ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মশা নিধনের উদ্যোগ নেই

করোনার ডামাডোলে ভয়াবহরূপে আসতে পারে ডেঙ্গু

প্রকাশিত: ১১:০৬, ২২ মার্চ ২০২০

করোনার ডামাডোলে ভয়াবহরূপে আসতে পারে ডেঙ্গু

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এডিস মশা নিধনে ত্বরিত পদক্ষেপ না নিলে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু গত বছরের তুলনায় আরও ভয়াবহ রূপ নিয়ে হাজির হতে পারে বলে ক্রমেই আলামত পরিষ্কার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ছয় গুণ। গত বছর তিন মাসে যেখানে রোগী ছিল ৪৮ জন, সেখানে শনিবার পর্যন্ত রোগী হয়েছে ২৬৫ জন। মশা নিধনের কোন উদ্যোগ না থাকায় পরিবেশে এডিসের ঘনত্বও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। করোনার সঙ্গে এডিস মশা নিধনে তরিত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ক্রমেই আরও খারাপ হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা করোনা মোকাবেলায় এডিস মশা নিধনের সকল কর্মসূচী সচল রাখার সুপারিশ করে বলেছেন, করোনা নামের একটি শত্রুর মোকাবেলা করতে গিয়ে যেন ঘরের আরেকটি দরজা আমরা খুলে না রাখি। তাহলে সেই দরজা দিয়ে দ্বিতীয় শত্রু প্রবেশ করবেই। দুটি দরজাতেই পাহারা বসাতে হবে। অন্যথায় বিপদ মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ইতোমধ্যেই মশা নিধনে কোন পদক্ষেপ না থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডোবা, খালে মশার উপদ্রব বেড়েছে। গত কদিনে মশার উপদ্রব বেড়েছে বাসা বাড়িতে। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এডিসের মাত্রা বাড়বে দ্রুত হারে, যা চিন্তার বিষয়। গত বছর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়ে হাজির হয়েছিল ডেঙ্গু। সরকারী হিসেবেই গত বছর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। মারা গেছেন ২৬৬ জন। যদিও বেসরকারী হিসেবে গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। গত বছর মশা নিধনের কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতির জন্য সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। গত বছর মার্চের শেষদিকে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। জেলায় জেলায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী ভর্তি হয়; উপায়ান্তর না পেয়ে মেঝে, বারান্দায় বা হাসপাতালের ফাঁকা স্থানগুলোয়ও ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য শয্যা পাতা হয়। সে সময় ডেঙ্গুর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব ছাড়াও ছিল আক্রান্তদের ওষুধের সঙ্কট। এমন অবস্থায় চলতি বছর এডিস মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপের পরামর্শ ছিল বিশেষজ্ঞদের। তবে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেই। এর মধ্যেই ভয়াবহ রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে করোনাভাইরাস। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দফতর এখন ব্যস্ত করোনা মোকাবেলা করা নিয়ে। এই সুযোগে অনেকটা নির্বিঘেœই রাজধানীর ডোবা, খালগুলোই মশার উপদ্রব বাড়ছে। কদিন ধরে বাসাবাড়িতেও মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যেই মিরপুরের মানিকদীতে খালে রীতিমতো মশার চাষের অভিযোগ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে। সেখানে কচুরিপানার বিস্তার ঘটেছে। যেখানে মশার বাধাহীন বংশবিস্তার ঘটেছে। প্রায় ১০ ফুট পানি জমেছে। পশ্চিম মানিকদী জলাবদ্ধতার কবলে উল্লেখ করে বাসিন্দা প্রকৌশলী ইদ্রিস সিরাজ জনকণ্ঠকে হতাশা প্রকাশ করে বলছিলেন, এক কালের বোরো খেত হয়েছে এখন কালাপানি। দুর্গন্ধ আর মশককুলের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অথচ জায়গাটির ৭০০/৮০০ ফুটের দু’দিকেই রয়েছে ৫’/৬’ ব্যাসের নবনির্মিত বৃহদাকার দুটি ড্রেন ব্যবস্থা। এতদিন পানি যেত যে পথে সেটা ব্যক্তিগত জায়গা বলে বন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষতি নেই। পাশেই এত বৃহদাকার লাইন থেকে লাভ হলো কি! জনগণের টাকায় গড়া ড্রেনেজ কোন কাজে লাগছে না। বাড়িঘরে নোংরা পানি উঠে পড়েছে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, জন প্রতিনিধি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, মাননীয় এমপি মহোদয়ের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিন্তু ডেঙ্গু পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা কি? এমন প্রশ্নে সরকারী হিসাবই বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি গত বছরের তুলনাতেও ভয়াবহ। এর মধ্যে মশা বাড়লেও এবার এখন পর্যন্ত নেই মশা নিধনে সিটি কর্পোরেশনের কোন উদ্যোগ। এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিশ^ব্যাপী ছোবল মোকাবেলায় বাংলাদেশেও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দফতরের মনোযোগ একটি জায়গাতেই। মশা নিধনে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেই সিটি কর্পোরেশনসহ কোন পক্ষেরই। ফলে নির্বিঘেœ ছড়াচ্ছে এডিসসহ অন্যান্য রোগ বহনকারী মশা, পাল্লা দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া হিসাবেই বলছে, চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে সর্বশেষ শনিবার পর্যন্ত দেশে হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৬৬ জন। যেখানে গত বছর এই সময়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৮ জন। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।
×