ফিরোজ মান্না ॥ আগামী তিন বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের দুই লাখ গাড়িচালক তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইআইপি) আওতায় বিএমইটি দেশের ৬১ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (টিটিসি) ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দুই লাখ গাড়িচালক চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতে পারবেন। চলতি বছর ৫২ হাজার চালক তৈরি করা হবে। গত মাসে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদেশ চাকরি নিয়ে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে বিএমইটি। দেশের ৬১ জেলায় একযোগে কর্মী নিবন্ধন কাজ চলছে।
বিএমইটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার জন্য সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। অদক্ষ কর্মী পাঠানোর চেয়ে দক্ষ কর্মী পাঠানো হলে বিদেশে চাকরির নিশ্চয়তা বেশি থাকে। দেশে ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে ৪৩ ধরনের কাজের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ড্রাইভিং ট্রেনিংয়ের বিষয়ে এবারই প্রথম। কারণ বিদেশে গাড়িচালকদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বছর যারা ড্রাইভিং শিখে বের হবেন তার একটি বড় অংশ বিদেশে কর্মসংস্থান হবে মনে করেন স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের কর্মকর্তারা।
বিএমইটি ইতোমধ্যে প্রতিটি টিসিসিতে ট্রেনিং কার দিয়েছে। যারা প্রশিক্ষণ নেবেন তাদের দক্ষ চালক হিসেবে তৈরির পাশাপাশি গাড়িগুলো যাতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সচল থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিএমইটির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ চালক হিসেবে যাতে বিদেশে গিয়ে তারা ভাল বেতনে চাকরি পেতে পারবেন। ফলে তারা দেশে রেমিটেন্স বেশি পাঠাতে পারেন সেদিকে নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ড্রাইভারের বেশি চাহিদা। মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলো ‘লেফট হ্যান্ডেড ড্রাইভিং’। বিষয়টি মাথায় রেখে ড্রাইভিং শেখাতে হবে। তাই যারা প্রশিক্ষণ নেবে তাদের ওই দেশের জন্য উপযোগী (লেফট হ্যান্ডেড ড্রাইভিং) হিসেবেই গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশে ‘রাইট হ্যান্ডেড ড্রাইভিং’ এখানকার ট্রেনিং নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে যাওয়ার পর যেন তাদের ফের প্রশিক্ষণের জন্য আরও ছয় মাস নষ্ট না হয়। এ বিষয়টি খেয়াল রেখেই লেফট হ্যান্ডেড ড্রাইভিং শেখানো হবে। টিটিসিগুলোতে বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতা ও চাহিদার আলোকে নতুন নতুন ট্রেড যুক্ত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীতে দক্ষ কর্মীর বিকল্প নেই। অদক্ষ কর্মী কয়েক লাখ পাঠিয়ে যে রেমিটেন্স আসবে দক্ষ কর্মী ৫০ হাজার পাঠিয়ে সেই রেমিটেন্স আসবে। তাই মন্ত্রণালয় দক্ষ কর্মী তৈরিতে টিটিসিগুলোতে এই গাড়ি সরবরাহ করেছে। টিটিসির অধ্যক্ষদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আপনারা দক্ষ চালক তৈরিতে সচেষ্ট থাকবেন। মান নিয়ে যেন কোন কথা না হয়। শুধু চালক নয়, অন্যান্য ট্রেড বা কাজের জন্যও দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ইংরেজি ও আরবি ভাষা প্রশিক্ষণকেও গুরত্ব দিতে হবে। কারণ ভাষাটা এখন গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারীভাবে বিদেশ যেতে আগ্রহী কর্মীদের দেশব্যাপী নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন হবে না বলে জানানো হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পক্ষে (বিএমইটি)। সারাদেশ থেকে নিবন্ধনকৃতদের তথ্য কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংকে জমা হবে। দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক দক্ষ, স্বল্প দক্ষ, অদক্ষ ও পেশাজীবী নারী-পুরুষ অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারছেন।
ঢাকা, বাংলাদেশ রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১
