ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেইলি রোডের কোয়ার্টার থেকে উপসচিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৬ মার্চ ২০২০

 বেইলি রোডের কোয়ার্টার থেকে উপসচিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার বেইলি রোডের অফিসার্স কোয়ার্টার থেকে এক উপসচিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। দরজা ভেঙ্গে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য জানতে লাশের সুরতহাল করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম শেষে লাশ বৃহস্পতিবারই ঢাকা মেডিক্যালের মর্গ থেকে নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ভোলার গ্রামের বাড়িতে তার দাফন করার কথা রয়েছে। বুধবার দিবাগত গভীররাতে রাজধানী ঢাকার রমনা থানাধীন বেইলি রোডের সরকারী কোয়ার্টার বেইলি স্কয়ারের ১/৫ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে মোঃ আব্দুল কাদের চৌধুরী (৫৮) নামের ওই উপসচিবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। রমনা মডেল থানার ওসি মোংঃ মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, বাড়িটির আশপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কয়েকদিন ধরেই দুর্গন্ধ পাচ্ছিলেন। তারা বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বাভাবিকই মনে করছিলেন। কিন্তু দিন যত যেতে থাকে, দুর্গন্ধের মাত্রাও তত বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আশপাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা আর দুর্গন্ধে টিকতে পারছিলেন না। তারা ব্যক্তিগতভাবে বহুবার ফ্ল্যাটের কলিং বেল দিয়েছেন। দরজায় জোরে আঘাত করে শব্দ করেছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই ভেতর থেকে কোন সাঁড়াশব্দ আসছিল না। শেষ পর্যন্ত তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ফ্ল্যাটের ভেতরে যায়। সেখানে এক ব্যক্তির অর্ধগলিত লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশের আশপাশে ওষুধপত্র ছড়ানো ছিটানো ছিল। ফ্ল্যাটে এতটাই দুর্গন্ধ ছড়িয়েছিল যে, সেখানে দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ৫ থেকে ৬ দিন আগে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তবে কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। তার ফ্ল্যাটের সামনের নেইম প্লেটে ওই ব্যক্তির নাম মোঃ আব্দুল কাদের বলে লেখা রয়েছে। তিনি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। সহকারী সচিব হিসেবে তিনি ১৯৮৫ সালে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন। উপসচিবের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে তার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হবে। প্রচন্ড দুর্গন্ধের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তল্লাশি চালানো যায়নি। ফ্ল্যাটটি সিলগালা করে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনমতো সেখানে তল্লাশি চালিয়ে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য আলামত সংগ্রহ করা হবে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে কোন তল্লাশি চালানো হয়নি। এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে রমনা মডেল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জনকণ্ঠকে জানান, ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মোঃ সাজ্জাদুর রহমান। তিনি আরও জানান, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা গেলে, সে মোতাবেক পরবর্তীতে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার লাশের পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে। পোস্টমর্টেমকারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ সোহেল মাহমুদ জনকণ্ঠকে জানান, উপসচিবের লাশের পোস্টমর্টেম করা হয়েছে। লাশটি প্রায় পুরোপুরিই গলে গিয়েছিল। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে নিহতের দেহ থেকে ভিসেরার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে পোস্টমর্টেমকালে তার হার্টে আর্টারি বা রগগুলোতে অতিরিক্ত চর্বি জমে থাকতে দেখা গেছে। হার্ট এ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার এস এম শামীম জানান, এক সপ্তাহ ধরে ওই উপসচিব অফিসে যাচ্ছিলেন না। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আবার প্রতিবেশীরাও মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার কারণ জানতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। উদ্ধারকালে লাশটি বিছানার ওপর ছিল। তবে তার পরনে শার্ট-প্যান্ট ও জুতো ছিল। বিছানায় বিভিন্ন ধরনের বেশ কিছু ওষুধ পড়েছিল। হয়ত তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধ সেবন করে থাকতে পারেন। আবার প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্যও সব ওষুধ বিছানায় ফেলে খোঁজাখুঁজি করতে পারেন। বা প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করেছেন। পরবর্তীতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার পর হয়ত ওষুধগুলো আর গুছিয়ে রাখতে পারেননি। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গত সপ্তাহের বুধবার উপসচিব আব্দুল কাদের শেষ অফিস করেন। এরপর তিনি আর অফিসে যাননি। ব্যক্তিজীবনে আব্দুল কাদের অবিবাহিত ছিলেন। তিনি বাসায় একাই থাকতেন।
×