ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জের হাওড়ে কৃষি ও পরিকল্পনা মন্ত্রী

শুধু হাওড় নয়, সারা দেশের ফসল ঘরে তোলা জরুরী

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ২৯ এপ্রিল ২০২০

শুধু হাওড় নয়, সারা দেশের ফসল ঘরে তোলা জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সময়টা বোরো ধান কাটার মৌসুম। আমাদের সারা বছরের মোট চাল উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি যোগান দেয় বোরো ধান। সেজন্য, শুধু হাওড় নয়, সারাদেশের ফসল সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা জরুরী। এটি করতে পারলে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। দেশের স্বার্থ, কৃষকের স্বার্থ গুরুত্ব দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, বুধবার সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় হাওড়ে কৃষক ও শ্রমিকদের ধান কাটায় উৎসাহ দিতে এবং বোরো ধান কাটার অগ্রগতি দেখতে যান কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এবং পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী নতুন দুটি হারভেস্টার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ১০০ কোটি টাকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সারাদেশে ধান কাটা সহজতর করতে মোট ২০০ (আগের ১০০ ও প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ১০০) কোটি টাকার মাধ্যমে প্রায় ১৩০০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৯৩৪টি রিপার, ২২টি রাইস ট্রান্সপ্লানটারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে সম্প্রতি পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। পরিদর্শন শেষে মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, বলেন, করোনার বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও হাওড়ের বোরো ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসে ধান কাটছেন। পাশাপাশি হাওড়ের জন্য জরুরী ভিত্তিতে ধান কাটা যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে হাওড়ের কৃষক যাতে সহজে যন্ত্রপাতি কিনতে পারে সেজন্য যন্ত্রের দামের ৩০% দেয় কৃষক এবং ৭০% দেয় সরকার। একই সঙ্গে, দেশের অন্য এলাকা থেকে হাওড়ের আগাম বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে ইতোমধ্যে হাওড়ের ৬৫% বোরো ধান কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছে। সুনামগঞ্জসহ অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। এই দুটি খাত একে অপরের পরিপূরক। স্বাস্থ্য ও কৃষি ছাড়া বাঁচা যাবে না। সেজন্য আগামী বাজেটে কৃষি খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো হবে। যাতে করে কৃষিকে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। পরে কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী কৃষকদের মাঝে সাবান, মাস্ক, গামছা ও লুঙ্গি বিতরণ করেন। এ সময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার সব সময় কৃষক ও শ্রমিকদের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে কেউ মারা গেলে তাঁর ত্রাণ তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষার সঙ্গে কৃষি কাজ চালিয়ে যেতে কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মন্ত্রী আহ্বান জানান। যাতে করে করোনা পরিস্থিতিতেও কৃষি উৎপাদন অব্যাহত থাকে। কেউ অসুস্থ বা করোনাক্রান্ত হলে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতাও প্রদান করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। খাদ্য সঙ্কট বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বার বার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কারণে সবাই উৎসাহিত হচ্ছেন, কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। মাঠের কৃষকদের উৎসাহ দিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাঠে ধান কাটছেন বলে তাদের প্রশংসাও করেন মন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর সব মিলিয়ে কৃষিখাতে ১৪ হাজার কোটি ঋণ দেয়া হয় সেটি এখন ৪ শতাংশ সুদে দেয়া হবে। আগে ছিল ৯ শতাংশ। আগামী আমন মৌসুমে আরও ১৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হবে। এর ভেতরে ভর্তুকিও দেবে সরকার। মন্ত্রী বলেন, এ বছর মোট ১৯ হাজার কোটি টাকা কৃষিতে প্রণোদনাসহ ভর্তুকি দেয়া হবে। কৃষির বিষয়ে বিশেষভাবে সহযোগিতা করা হবে। করোনার কারণে যাতে খাদ্য উৎপাদনে কোন প্রকার ব্যঘাত না ঘটে সে কারণে এই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পৃথিবীর অন্য দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলেও বাংলাদেশে যাতে সেটি না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের তালিকা করে দিয়েছি। বোরো চাষীদের মধ্যে লটারি করে ধান নেয়া হবে। ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে লটারিতে মধ্যস্বত্বভোগী, রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক প্রভাব কোন কিছু করার সুযোগ নেই। ২২টি জেলায় কম্পিউটারের মাধ্যমে লটারি করা হবে। সত্যিকারের কৃষক খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ধান দিতে পারবেন। আমরা সেই মেকানিজম করেছি। পরিদর্শনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, মুহিবর রহমান মানিক, মহিলা সংসদ সদস্য শামিমা শাহরিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান বিপিএম এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সফর উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×