ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দৃশ্যমান হলো ৩৬শ’ মিটার

পদ্মা সেতুতে বসল আরও একটি স্প্যান

প্রকাশিত: ১১:১৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পদ্মা সেতুতে বসল আরও একটি স্প্যান

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, জাজিরা থেকে ফিরে ॥ ধীরে বইছে পদ্মা। কিন্তু নদী আর তীরের জনপদে ভীষণ ব্যস্ততা। বিদায়ী মাঘের দুপুর কড়া রোদে ঝলমল করছে চারদিক। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর ৩০ ও ৩১ নম্বর খুঁটির ওপর বসে যায় ‘৫-এফ’ নম্বরের ২৪তম স্প্যান। এখন দৃশ্যমান হলো ৩৬০০ মিটার। তখন ঘড়িতে ঠিক দুপুর একটা ২০ মিনিট। বাঙালীর বীরত্বগাথা এই সেতু এগিয়ে গেল আরেক ধাপ। ২৩তম স্প্যান বসানোর নয়দিনের মাথায় ২৪তম স্প্যানটি বসানো হলো। যখন ২৪তম স্প্যান বসানো হচ্ছিল তখন পাশেই জমিতে কাজ করছিলেন মনির হোসেন। তিনি বললেন, এই অজপাড়াগাঁয়ের ওপর এত ভারি ভারি যন্ত্রপাতি, কি সব এলাহী কা-। মুহূর্তের মধ্যে ব্রিজের বিশাল এই অংশটা বসাইয়া দিল। এমন দৃশ্য আমগো কাছে এহন পুরানা। এর পরও বার বারই দেখতে ইচ্ছা করে। মানুষ কি না পারে। মধ্য বয়সী মনির বলেন, ‘শেখের কন্যা আমাগো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ^কে চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া দিলÑ বাঙালীরা কিনা পারে। আমরাও প্রথম বিশ^াস করতে পারি নাই, এমন বড় ব্রিজ, এত তাড়াতাড়িই হইয়া যাইবো। অহন দেহি সময়ের সাথে পাল্লা দিয়া সেতু হইতাছে। আমাগো ভাগ্যও বদলাইতাছে।’ এর আগে মঙ্গলবার সকাল নয়টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটিতে অস্থায়ীভাবে বসানো স্প্যানটি নিয়ে রওনা হয় ভাসমান ক্রেন। বিশাল এই জাহাজ প্রায় তিন হাজার টন ওজনের স্প্যানটি পাঁজা করে বেলা পৌনে ১১টার দিকে নির্ধারিত পিলারের সামনে এসে পৌঁছায়। সেতু বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পদ্মা সেতু আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুর এখন স্প্যান বসানো বাকি থাকল ১৭টি। তিনি জানান, ৪২ পিয়ারের (খুঁটি) মধ্যে ৩৭ পিয়ারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি পাঁচটি পিলারের কাজও চলছে পুরোদমে। শীঘ্রই পিয়ার-২৬ এর সাতটি পাইলে রিবার ইনস্টল ও কংক্রিটিং করা হবে। পিয়ার-৮, ১০ ও ১১ এর কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে সব খুঁটির কাজই সম্পন্ন হয়ে যাবে। ৪১টির মধ্যে বাকি ১৭ স্প্যান আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বসানোর কথা রয়েছে। চীন থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ স্প্যান মাওয়ায় এসে পৌঁছেছে। বাকি চারটি শীঘ্রই চলে আসবে। একই সঙ্গে চলছে সেতুর রোডওয়ে ও রেলওয়ে স্ল্যাব বসানো। ইতোমধ্যে সেতুতে ৫৭৩ রেলওয়ে স্ল্যাব এবং ২৫০ রোডওয়ে স্লাব বসানো হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণ করছে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন। নদী শাসনের কাজে নিয়োগ করা হয়েছে চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশনকে। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড। এই সেতুর নির্মাণ কাজ তদারক করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট ও কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটস। এই সেতু নির্মাণের ফলে দেশের বাণিজ্য, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সেতু তৈরি হলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে এবং দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রায় ছয় কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। শুধু তাই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। জিডিপি দেড় থেকে দুই শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
×