ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার নার্সের উপস্থিতি বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

   সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার নার্সের উপস্থিতি বেড়েছে

নিখিল মানখিন ॥ স্বাস্থ্য সেক্টরের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে কর্মস্থলে হাজিরা পর্যবেক্ষণে এ চিত্র ধরা পড়েছে। দেশের আট বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী মোট ৫০৮টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে হাজিরা বর্তমানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। হাজিরা পদ্ধতি বায়োমেট্রিক হওয়ার কারণে যারা কর্মস্থলে আসেন না তাদের খুব সহজে চিহ্নিত করা যায়। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্য দিবসের চিত্রে দেখা গেছে, উপস্থিতির হার বেড়ে গড়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। গতবছর এই হার ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছিল। উপস্থিতির হার ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বোচ্চ এবং ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে কম। কর্মস্থলে উপস্থিতির হার বৃদ্ধির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, স্বাস্থ্য সেক্টরের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে নিম্ন উপস্থিতির হার নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে শক্তিশালী মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতবছরের প্রথম থেকেই উপস্থিতির হার প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়তে শুরু করে। অপ্রয়োজনে অনুপস্থিত থাকা চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকায় উপস্থিতির হার বাড়তে থাকে। আর তা চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসে আরও উন্নতি ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে ৯০ শতাংশে নিয়ে যেতে সময় লাগবে না বলে জানান মহাপরিচালক। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ২৯ জানুয়ারি আটটি বিভাগে গড়ে উপস্থিতির হার ছিল ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ উপস্থিতির হার ছিল বরিশাল বিভাগে ৭৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮০ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৬৬ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৭২ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৬ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৮০ শতাংশ, রংপুর ৮১ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ৭৭ শতাংশ। গত ২৮ জানুয়ারি আটটি বিভাগে গড়ে উপস্থিতির হার ছিল ৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ উপস্থিতির হার ছিল বরিশাল বিভাগে ৯০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৮ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৭৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৮৬ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯৩ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৯১ শতাংশ, রংপুর ৯০ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ৮৪ শতাংশ। গত ২৭ জানুয়ারি আটটি বিভাগে গড়ে উপস্থিতির হার ছিল ৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ উপস্থিতির হার ছিল বরিশাল বিভাগে ৮৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৬ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৭৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ৮৬ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯১ শতাংশ, রাজশাহী বিভাগে ৯১ শতাংশ, রংপুর ৯০ শতাংশ ও সিলেট বিভাগে ৮৬ শতাংশ। এভাবে আটটি বিভাগের উপস্থিতির হার ছিল ২৬ জানুয়ারি ৮৫ শতাংশ, ২৩ জানুয়ারি ৮৩ শতাংশ, ২২ জানুয়ারি ৮৪ শতাংশ এবং ২১ জানুয়ারি উপস্থিতির হার ছিল ৮৪ শতাংশ বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এদিকে অভিযোগ উঠেছিল, বৈদ্যুতিক হাজিরা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছে না স্বাস্থ্য সেক্টরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। কর্মস্থলে স্বাস্থ্য সেক্টরের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে এই পদ্ধতি চালু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্বাস্থ্য সেক্টরের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতি চালু করা হয়নি। এই মেশিন স্থাপন করা হয়েছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান থেকেও নিয়মিত উপস্থিতি তথ্য পাঠানো হচ্ছিল না। ফলে অনেক চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী ও কর্মকর্তার কর্মস্থলে উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে কর্মস্থলে স্বাস্থ্য সেক্টরের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময়ে গৃহীত উদ্যোগসমূহ সফল না হওয়ায় বৈদ্যুতিক হাজিরা পদ্ধতি চালু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জনদের আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্বাস্থ্য সেক্টরের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিতকল্পে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৩ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক স্বয়ং দেশের প্রায় ৬ হাজার চিকিৎসককে কর্মস্থলে না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকদের উপস্থিতি সরেজমিনে দেখতে ১০ সদস্যের আকস্মিক পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সদস্য করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর কয়েকটি অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে কমিটির অভিযানে নেমে আসে স্থবিরতা। অনেক সরকারী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও কর্মস্থলে সঠিক সময়ে উপস্থিত না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে, কার্যদিবসে অনেক সরকারী মেডিক্যাল শিক্ষক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কাজ করে থাকেন। দিনে নামমাত্র সময় দিয়ে থাকেন তারা। দেশের বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর সাইনবোর্ডে ছেয়ে গেছে সরকারী চিকিৎসকদের নাম। নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার পাশাপাশি সরকার হাসপাতালের রোগী নিজেদের চুক্তিবদ্ধ চিকিৎসালয়ে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে অনেক সরকারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। অনেক চিকিৎসক তদ্বির চালিয়ে অবস্থান করছেন নিজেদের সুবিধাজনক এলাকায়। জেলা, এমনকি বিভাগীয় কার্যালয়ে তাদের অনেকে দায়িত্ব পালন করছেন। যোগদান করার পরই কর্মস্থলে অনেকের দেখা নেই। তাদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। অথচ প্রত্যেক চিকিৎসককে প্রাথমিক পর্যায়ে গ্রাম পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×