ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে গেছে ছুটির মানে মেয়াদ বাড়লেও আনন্দ নেই

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৪ মে ২০২০

বদলে গেছে ছুটির মানে মেয়াদ বাড়লেও আনন্দ নেই

মোরসালিন মিজান ॥ ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে/ও বন্ধু আমার...। না, কোন বন্ধু বা সুহৃদের দেখা নেই। সেই কবে থেকে ঘরবন্দী মানুষ! হাত ধরে বাইরে বের করে আনার কেউ নেই। বর্তমানটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার। ভবিষ্যত আরও বেশি ঝুঁকির মুখে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মেয়াদও তাই বেড়ে চলেছে। মহা ব্যস্ত জীবনে হঠাৎ পাওয়া ছুটি প্রাথমিকাভাবে বিপুল আনন্দের উপলক্ষ হয়েছিল। বহু মানুষ উপভোগ করেছেন। কিন্তু উপর্যুপরি ছুটি যেন ছুটির অর্থটাই পাল্টে দিয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের কাছেই ছুটি মানে, ঘরবন্দী জীবন থেকে মুক্ত না হতে পারার আক্ষেপ। করোনাভাইরাসের সঙ্গে পেরে না ওঠার হতাশা। হ্যাঁ, বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণেই দেশজুড়ে চলছে সাধারণ ছুটি। প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর মেয়াদ বাড়িয়ে তা ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তৃতীয় দফায় সময় বাড়ানো হয় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। চতুর্থ দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ে মেয়াদ। পরে বেড়ে তা ৫ মে পর্যন্ত করা হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত নির্ধারণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত মোট ছয় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। প্রথম প্রথম ছুটিটা ছুটির মতোই ছিল। উপভোগ করেছে মানুষ। এর আগের জীবন ছিল বেদম ছোটাছুটির। দিন রাত কাজের মধ্যে থাকতে হয়েছে। সকাল হতেই বাসা থেকে খেয়ে না খেয়ে বের হয়ে পড়া। সারাদিন কাজ। সন্ধ্যা হয়। রাত নামে। তবু কাজ শেষ হতে চায় না। ঘরে অপেক্ষায় থাকেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। বাসায় ফিরে স্ত্রী সন্তানকে দেয়ার মতো সময় থাকে না হাতে। অপূর্ণতা আর আক্ষেপ নিয়েই কাটাতে হতো এক একটি দিন। এ অবস্থায় শুরু হয় করোনার কাল। দেখতে দেখতে চীন থেকে গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে কোভিড-১৯। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তার পর থেকেই এক ধরনের ভীতি কাজ করতে থাকে মানুষের মধ্যে। নিজ উদ্যোগে অনেকেই ঘরে ঢুকতে শুরু করেন। অবস্থা ক্রমে খারাপের দিকে যেতে শুরু করলে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি কল কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। প্রত্যাশা ছিল সহসাই ঠিক হয়ে যাবে সব। বাস্তবে তা হয়নি। বরং বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে করোনা। প্রতিদিন বাড়তে থাকে মৃত্যু। একই শঙ্কা থেকে বাংলাদেশে বাড়তে থাকে ছুটির মেয়াদ। কিন্তু অতিরিক্ত কোন কিছুই তার চাহিদা ধরে রাখতে পারে না। সরকারের সাধারণ ছুটির বেলায়ও তাই হয়েছে। দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকায় ছুটির অর্থটাই যেন বদলে গেছে। এখন ছুটি বাড়া মানে, ঘরবন্দী জীবন দীর্ঘ হওয়ার হতাশা। বিচ্ছিন্নতার কষ্ট নিয়ে ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরা। জীবনও তো চালাতে হবে। চাকরি ব্যবসা না করা গেলে চলবে কী করে? আরও নানা ইস্যুতে শঙ্কা বাড়ছে। সবাই তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। ছুটি তাদের কাছে আর কোন আবেদন রাখতে পারছে না। গত কয়েকদিনে অঘোষিত লকডাউন পরিস্থিতিও কিছুটা রূপ পাল্টেছে। এখন ঢাকার রাস্তায়, হাইওয়েতে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। গার্মেন্টসকর্মীসহ শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে বের হতে শুরু করে দিয়েছেন। রবিবার ফার্মগেটে কথা হচ্ছিল আল আমিন নামের এক ঠেলাগাড়ি চালকের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমাগোর তো বন্ধ টন্ধ নাই। কিন্তু করোনার কারণে সব বন্ধ। আমরাও কাজ পাই না। এই কারণে বাড়িতে চইলা গেছিলাম। কিন্তু এতদিন কাজ কাম ছাড়া থাকুম কেমনে? কে খাইওয়াইবো? তাই সরকারী ছুটির মধ্যেও বাইর হইছি। তবে সচেতন ও সক্ষম মানুষেরা কষ্ট হলেও ঘরে থাকার পক্ষে। এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল কবি তারিক সুজাতের সঙ্গে। একইসঙ্গে অনেকগুলো ব্যবসা তার। সবই ছুটির আওতায় এখন। কেমন বোধ করছেন? জানতে চাইলে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও নিশ্বাস নেয়ার সময় পেতাম না। দৌড়াদৌড়ির মধ্যে থাকতে হতো। সাধারণ ছুটি শুরু হলে আমিও সব বাদ দিয়ে ঘরে ঢুকেছি। প্রথম প্রথম মন্দ লাগেনি। ঘরে বসে কবিতা লিখেছি। বই পড়েছি। সময় কেটে গেছে। কিন্তু এখন সময় কাটতে চায় না। তার চেয়ে বড় কথা, স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নানা কারণেই জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই বলে হতাশ হয়ে বাইরে বের হয়ে আসার পক্ষে নন তিনি। বলেন, সরকার বুঝে শুনেই ছুটি বাড়াচ্ছে। যতদিন এ ছুটি চলবে ততদিন ধৈর্য ধরে সকলকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
×