ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্যোগে দেশের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২২ মে ২০২০

দুর্যোগে দেশের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের মানুষের দুঃসময়ের সহায়ই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের যেকোন সঙ্কটকালে দেশের মানুষকে রক্ষায় দিন-রাত একাকার হয়ে যায় তার। এমনিতেই করোনা সৃষ্ট মহামারী থেকে মানুষের জীবন রক্ষা এবং সবার মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। করোনার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’-এর আঘাত মোকাবেলা, পর্যবেক্ষণ এবং প্রবল এই ঘূর্ণিঝড় থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে গণভবন থেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে বারবার সংশ্লিষ্টদের দিয়েছেন প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা, যেসব জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সার্বিক খোঁজ-খবর রেখেছেন, করেছেন সার্বিক তদারকি। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সকল প্রস্তুতিই গ্রহণ করেছিল সরকার। সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন জেলাগুলোর উপকূল এলাকার ২৪ লাখের মতো মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়। তীব্র গতিবেগ নিয়েই ঘূর্ণিঝড় আমফান দেশের উপকূলে আঘাত হানলেও ভয়াবহ এ ঝড় মানুষের জানমালের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনি। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়ার পর বুধবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সর্বক্ষণ যোগাযোগ রেখে দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাত এবং ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বক্ষণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের বৃহস্পতিবার থেকেই ঘর নির্মাণ, অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ও পরিচালকরা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঈদের ছুটির সময়ও সক্রিয় থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। প্রেস সচিব আরও জানান, লকডাউন পরিস্থিতিতে সরকারী ছুটির দিনেও সবসময় খোলা ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অনলাইন এবং অফলাইনে নিয়মিত ফাইল দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিচ্ছেন। এছাড়াও মন্ত্রিসভা, একনেক, বাজেট, ৬৪ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত সভা, সর্বশেষ বুধবার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ঘূর্ণিঝড় আমফানের কবল থেকে জানমাল রক্ষায় গত বুধবার গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠক থেকেই প্রধানমন্ত্রী দ্রুত দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা ও জানমাল রক্ষায় বেশকিছু নির্দেশনা দেন। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের কবল থেকে জানমাল রক্ষায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে এবং দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় নেয়া ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক। আমি সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছি, জানমাল রক্ষারও ব্যবস্থাও আছে, বাকি আল্লাহ ভরসা। শুধু ঘূর্ণিঝড় আমফানই নয়, দেশের যেকোন দুর্যোগের সময়ই নির্ঘুম রাত কাটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রাকৃতিক কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিটি দুর্যোগে মানুষের জানমাল রক্ষায় দিন-রাত ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে সবকিছু মোকাবেলা করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা। সারাবিশ্বে ভয়াল আকারে দেখা দেয়া করোনাভাইরাসের কবল থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় তিনটি মাস এতটুকু বিশ্রাম নিতে পারেননি তিনি। রাত-দিন এক করে দেশের সকল জেলা-উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন পরিস্থিতিতে দেশের একটি মানুষও যেন না খেয়ে না থাকেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দেশের মানুষ ও অর্থনীতিকে রক্ষায় এক লাখ কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব কারণেই যেকোন দুর্যোগে দেশের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল ও দুঃসময়ের সহায় হচ্ছেন শেখ হাসিনা। এ কথা এখন সারাদেশের মানুষের মুখে মুখে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বৃহস্পতিবার বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতি মুহূর্তে তথ্য নিচ্ছেন। তার নির্দেশে ঈদের ছুটির মধ্যেও অফিসার সবাই সক্রিয় থাকবেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই করোনা এবং ঘূর্ণিঝড় আমফানের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি একইসঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সব জেলা, উপজেলা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আরও বলেন, সকাল থেকেই সচিব ও পরিচালকরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু করেছেন। বিশেষ করে দু’দিন ধরেই উপকূলীয় এলাকার লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং চিকিৎসা কার্যক্রম চালু রাখার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তিনি জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ত্রাণ বিতরণের কাজ শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, বিদ্যুত লাইন মেরামত, কৃষি ও গবাদিপশুর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, সড়ক-বাঁধ ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজও চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই সচিব। দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বুধবার রাতেও বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। তিনি বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবারের ঘূর্ণিঝড়টা অনেক শক্তিশালী। যার কারণে আমাদের (পানি বোর্ডের বাঁধের) সক্ষমতার চেয়ে বেশি। যে কারণে অনেক এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ১৬ হাজার ৬শ’ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে উপকূল এলাকায় রয়েছে ৫ হাজার ৭৯৭ কিলোমিটার।
×