ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাবতলীতে তাবিথের ওপর হামলার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২২ জানুয়ারি ২০২০

  গাবতলীতে তাবিথের ওপর  হামলার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারকালে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীই ভোটের প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া দলের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সরকারী দল প্রচারে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারের শুরুতেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গাবতলীতে তাবিথ আউয়ালের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারে সন্ত্রাসীদের হামলা পূর্বপরিকল্পিত এবং কাপুরুষোচিত। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় ঠেলাগাড়ি প্রতীকের আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রত্যক্ষ মদদে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা ওয়ার্ড নম্বর ৭-এর বড় বাজারমুখী আনন্দনগর তিনতলা মসজিদের সামনে দফায় দফায় অতর্কিতে হামলা চালিয়ে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং ২ রিপোর্টারসহ ১৫ থেকে ২০ বিএনপি নেতাকর্মীকে আহত করেছে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় উদ্বেগ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ফখরুল বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে শাসকগোষ্ঠীর লালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হিংস্রতা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ঢাকা সিটি নির্বাচনকে একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্যই প্রতিদিন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারে বাধা ও হামলা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকার বিরোধী দল ও মতকে গ্রাহ্য করছে না। মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষের কল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতার দাপটে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি করে গোটা দেশকে নিজেদের সম্পত্তি বানাতে চায় বর্তমান সরকার। এই উদ্দেশ্য সাধনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে গায়ের জোরে ভোট গ্রহণে ইভিএম পদ্ধতি প্রয়োগে অনড় রয়েছে। আর এ কারণেই আজ্ঞাবাহী প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোবাঞ্ছা পূরণে সক্রিয় রয়েছেন। ফখরুল বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে কারাবন্দী রাখা হয়েছে। তবে জনতার উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণ গুঁড়িয়ে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও ভয়ভীতিমুক্ত করতে আমি আবারও নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় গাবতলীর আনন্দনগর তেলের মিল এলাকায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা তার ওপর হামলা চালায় বলে তাবিথ আউয়াল অভিযোগ করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনী প্রচারকালে পেছন থেকে হঠাৎ করে জয় বাংলা স্লোাগান দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। একটি ইট তার শরীরেও এসে পড়ে। এ হামলায় বেশ ক’জন আহত হন বলে তিনি জানান। তবে হামলার পরও গণসংযোগ অব্যাহত রেখে তিনি বলেন, আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি, প্রতিনিয়ত সেটা বজায় রাখব। আমরা কোন ভয়ভীতি বা হামলায় পিছু হটব না। আমরা ইতিবাচকভাবে গণসংযোগ শুরু করেছিলাম। পেছন থেকে কাপুরুষের মতো আমাকে টার্গেট করে ইট মারা হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হলো, হামলাটা পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে হয়েছে। তাবিথ বলেন, আমি আমার প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি আবারও। এরকম কোন হামলা, বিশেষ করে আমার ওপর আঘাত করে আমার মনোবল ভাঙ্গতে পারবেন না। আমাকে পিছু হটাতে পারবেন না। আমরা শান্তি বজায় রেখে প্রচার অব্যাহত রাখব। আমরা ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে নিজেদের বিজয়ী প্রমাণ করব। তিনি বলেন, ভোটাররা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। ইভিএম-এ ভোট নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করছে। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা। তাবিথ বলেন, আমাদের মাইক কেড়ে নেয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভোটাররা ভয়ের মধ্যে থাকবে। সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। ভোটাররা যাতে ভয়-ভীতি ছাড়া নিরপেক্ষভাবে ভোট দিতে পারে, সে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ। ইশরাকের প্রচার মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ডেমরা এলাকায় ৭০ নং ওয়ার্ডের হোসেন মার্কেটের সামনে থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এরপর বাওয়ানি জুটমিল, ডেমরা বাজার, মালা মার্কেট, মীরপাড়া, হাজী নগর, সারুলিয়া বাজার, মেমোরিয়াল স্কুল সড়ক, আমতলা, বক্সনগর, রানীমহল, অক্সফোর্ড স্কুল সড়ক, অরবিতা কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় ইশরাক ধানের শীষ নিয়ে প্রচার চালান। ভোটারদের হাতে হাতে লিফলেট বিতরণ করে দোয়া চান তিনি। দুপুরের দিকে ইশরাক হোসেনের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক পথসভায় বলেন, দুঃশাসন থেকে রক্ষা পেতে হলে ঢাকাবাসীকে শপথ নিতে হবে। ১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির প্রার্থীদের ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, ইশরাক হোসেন সাবেক সফল মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সুযোগ্য সন্তান। ডেমরাবাসী ধানের শীষের সমর্থনে ইশরাক হোসেনের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি করেছেন, এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। এই ধানের শীষ মার্কা জিয়াউর রহমানের মার্কা, খালেদা জিয়ার মার্কা, তারেক রহমানের মার্কা, বিএনপির মার্কা। ধানের শীষে ভোট দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। ইশরাক হোসেন বলেন, ধানের শীষের গণজোয়ার দেখে আমাদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে। তবে কোন বাধাই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। ১ ফেব্রুয়ারি জনগণের রায় নিয়ে আমরা বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, এই সরকারের ওপর যখন জনগণের আস্থা হারিয়ে গেছে, তখন তারা পরিকল্পিতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটি ফরমায়েসি রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ক্ষমতায় টিকে থাকা। ইশরাক বলেন, আজকে ঢাকা শহরসহ গোটা দেশকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস আপনারা এভাবেই মাঠে থাকবেন। আমরা বিজয় ছিনিয়ে আনার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং সেখান থেকেই এই সরকারের পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ। তাবিথের লিখিত অভিযোগ পূর্বনির্ধারিত পথসভা করার সময় অতর্কিত হামলায় নেতাকর্মী-সমর্থকদের আহত হওয়ার লিখিত অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন তিনি। লিখিত অভিযোগে তাবিথ আউয়াল বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে আমি সিটি কর্পোরেশন বিধিমালা ২০১৬ এর বিধান পালন করে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তথা কোটবাড়ি, বাজারপাড়া, হরিরামপুর, গোলারটেক জহুরাবাদ ইত্যাদি এলাকায় পথসভা ও গণসংযোগে যাই। প্রচারকালে আমার সঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় নেতাকর্মী সমর্থক ছিলেন। পথসভায় পূর্বনির্ধারিত ছিল আইনানুগভাবে সংশ্লিষ্ট দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি। কিন্তু গণসংযোগ অনুষ্ঠানে আমার নির্বাচনে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের নেতাকর্মী সমর্থক ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সারওয়ার মাসুম উপস্থিত থেকে অতর্কিতভাবে আমাকে হত্যার উদ্দেশে আমার ওপর এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর জঘন্যভাবে আক্রমণ করে।’ তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও আমিসহ শারীরিক নির্যাতনে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমার কর্মী-সমর্থকরা আহত হন। এ নির্যাতন ও আক্রমণের সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিষ্ক্রিয় থাকে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যদি আইনানুযায়ী আরও সক্রিয় থাকত তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী-সমর্থকদের শারীরিক নির্যাতন নিপীড়ন ও জঘন্য আক্রমণ সিটি করপোরেশনের বিধিমালা ২০১৬ এর বিধি-বিধান চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করি। এদিকে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, আমরা রাত ৮টা ২৫ মিনিটে তার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তাবিথের ওপর হামলা তদন্তের নির্দেশ ইসির ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সচিব মোঃ আলমগীর মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে বিএনপি কমিশনের কাছে তাৎক্ষণিক অভিযোগ করেছে। কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
×