ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় ২৫১ কোটি

কেন্দ্রীয় কারাগারের সুবিধা রেখে নির্মিত হচ্ছে খুলনা জেলা কারাগার

প্রকাশিত: ০৯:০৭, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

কেন্দ্রীয় কারাগারের সুবিধা রেখে নির্মিত হচ্ছে খুলনা জেলা কারাগার

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনায় নির্মিত হচ্ছে ২ হাজার কয়েদি ও আসামি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক কারাগার। বছর চারেক আগে নতুন এই কারাগার নির্মাণে কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনসহ নানা কারণে নির্দিষ্ট মেয়াদে কাজ সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে এটিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের সুবিধা সম্বলিত করে নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষে ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী নির্মাণাধীন কারাগোরের সামনে ও পেছনের দিকে আরও ৪ একরের অধিক জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। এ জন্য প্রায় ৫৩ কোটি কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদের তীরে কালেক্টরেট ভবনের কোলঘেঁষে নির্মাণ করা হয় ৬০৮ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন খুলনা জেলা কারাগার। শত বছরের অধিক পুরানো জরাজীর্ণ এই কারাগারে ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিনগুণ বন্দী গাদাগাদি করে থাকে। এই দুরবস্থা লাঘবের জন্য ২০০৮ সালে নতুন করে একটি কারাগার নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১১ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়। এরপর স্থান নির্ধারণ, জমি অধিগ্রহণসহ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৫১ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে খুলনার রূপসা বাইপাস সড়কের পাশে ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদের আসানখালী মৌজায় প্রায় ৩০ একর জমির ওপর আধুনিক জেলা কারাগার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু শুরুতে জমি ভরাট, পরে পিডি পরির্তনসহ মূল প্রকল্পের সঙ্গে আরও কিছু সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয়। এজন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, নতুন এই কারাগারটিতে নির্মাণ করা হবে ছোট-বড় ৭৩টি ভবন। ভবনগুলোতে থাকবে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের পৃথক স্থান। মা ও শিশুদের জন্য পৃথক ব্যবস্থাসহ নারীদের ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল ও মোটিভেশন সেন্টার। পুরুষ বন্দীদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকছে। আরও থাকবে বন্দীদের জন্য স্কুল, আধুনিক লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, সেলুন, লন্ড্রি ইত্যাদি। এছাড়া কারাগারে শিশুদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। শিশুসহ মা বন্দীদের জন্যও থাকবে আলাদা ১টি ওয়ার্ড। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দীদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে। বন্দীদের সঙ্গে দেখা করতে আসা দর্শনার্থীদের জন্যও থাকবে আলাদা কক্ষ। খুলনার গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আগে ডিপিপি একভাবে তৈরি করা হয়েছিল। এরপর কাজ করতে করতে নতুন নতুন বিষয় ভাবনায় আসায় মূল প্রকল্পের সঙ্গে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে। যেমন সুয়ারেজের পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি কারাগারে ভেতর নির্মাণ করা হবে একটি এলপি গ্যাস প্লান্ট। এজন্য নতুন করে প্রয়োজন হবে চার একরের অধিক জমি। জমি অধিগ্রহণসহ এসব কাজ সম্পন্ন করতে সময়ের বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে প্রকল্প ব্যয়। খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এস এম শাহিন পারভেজ এ বিষয়ে জানান, গত বছরের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুরুতে বালু ভরাট, প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি। নতুন করে আবার কিছু প্রস্তাবনা এসেছে। প্রস্তাবনায় রয়েছে নির্মাণাধীন কারাগারের সামনের দিকে ৩ দশমিক ৩ একর জমি এবং পেছন দিকে এক একর জমি অধিগ্রহণ করা। প্রস্তাবনায় সামনের জমির কিছু অংশে এলপি গ্যাস প্লান্ট স্থাপন এবং পেছনে একটি পুকুর খনন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এলপিজি প্লান্ট থেকে কারাগারের জ্বালানি এবং পুকুরে কারাগারে ব্যবহৃত পানি নিষ্কাশিত হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে যেভাবে ভবন নির্মিত হচ্ছে তাতে ২ হাজার বন্দী থাকতে পারবে।
×