন। মিতুল তার মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে ফেলল। গুনে দেখল আটশত টাকার মতো হয়েছে। তাই দেখে মা দিলেন দুহাজার টাকা। বাবা দিলেন দুই হাজার টাকা। মিতুলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। পরের দুইদিন মিতুলের ব্যস্ততায় কেটে গেল। সবুজ সোহাগ আবির সোহেল মিতু জীবন শারমিন সবাই সাধ্যমতো সহযোগিতা করল। ওদের সংগ্রহ দাঁড়লো প্রায় বিশ হাজার টাকা। বিশ জন শিশুর জন্য ঈদ সামগ্রী কিনতে পারল ওরা। ওদের উদ্যোগটা সফল হলো। অনেকে অবাক হলেন। অনেকে খুশি হলেন। দুঃসময়ের এমন দিনে অসহায়, ছিন্নমূল শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছে মিতুল ও তার বন্ধুরা।
×