ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি মৌসুমে ২১ লাখ মে. টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত;###;ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী ;###;সাহসের সঙ্গে করোনা সঙ্কট মোকাবেলার আহ্বান ;###;রোজার মাসে খাদ্য সরবরাহের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২১ এপ্রিল ২০২০

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগের সময় ভেঙ্গে না পড়ে বরং সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দুর্যোগে ভেঙ্গে পড়া যাবে না, শীঘ্রই সঙ্কট কেটে যাবে। সাহসের সঙ্গে এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে। মনে সাহস নিয়েই বঙ্গবন্ধুর ডাকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এবারও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সেই সাহস নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এখানেও বাঙালীকে জয়ী হতে হবে। সেই চিন্তাভাবনা নিয়েই আমরা কাজ করছি। দেশবাসী আরেকটু সচেতন হলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণে চলতি মৌসুমে সরকার ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন বাজারে যেন জিনিসের অভাব না হয়। এই করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বে খাদ্য মন্দা সৃষ্টি হবে, আগামীতে হয়তো বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা যদি খাদ্য উৎপাদন করে আমাদের মজুদ রাখতে পারি তাহলে আমরা সেই দুর্ভিক্ষে পড়ব না বরং আমরা অনেককে সাহায্য করতে পারব। আমাদের সেই ব্যবস্থা এখন থেকেই নিতে হবে। তিনি নতুন ৫০ লাখ লোকের রেশন কার্ডের তালিকায় দলমত নির্বিশেষে যাদের প্রয়োজন সে রকম কেউ যেন বাদ না পড়ে এবং যারা হাত পাততে পারেন না তেমন কেউ যেন খাদ্য সাহায্য বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, স্থানীয় মসজিদের ইমাম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেশের কোন জমি যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে, যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। রোজার মাসে খাদ্য সরবরাহের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ আমাদের খাদ্যের কোন অভাব হবে না। সরবরাহকৃত পিপিই ও মাস্কের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়ে জানান, দেশের মানুষ যেন কষ্ট না পায়, যারা হাত পাততে পারে না তাদের ঘরে ঘরে যেন খাদ্য সামগ্রী পৌঁছায় বিষয়টি দেখভালের জন্য সচিবদের বলা হয়েছে। একই সঙ্গে করোনার কারণে প্রকৃত যারা কষ্টে আছে তাদের সঠিক তালিকা তৈরির জন্য দলের নেতাকর্মীদেরও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনে সকাল ১০টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের আটটি জেলার জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন। ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, স্থানীয় মসজিদের ইমাম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর সংযুক্ত ছিল। ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ সদরের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ৪ দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট এবং বরিশাল বিভাগের ৪৩ জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সোমবার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পিএমও সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য ক্রয় করবে সরকার ॥ মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের করোনাভাইরাস সৃষ্ট প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেন, সরকার করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণে চলতি মৌসুমে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে আগের বছরের চেয়ে বেশি ধান, আতপ চাল ও গম সংগ্রহ করা হবে। সাধারণ বোরোতে আগে যা আমরা নিতাম, তার চেয়ে অনেক বেশি আমরা নিচ্ছি। এখন আমরা প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করব। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সরকার কিনে রাখবে। তাতে আমাদের আর ভবিষ্যতে কোন অভাব হবে না। আমরা মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে পারব। আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে উল্লেখ করে তিনি বাজারে পণ্য সরবরাহ বজায় রাখতে মনিটরিং জোরদারকরণেও প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাদের খাদ্যের কোন অভাব হবে না। তাছাড়া এখন ধান উঠছে। ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে। আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সঙ্গে তরিতরকারি ফলমূল যে যা পারেন উৎপাদন করবেন। ধান কাটায় সহযোগিতার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং ছাত্র সমাজের প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। সরকারপ্রধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশে কোন জমি ফেলে না রাখার পাশাপাশি একই জমিতে একাধিক ফসল ফলানোর অংশ হিসেবে ধান কাটার পরপরই সেই জমিতে অন্য ফসল লাগানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এই সঙ্কটে দেশে যেন খাদ্যের সমস্যা না হয় সেজন্য সব জমিতে ফসল ফলাতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে সকলে দৃষ্টি দেবেন। প্রণোদনা থেকে কেউ বাদ যাবেন না ॥ করোনার কারণে দেশের ভবিষ্যত অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছি, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কৃষি খাতে আরও বেশি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা ধাপে ধাপে রফতানিমুখী খাত, বৃহৎ শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসায়ীর জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। পরে কৃষি খাতের জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। এই প্রণোদনা কেবল ধান চাষীদের জন্য নয়, মৎস্য-পোল্ট্রি-ডেইরি সব খাতকে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং কোন খাত প্রণোদনা থেকে বাদ পড়বে না। করোনা যুদ্ধ মোকাবেলায় সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশই এই প্যাকেজ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে, তা শুধু এই বছরের জন্য না। আগামী তিন বছর দেশের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেটা মাথায় রেখেই এই প্রণোদনা। এটা অব্যাহত রাখা হবে। আমরা কেন এটা করছি? এজন্য করেছি, আমাদের অর্থনীতিটাকে সচল রাখার জন্য। কোন সেক্টর বাদ যাচ্ছে না, সব সেক্টরের জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচীর আওতায় পরিচালিত ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর সঙ্গে রেশন কার্ডের মাধ্যমে আরও ৫০ লাখ যোগ করে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা এবং এর মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি লোককে সহযোগিতা প্রদানের সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তারা ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস’র চাল ক্রয়ের সুযোগ পাবেন। তিনি নতুন ৫০ লাখ লোকের তালিকায় দলমত নির্বিশেষে যাদের প্রয়োজন সেরকম কেউ যেন বাদ না পড়ে এবং যারা হাত পাততে পারেন না তেমন কেউ যেন খাদ্য সাহায্য বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, সেই তালিকাও আমরা করতে বলেছি যেটা একেবারে ডাটাবেজ করা থাকবে। যেন প্রতিটি মানুষ অন্তত খাদ্য পায়। সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, সবাইকে সুরক্ষিত রাখুন ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং অবস্থান পরিবর্তন না করে নিজ নিজ অবস্থানে থাকার আহবানও পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি বলেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সবাই সচেতন হলে করোনা থেকে অনেককে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে। দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটু সচেতন হলেই বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং অযথা ঘোরাঘুরি করে নিজেকে এবং অন্যের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না। সারাদেশে করোনা চিকিৎসায় কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য ৫০৭ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্ব আজ আতঙ্কিত। বিশ্বের প্রায় আড়াই শ’ কোটি মানুষ ঘরবন্দী। বিশ্বে আগে কখনও এমন পরিস্থিতি দেখেনি। করোনায় গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির। বন্ধ রয়েছে মসজিদ-মন্দির-গীর্জা, প্যাগোডাসহ সব প্রার্থনার কেন্দ্র। বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ভাল আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চলতি এপ্রিল মাসে যেন সংক্রমণ অধিকহারে বাড়তে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, এপ্রিল মাসটি আমাদের জন্য একটু কষ্টকর হবে। এ মাসে সাবধানে থাকতে হবে। তারপরও ইউরোপ-আমেরিকায় যে পরিমাণ রোগ সংক্রমিত হয়েছে তার তুলনায় আমাদের দেশে কম। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেই বাঙালী মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশীদের মৃত্যুতে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজারে বেচাকেনা চালু রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে, যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কোন বাজারে যেন জিনিসের অভাব না হয়। বড় খোলা জায়গায় যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখে হাট-বাজার পরিচালনা করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ॥ মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারাবিশ্বে যেখানে হাজার হাজার লোক প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এপ্রিল মাসের আজ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আমি মনে করি যে, আমাদের জনগণ যদি আরেকটু সচেতন থাকেন, আরেকটু নিজেদের সুরক্ষিত রাখেন তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। আমি আশা করি সবাই তা করবেন। নোভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশে যে পরিমাণ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে এটা ভয়াবহ। একমাত্র ইউএসএতেই আমাদের বাঙালী প্রায় দেড় শ’ জনের মতো মৃত্যুবরণ করেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এ রকম একটা উন্নত দেশে থেকে এভাবে আমাদের বাঙালীরা মারা যাবে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রতে যেমন মারা গেছে, ইউকেতেও আমাদের বাঙালী ডাক্তারসহ অনেকেই সেখানে মৃত্যুবরণ করেছে। আর এভাবে অন্যান্য দেশেও আমরা যদি দেখি বাঙালী অনেকেই মারা যাচ্ছে। সেই তুলনায় আমি যদি বাংলাদেশের কথা বলি, ইতোমধ্যে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৩ হাজার ৮৮৫ জনের পরীক্ষা হয়েছে। দুই হাজার ৪৫৬ জনের ভেতরে এই রোগের সংক্রমণ দেখা গেছে আর ৯১ জনের মতো এ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেছে। এটাও দুঃখজনক। কেউ মারা যাক এটা আমরা চাই না।’ নতুন এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে নিজেকেই সুরক্ষিত রাখতে হবে। আমরা যদিও চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবুও আমরা দেখি আসলে আমাদের দেশের অনেকেই এটা ভালভাবে মানতে চান না, যার ফলে সংক্রমিত হয়ে যাচ্ছেন। তবে খুব দোষ দেয়ারও কিছু নেই, কারণ এমন একটা ভাইরাস যেটার কোন লক্ষণও বোঝা যায় না, দেখাও যায় না। শুধু আক্রান্ত হলে পরীক্ষা করলে বোঝা যায় অথবা যখন খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন বোঝা যায়। গার্মেন্টস চালালে কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ॥ গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেখানকার পুলিশ সুপার কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিছু গার্মেন্টস মালিকরা করোনার সুরক্ষা সামগ্রী তৈরির নামে অন্য কাজ করছেন এবং কিছু গার্মেন্টস কারখানার সমন্বয়ের অভাবে গাজীপুর জেলা আজ করোনা আক্রান্ত বলে অভিযোগ করেন পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব, পরবর্তীতে গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বসব। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি চালাতে গেলে কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এগুলো পরিচালনা এবং খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নেয়া হবে বলে জানান। অতীতে চিন্তা-ভাবনা না করেই হঠাৎ কারখানা খুলে দিয়ে কর্মীদের ঢাকা আসার ঘোষণা দেয়ায় অনেকেই যে সমস্যায় পড়তে হয়, সে প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। কিছু কিছু শিল্প কারখানা খুলে দেয়া ছাড়া উপায় নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে কিভাবে এই শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো যেতে পারে, তাদের সুরক্ষিত রেখে এবং তাদের থাকার জায়গা দিয়ে সুরক্ষিত রাখা- এসব বিষয় নিয়ে তিনি গার্মেন্টস মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি বলেন, যেসব ইন্ডাস্ট্রিগুলো নিজস্ব জায়গায় আছে, সেখানে কর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে থাকার ব্যবস্থা করতে পারে। তবে কিছু কিছু ইন্ডাস্ট্রি তো চালু করতেই হবে। বিশেষ করে ওষুধ শিল্প, করোনাভাইরাসের জন্য পিপিই থেকে শুরু করে মাস্ক- এগুলো তৈরি করছে যে ইন্ডাস্ট্রিগুলো, তাদের জন্য তো খোলা রাখতেই হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, গতবার যখন হঠাৎ যেভাবে শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে আসল, সেটা টিক হয়নি। ঢাকায় আসা-যাওয়ার যে কষ্টটা শ্রমিকরা পেয়েছে, তারপর পরদিন বলছে চলে যান। যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ। তারা মাইলের পর মাইল হেঁটে হেঁটে, মেয়েরা পর্যন্ত তাদের স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটে হেঁটে এসে পৌঁছে ছিল- এ রকম অবস্থায় তাদের যেন পড়তে না হয়। প্রয়োজন হলে তাদের আনার ব্যবস্থা করতে হবে, তারপর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবে এমন কারখানা চালু করতে পারবে। শেখ হাসিনা বলেন, এটা ঠিক সামনে রোজা, আমরা সবাইকে একেবারে বন্ধ করে রাখতে পারব না। যেহেতু গাজীপুরে খুব বেশি করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে, তাই এটা আপনাদের চিন্তা করতে হবে ২৪-২৫ এপ্রিলের পর ইন্ডাস্ট্রিগুলো চালু করা ঠিক হবে কিনা। কি পরিমাণ রোগী আছে, সেটা শনাক্ত করে কতজন আক্রান্ত হয়েছে, সে বিষয়টা আগে জানতে হবে। পরীক্ষা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে নিয়ম দিয়েছে, সে নিয়ম মেনেই চলতে হবে। ইচ্ছামতো পরীক্ষা করলে আর বলে দিলে সেটা কিন্তু গ্রহণযোগ্য হবে না। বিষয়টা খেয়াল রাখা দরকার। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি শনাক্ত। তারপর নারায়ণগঞ্জ এরপর গাজীপুরে বেশি করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এই রোগী বাড়ার প্রবণতা তো ঠিক না। সেটা মাথায় রেখে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সীমিত আকারে কারখানা খোলা রাখা যেতে পারে।
×