ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে একাত্মতা ঘোষণা

জিডিপির ১০ শতাংশ সমান বিশেষ তহবিল গঠন দাবি টিআইবির

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২৯ মার্চ ২০২০

জিডিপির ১০ শতাংশ সমান বিশেষ তহবিল গঠন দাবি টিআইবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমান বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এছাড়া অতি দ্রুতই সংশ্লিষ্ট দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা সম্বলিত জাতীয় কৌশল চূড়ান্ত করে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতায় তা বাস্তবায়নযোগ্য করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্মিলিতভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার যে ডাক দিয়েছেন তার প্রতি একাত্মতা জানিয়েছে টিআইবি। শনিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা বা কোভিড-১৯’র ঝুঁকি ও এর বহুমুখী প্রভাব কোন তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য সমস্যা নয় বরং এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় এখনই স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাসহ একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন অপরিহার্য। একইসঙ্গে অভূতপূর্ব এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সকল প্রকার আর্থিক লেনদেনসহ প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে দেশবাসীকে পাঠিয়ে নিতান্তই অপ্রতুল ও বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সময় নেই। এখনই সংশ্লিষ্ট দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা সম্বলিত জাতীয় কৌশল চূড়ান্ত করতে হবে এবং একইসঙ্গে তার বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থের জোগানের পাশাপাশি বহুমুখী উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করা ও চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও তাদের অমূল্য অবদানের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে। রফতানি সংশ্লিষ্ট খাতের শ্রমিক ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে ইফতেখার বলেন, কিভাবে এর বাস্তবায়ন হবে, বরাদ্দকৃত অর্থ কোন প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের হাতে যাবে এবং এক্ষেত্রে কিভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এখনই নির্ধারণ করতে হবে। এই সহায়তার আওতা দেশের হতদরিদ্রদের জন্য সমভাবে সম্প্রসারিত করতে হবে। একইভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন স্বল্প বেতনের কর্মজীবী মানুষ, দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক, রিক্সাচালক, গৃহকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন বা হবেন তাদেরও এর আওতায় আনতে হবে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সঙ্কট চলাকালীন সময়ে খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ লাইন প্রাধান্যের সঙ্গে সচল রাখতে হবে, তা না হলে কোভিড-১৯’র পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনই মানুষের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কারণ হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নিয়োজিত পুলিশের একাংশের বিভ্রান্ত ও অশোভন বলপ্রয়োগ সঙ্কট ঘনীভূত করছে, যা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্যোগে সরকার ও সরকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের পাশাপাশি ক্ষমতা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ক্ষমতার উৎসও জনগণ। সীমালঙ্ঘন করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা আত্মঘাতী হয়, সরকারকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে জীবন-জীবিকার অধিকারের পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা এবং তথ্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের সকল সম্ভাবনা প্রতিহত করা সরকারের দায়িত্ব। অর্থনীতির চাকা পুনরায় দ্রুত সচল করার জন্য জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশ সমপরিমাণের বিশেষ তহবিল গঠন করার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। প্রয়োজনে মেগা-প্রজেক্টগুলোর অর্থায়ন আনুপাতিক হারে কমিয়ে এনে এই খাতে অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বরাদ্দের পাশাপাশি দেশের ধনিক শ্রেণীকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। জনগণের করের টাকায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের একাংশ বিভিন্ন সময়ে বহুমুখী সুবিধা আদায় করে সম্পদের বিকাশ করেছেন। আজ এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা বিশ^াস করতে চাই তারা জনস্বার্থে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে তহবিল প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তার পুরোটাই জোগানোর দায়িত্ব কী এদেশের মহা-ধনীজন অনায়াসে নিতে পারেন না? বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে লিপ্ত বিদেশী এবং বহুজাতিক কোম্পানি, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতায় আগ্রহী, অংশীদার এবং অনেকে লাভবান, তাদেরও নিজেদের স্বার্থে এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। ড. জামান বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ বিশাল সঙ্কট মোকাবেলায় সফল হতে হলে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার কোন বিকল্প নেই।
×