ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নরাজ্যে বুবলি

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  স্বপ্নরাজ্যে বুবলি

বুবলি খুবই কল্পনাপ্রবণ। ডুবে থাকে কল্পনার রাজ্যে। মাঝে মাঝে নাওয়া-খাওয়া ভুলে যায়। একবার তো অঙ্ক পরীক্ষার দিন ইংরেজি পড়ে স্কুলে গেল। আর একবার পরীক্ষা দিতেই ভুলে গেল। প্রমোশনের সময় লিস্টে মেয়ের নাম না দেখে স্কুল অথরিটিকে চ্যালেঞ্জ করে বসল মা। তখনই জানা গেল বুবলি পরীক্ষাই দেয়নি। একদিন বুবলি একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখল। দেখল বাবার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছে। যেতে যেতে একটা গভীর অরণ্যে ঢুকে পড়েছে। এতো গভীর সে অরণ্য যে পথ খুঁজেই পাওয়া যায় না। অথচ সেই গভীর অরণ্য ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অঢেল চাঁদের আলো। বুবলির ক্ষুধা পেয়েছে। হঠাৎ দূরে এক চিলতে আলো দেখা গেল। বাবা বললেন- : পা চালিয়ে চলো। ওটা নিশ্চয়ই কারও বাড়ি। ওখানে নিশ্চয়ই খাবার পাওয়া যাবে। : খাবার থাকলেই ওরা দেবে কেন? আমাদের চেনে না! : দেবে দেবে। জঙ্গলের মানুষ সভ্য মানুষের মতো না। অতিথির জন্য ওদের দরদ অনেক। হাঁটতে হাঁটতে আলোর কাছে এসে পড়ল বুবলি আর বাবা। সত্যিই ওটা একটা ঘর। বাবা ডাকলেন, : কেউ আছেন? শুনছেন? কেউ সাড়া দিল না। বাবা বললেন- : কেউ তো নিশ্চয়ই আছেন। আমি পুরুষ। হুট করে ঘরে ঢোকা ঠিক হবে না। হয়ত এ বাড়িতে শুধু মেয়েরাই আছেন। বুবলি ভেতরে ঢুকে দেখ। বুবলি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে কাউকে পেল না। হঠাৎ নড়ে উঠল ঘর। কি আশ্চর্য ঘরটা যেন উপরে উঠছে! বুবলি প্রচ- ভয়ে বাইরের দিকে দৌড় দিল। দরজা খুঁজে পেল না। আপ্রাণ শক্তিতে ডাকল, বাবা, বাবা। সাড়া দিল না। ঘরটা শুধু সাঁ সাঁ করে উড়ে চলেছে। কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারাল বুবলি। জ্ঞান ফেরার পর মনে পড়ল মা বাবার কথা। বাবার সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়ে একটা ঘরে ঢুকেছিল। এখন বুবলি শুয়ে আছে পর্বত ঘেরা সবুজ একটা জায়গায়। এটা পৃথিবীতে না পৃথিবীর বাইরে! বুবলি আকাশে সূর্য তারা বা চাঁদ দেখল না। অথচ চারধারে অঢেল আলোর লুটোপুটি। গাছের পাতা নড়তে দেখল না অথচ কি ফুরান্ত হাওয়া! বুবলি হাঁটতে শুরু করল। ওই তো দূরে একজন পুরুষ, একজন নারী। আরে এরা যে বাঙালী! মহিলাটি বলল, বিক্রমপুর যাবার জন্য লঞ্চে উঠেছিল। তারপর লঞ্চ উড়তে শুরু করল। পুরুষ বলল, সে উঠেছিল একটা রিক্সায়। সেটা গুলিস্তানের মোড় থেকে উড়তে শুরু করল। বুবলি তার অভিজ্ঞতার কথা বলল। কিন্তু যারা তাদের এখানে আনল তারা কোথায়! বুবলি এখন আর কল্পনা করতে পারছে না। যা দেখছে সবই বাস্তব। দু’দিন পরে তার পরীক্ষা। মা নিশ্চয়ই তার জন্য অস্থির হয়ে গেছেন। প্রেসারের রোগী মায়ের হয়ত স্ট্রোক হয়ে গেছে। এতক্ষণে মনে পড়ল সামনের মাসে বাসা বদলাবার কথা। আজ মাসের ত্রিশ তারিখ। মা বাবা যদি বাসা বদলে ফেলে, নতুন বাসায় চলে যায়। বুবলি সে বাসা চিনবে কি করে। বুবলি ফোঁপায় আর হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে, কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙে প্রচ- ক্ষুধা নিয়ে। কে তাকে খাবার দেবে। সেই মানুষ দু’জনকেও হারিয়ে ফেলেছে সে। ইস্ গাছে যদি একটা ডাব নারিকেল বা পেয়ারা কিংবা একছড়া কলাও পাওয়া যেত। খাওয়ার জন্য একফোঁটা পানিও চোখে পড়ে না কোথাও। ক্ষুধার জ্বালায় মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকে বুবলি। মা মাগো আমি ভাত খাব, মাছ খাব। কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে চোখ খুলে অবাক বুবলি! সামনে সাজানো ভাত-মাছ। বুবলি গো গ্রাসে গিলতে থাকে। ভেবে পায় না এ খাবার এলো কোথা থেকে। খাওয়া তো হলো কিন্তু পানি। ফিস ফিস করে বলে, পানি চাই, পানি। এক কুঁজো পানি হাজির হয়ে যায় সামনে। বুবলি পানি খেতেই থাকে। ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে, ফিরে গেছে মায়ের কাছে। মা মুখে তুলে তুলে খাওয়াচ্ছেন আর বলছেন, ‘কোথায় গিয়েছিলে বুবলি সোনা। আমি তোমার জন্য ভেবে ভেবে অস্থির।’ ‘স্বপ্নরাজ্যে গিয়েছিলাম মা, স্বপ্নযানে চড়ে।’ ‘ওখানে কি তোমার মা আছে?’ ‘নেই, সে জন্যই তো ফিরে এসেছি।’ বুবলির ঘুম ভেঙ্গে যায়। মায়ের জন্য, বাড়ির জন্য প্রবল কান্না পায়। প্রথমে ডুকরে ডুকরে তারপর তারস্বরে কাঁদতে থাকে, ‘আমি মায়ের কাছে যাব।’ মুহূর্তের মধ্যে বুবলি নিচে নামতে থাকে। তারপর দেখতে পায় মা তার মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে পরম মমতায় বলছেন, ‘কি হয়েছে বুবলি সোনা। অমন করছ কেন? স্বপ্ন দেখেছিলে?’ ‘স্বপ্ন না মা, সত্যি। আমি স্বপ্নরাজ্যে গিয়েছিলাম। সে রাজ্যে গিয়ে আমি মারাত্মক একটা ক্ষমতা অর্জন করেছি। যা চাই তাইই পাই। তুমি চাইলে এখনই তোমাকে একসেট সোনার গয়না এনে দিতে পারি। দেব এনে?’ মা হাসেন, ‘তাই নাকি, তোমার এত ক্ষমতা! তা গয়নার দরকার নেই। তবে একটা কিছু চেয়ে দেখাও কেমন ক্ষমতা তোমার। দেখ এমন কিছু চেওনা যাতে আমি ঘাবড়ে যাই।’ বুবলি বুঝতে পারে, অবিশ্বাস করছেন মা। মাকে ঘাবড়েই দিতে হবে। উচিত সাজা দিতে হবে। বুবলি বলল, ‘আমি স্বপ্নরাজ্যে যাবো, স্বপ্নরাজ্যে।’ বুবলির মনে হল খাটটা নড়ে উঠেছে, উপরে উঠতে শুরু করেছে । এবার মা কেঁদে কেঁদে কূল পাবে না। কিন্তু না, কই খাট তো নড়ছে না, উড়ছে না। মা হাসছেন, বাবা হাসছেন। বুবলি শুধু বোকার মতো তাকিয়ে আছে।
×