ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ দিন আটক থেকে পাটের বীজ নিয়ে ৬২ ট্রাক এলো বুড়িমারী স্থলবন্দরে

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ৬ এপ্রিল ২০২০

  ১৪ দিন আটক থেকে পাটের বীজ নিয়ে ৬২ ট্রাক এলো বুড়িমারী স্থলবন্দরে

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের বিপরীতে থাকা ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে ১৪ দিন ধরে আটকে ছিল ৬২টি ট্রাক আমদানি করা পাটের বীজ। অবশেষে দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে শনিবার রাতে ১২শ’ মেঃ টন পাট বীজ (৬২টি ট্রাক) বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে। শনিবার রাত সাড়ে আটটায় বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ডিডি) মাহফুজুল ইসলাম এই আমদানিকৃত ১২শ’ মেট্রিকটন পাট বীজ ৬২টি ট্রাক বোঝাই হয়ে বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সারাবিশ্বের ২০৫টি দেশে সংক্রমিত হয়। ফলে ভারত সরকার তার দেশের জনগণকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। ফলে ২২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে তার দেশের সকল স্থলবন্দর, বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও সকল পাসপোর্টধারী যাত্রীকে যাতায়াতের ইমেগ্রেশন রুটগুলো বন্ধ ঘোষণা করেন। ফলে বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষির জন্য আমদানি করা (৬২টি ট্রাক বোঝাই) ১২শ’ মেট্রিকটন পাট বীজ ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে আসার পরেও ছাড়পত্র বিলম্বে পাওয়ায় বাংলাদেশের বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। ৩১ মার্চের পর ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দুই দেশের স্থলবন্দর চালুর কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ভারত সরকার চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর চালু করার সিদ্ধান্ত অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। ফলে পাটবীজ বোঝাই ৬২টি ট্রাক চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে ১৪দিন ধরে আটকা পড়ে থাকে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ১২শ’ মে.টন পাট বীজ বোপনের মৌসুমের সঠিক সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ নিয়ে। এতে করে সোনালি আঁশখ্যাত বাংলাদেশের জাতীয় ফসল পাট বীজের অভাবে পাট চাষে বিঘ্ন ঘটার সংশয় দেখা দেয়। দেখা দেয় বীজ সঙ্কটের কারণে পাট মৌসুমের শুরুতে পাট বীজের সঙ্কট সৃষ্টি করে বীজ ব্যবসায়ীদের উচ্চ মোনাফা করার সম্ভাবনা। উচ্চ ফলনশীল ও উন্নতজাতের পাট বীজের অভাবে পাট চাষে কৃষক নিরুৎসাহিত হওয়ার ঝুঁকি। এতে করে পাট বীজ সঠিক সময়ে না পেলে পাট চাষ মৌসুমে দেশে পাটচাষ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই আমদানিকৃত পাট বীজ সঠিক সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা। ফলে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ। পরে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে টেলিফোনের চলে আলোচনা। অবশেষে শনিবার রাতে পাট বীজ বোঝাই ৬২টি ট্রাক চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর হতে বুড়িমারী স্থলবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থায় প্রবেশের সিদ্ধান্ত হয়। তাই সকল সঙ্কটের অবসান ঘটিয়ে পাট বীজ বোঝাই ট্রাকগুলো শনিবার রাতে সরকারী ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও একে একে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। বুড়িমারী বন্দর কর্তৃপক্ষ ও কাষ্টমস্ কর্তৃপক্ষ পান বীজ বোঝাই ট্রাকগুলো বুঝে নেয়। এতেই নিশ্চিত হয়ে যায় পাট বীজ বোপনের মৌসুমে সঠিক সময়ে বাংলাদেশের কৃষকের হাতে পৌঁচ্ছে দেয়া যাবে পাট বীজ। বুড়িমারী স্থলবন্দর সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী তাহাজুল ইসলাম মিঠু জানান, খুব সতর্কতার সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের ট্রাকগুলোর চালক ও চালকের সহযোগীকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। এছাড়াও ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে ১৪ দিন ট্রাকগুলো আটক থাকে। এতে করে চালক ও চালকের সহযোগীদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন হয়ে যায়। এখন করোনা সংক্রামণরোধে পাট বীজ আনলোড কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের করোনা সংক্রমণের সকল ঝুঁকি মুক্তরাখতে নিরাপদ ব্যবস্থা নিয়ে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমদানি করা পাটবীজের ট্রাকগুলো খালাস করা হবে। সেই সঙ্গে করোনাসংক্রামণ রোধের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব পাট বীজ দ্রুত সারাদেশে চাহিদামত সরবরাহ করা হবে। যেন পাটবীজের কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে কেউ বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে। সেই দিকে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে বাজারে যাতে কোনভাবে কৃষকের কাছে নিম্নমানের পাট বীজ পৌঁছতে না পারে সেদিকে সরকারকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। বুড়িমারী স্থলবন্দর কাস্টমস সহকারী কমিশনার (এসি) সোমেন কুমার চাকমা জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক আদেশ পেয়ে জরুরী বৈঠক করে শনিবার বুড়িমারী স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে আটকে থাকা পাটবীজ বোঝাই ৬২টি ট্রাক আনা হয়েছে।
×