ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চক্রের ৩ সদস্য গ্রেফতার

ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী ওরা, খুন করতেও বুক কাঁপে না

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী ওরা, খুন করতেও বুক কাঁপে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওরা ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। ছিনতাইয়ের জন্য কাউকে খুন করতেও ওদের বুক কাঁপে না। ওরা অস্ত্র চালনায় সিদ্ধহস্ত। ওদের টার্গেট মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজিঅটোরিক্সার মতো যানবাহনে ছিনতাই করা। ছিনতাইয়ের জন্য কখনও যাত্রীবেশে, কখনও বিয়ের জন্য গাড়ি ভাড়া করত ওরা। সর্বশেষ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আশুলিয়ার কাঠগড়া পালোয়ান পাড়ার মোল্লা বাড়ির বাঁশঝাড় এলাকায় মোঃ শামীম বেপারী বাবু (২৮) নামে এক পাঠাও চালককে খুন করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় ওরা। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এই ছিনতাইকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মামুনুর রশিদ (২২), মাহবুবুর রহমান (২০) এবং মোমিন মিয়া (২০)। র‌্যাব-১ এর একটি দল রবিবার রাত ভর আশুলিয়া থানাধীন জামগড়ার রূপায়ন মাঠ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভিকটিম পাঠাও চালক শামীমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকারীর রক্তমাখা প্যান্ট জব্দ করা হয়। সোমবার দুপুরে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল সাংবাদিকদের জানান, তারা একটি সংঘবদ্ধ পেশাদার ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। তারা অন্য ছিনতাইকারীর মতো টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই করে না। তারা শুধু মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিক্সার মতো ছোট যানবাহন ছিনতাই করে। ছিনতাই করাকালে ওরা মানুষ খুন করতে দ্বিধাবোধ করে না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মামুনুর রশিদ জানিয়েছে, সে পেশায় একজন গার্মেন্টকর্মী। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। ছিনতাইকারীর এ চক্রটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। ঘটনার আগের দিন রাতে সে ভিকটিমের মোটরসাইকেল দিয়ে গাবতলী থেকে আশুলিয়া যায়। মোটরসাইকেলে ওঠার পর পরই চালক শামীমকে টার্গেট করা হয়। তখন দুপুর ২টা। ছিনতাইকারী হোতা মামুনুর রশিদ পাঠাওতে উঠে গাবতলী থেকে আশুলিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধূমপানের কথা বলে পাশের বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা মামুনুরের সহযোগী মাহবুব ও মোমিন ভিকটিমের ওপর আক্রমণ করে। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, গ্রেফতারকৃত মাহবুবুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, জামগড়া এলাকায় তার একটি চায়ের দোকান আছে। তার চায়ের দোকানে বসেই তারা সব ধরনের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন ভিকটিমকে সেই প্রথম ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এরপর তারা তাকে গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। আর গ্রেফতারকৃত মোমিন মিয়া জানায়, সেও পেশায় একজন গার্মেন্টকর্মী। প্রায় ১১ বছর ধরে আশুলিয়া এলাকায় এ চক্রের হয়ে ছিনতাই করা গাড়ি বিক্রয়ের কাজ করে সে। লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, চক্রটি পরিকল্পিতভাবে ছিনতাই করে আসছিল। শামীমকে হত্যার পর ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙ্গে ফেলে। নিজেদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখে। জ্যাকেটে রক্ত লেগে যাওয়ায় ঘটনাস্থলে খুলে ফেলে দেয় এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটিও ঘটনাস্থলে ফেলে দেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ও ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। প্রথমে তারা টার্গেট করে নির্ধারিত গন্তব্য ঠিক করে যানবাহনসহ চালককে নিয়ে যায়। যেখানে আগে থেকেই তাদের অন্য সহযোগীরা ওঁৎ পেতে থাকে। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছা মাত্র চালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে যানবাহন নিয়ে নিরাপদে সটকে পড়ে। নিহত শামীমের পরিবার জানায়, নিহত শামীমের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা থানাধীন চৌমুধিয়া গ্রামে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে মেরাদিয়া মধ্যপাড়ায় স্ত্রীসহ বসবাস করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে শামীম দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি চালাতেন। পরে শামীম নিজে একটি মোটরসাইকেল কিনে পাঠাও এ্যাপসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের কাজ শুরু করেন। তারা জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর আড়াইটার দিকে রামপুরা ফরাজি হাসপাতালের সামনে থেকে একজন যাত্রী নিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় যাওয়ার কথা বলে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হন। গভীর রাতেও ভিকটিম বাসায় ফিরে না আসায় তার পরিবারের সদস্যরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে টেলিভিশন সংবাদের মাধ্যমে হত্যার বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। পরে নিহত শামীমের পরিবারের পক্ষে মোঃ শাহিন বেপারী (৫৮) বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, মামলা নং ৫২।
×