ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েকদিন চলবে বজ্রবৃষ্টি

বজ্রপাতে এপ্রিলেই ৬০ জনের মৃত্যু ॥ শঙ্কা বাড়ছে প্রাণহানির

প্রকাশিত: ০০:৫২, ৩০ এপ্রিল ২০২০

বজ্রপাতে এপ্রিলেই ৬০ জনের মৃত্যু ॥ শঙ্কা বাড়ছে প্রাণহানির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বজ্রপাতের ঘনঘটা বাড়ছে। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী এই এপ্রিলেই বজ্রপাতে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর বজ্রপাতে আড়াই শ’ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। এই অবস্থায় আবহাওয়া অফিস সারাদেশে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা বলেন, এই সময়ে বজ্রপাতে প্রাণহানি বাড়তে পারে। এদিকে সারাদেশেই গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীতে শুরু হয় বৃষ্টি। তা থেমে থেমে সন্ধ্যা অবধি চলে। দুপুরের পর মেঘের গর্জন শুরু হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী কয়দিন এইধারা অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সম্প্রতি দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানি আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। মৌসুম শুরু হলেই প্রতিবছর কয়েক শ’ লোকের প্রাণ ঝড়ছে। এ বছর মৌসুম শুরু না হতেই বজ্রপাতের ঘনঘটা যেমন বেড়ে গেছে প্রাণহানিও আশঙ্কাজনক বেড়েছে। এই অবস্থায় তারা বলছেন দেশের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করে প্রাণহানি কমিয়ে আনার ওপর নজর দিতে হবে। দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন। প্রতিদিন শত শত লোক আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যেই বজ্রপাতেও ঝরছে প্রাণ। চলতি এপ্রিল মাসের ২০ দিনে বজ্রপাতে ৫৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত বছরের পুরো এপ্রিল মাসে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ২১। দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংগঠন ডিজাস্টার ফোরামের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বজ্রপাত বলতে আকাশের আলোর ঝলকানিকে বুঝায়। এই সময় উক্ত এলাকার বাতাসের প্রসারণ এবং সংকোচনের ফলে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। এ ধরনের বৈদ্যুতিক আধারের নির্গমণ দুটি মেঘের মধ্যে অথবা একটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও হতে পারে। দেশে গত কিছুদিন ধরে প্রতিদিনই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এই কারণে প্রাণহানি ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলোয় বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। তারা বলছেন দেশে বজ্রপাতের মূল কারণ দেশটির ভৌগলিক অবস্থান। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে গরম আর আর্দ্র বাতাস আসছে। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ী এলাকা, কিছু দূরেই হিমালয় রয়েছে, যেখান থেকে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইটা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠাণ্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয় আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্র মেঘের। এরকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। এরকম উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে। তারা বলছেন দেশের আয়তন হিসাবে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এর কারণ হিসাবে সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন। ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা বা নেপালে বজ্রপাত হলেও সেখানে মৃত্যুর হার এত বেশি নয়। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চল বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোর অন্যতম। গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। তাদের মতে, যেসব এলাকায় গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে সেসব এলাকায় যে মেঘের সৃষ্টি হয়, সেখান থেকেই বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে। কোন কোন গবেষক বলেন তাপমাত্রা এক ডিগ্রী বাড়লে বজ্রপাতের সম্ভাবনা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। পৃথিবীর যে কয়েকটি অঞ্চল বজ্রপাত প্রবণ তার মধ্যে দক্ষিণ-এশিয়া অন্যতম। এর মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের হার যেমন বেশি তেমনি প্রাণহানিও হচ্ছে বেশি।
×