ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

চা শিল্পের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদন রেকর্ড সৃষ্টি

গত বছর ৯৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

গত বছর ৯৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন

সৈয়দ হুমায়েদ শাহীন, নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার ॥ অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছর চায়ের উৎপাদনে বাম্পার ফলন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন অনুকূল আবহাওয়া ও নতুন কিছু উন্নয়নমূলক উদ্যোগের ফলে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে চায়ের উৎপাদন। এতে করে আভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত চা বিদেশে রফতানি করা যাবে। তবে প্রতিটি বাগানে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও চায়ের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চা সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সিলেটের মালনীছড়া চা-বাগানে ১৮৫৪ সালে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা-উৎপাদন শুরু হয়। গত (১৯১৯ সালে) বছরে প্রায় ৯৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে চা-শিল্পের ইতিহাসে ১৬৫ বছরের সর্বোচ্চ উৎপাদন রেকর্ড সৃষ্টি করে। চা-বাগান মালিকদের নতুন কিছু উন্নয়নমূলক উদ্যোগ ও মৌসুমের শুরুতে পরিমিত বৃষ্টি ও অনুকূল আবহাওয়া দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল চা উৎপাদনে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। তবে চায়ের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিম্নমানের চা প্রবেশ করায় চা উৎপাদকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ চা-বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশের চায়ের আভ্যন্তরীণ চাহিদা ৯০ মিলিয়ন কেজি। ২০১৬ সালে ৮৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রেকর্ড করেছিল। পরবর্তী বছর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আবার উৎপাদন কমে আসে। আর ১৯১৯ সালে প্রায় ৯৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে চা-বাগান মালিকদের নতুন কিছু উন্নয়নমূলক উদ্যোগ ও মৌসুমের শুরুতে পরিমিত বৃষ্টি ও অনুকূল আবহাওয়া দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল চা উৎপাদনে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। তবে চায়ের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিম্নমানের চা প্রবেশ করায় চা উৎপাদকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। বিভিন্ন চা-বাগানের মালিক-ব্যবস্থাপক, ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড ও গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান মৌসুমের শুরু থেকে চা-চাষের উপযোগী বৃষ্টিপাতসহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বাংলাদেশ চা-বোর্ড বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকা- নেয়ায় গত ৩ বছরের চেয়ে এবার দেশে চা উৎপাদন বেড়েছে। তারা জানান, এ বছর শুধু উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, এ বছর চায়ের গুণগতমানও ভাল হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ড (শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার) প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট (পিডিইউ), পরিচালক ড. কে এম রফিকুল হক জানান চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে এগিয়ে। জুলাই ১৯১৯ সালের আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে চা উৎপাদন বেড়েছে ২৮.৫৪ শতাংশ। এই বৃদ্ধিও হার প্রতিবেশী ভারতে ৫.৭৬ শতাংশ এবং আরেক বড় চা উৎপাদনকারী দেশ শ্রীলঙ্কায় মাত্র ১.৯৫ শতাংশ। এ ছাড়া কেনিয়ার মতো চা উৎপাদনকারী দেশে তো ৮.৩৮ শতাংশ কমেছে। এতে বাংলাদেশের সামনে আশার সঞ্চার হয়েছে। তিনি বলেন, উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ চা বিদেশে রফতানি করা যাবে। তিনি আরও বলেন, এবার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী গ্রহণের পাশাপাশি প্রতিটি বাগানের পরিত্যক্ত জমিকে চা-চাষের আওতায় আনা হয়েছে। ক্ষুদ্রায়তনে চা-চাষও বাড়ছে। চা গবেষণা কেন্দ্র চায়ের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনে সঠিক সময়ে সংশ্লিষ্টদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছে। এতে চা উৎপাদনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ চা সংসদ সিলেট অঞ্চল শাখার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, আবহাওয়া অনুকূল না থাকাসহ নানা জটিলতার কারণে আগের দুই বছর ২০১৭-২০১৮ চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি এবং ওই বছরগুলিতে প্রত্যাশানুযায়ী উৎপাদন কম হয়েছিল। ওই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ও চা-বোর্ডের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে ২০১৯ সালের উৎপাদন বেড়েছে। হামিদিয়া চা-বাগান এর জেনারেল ম্যানেজার মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের মৌসুমের শুরু থেকেই চায়ের উপযোগী বৃষ্টিপাত হয়েছে। সূর্যের আলোও পড়েছে প্রয়োজনীয় মাত্রায়। রোগবালাইও ছিল কম। সব মিলিয়ে আবহাওয়া ছিল বেশ অনুকূলে। এর ওপর বাংলাদেশ চা বোর্ডের বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে। বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স এ্যান্ড প্ল্যান্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জহর তরফদার জানান, এখন শ্রীমঙ্গলেই সরাসরি নিলাম হওয়ায় চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে না। আর গুণগত মান ঠিক রেখে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশী চায়ের স্বর্ণযুগ অবশ্যই আসবে। সারাদেশে সরকারী, ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বিদেশী কোম্পানির ছোট বড় মিলিয়ে দেশে ১৬২টি চা-বাগান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ৯২টি চা-বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। চা-বিজ্ঞানীরা মনে করেন অনুকূল আবহাওয়ার পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যা ও চা চাষের উপযোগী জমি প্রতিবছর বৃদ্ধিসহ চায়ের উন্নত জাত সংগ্রহ করে চাষ করলে উৎপাদন আরও বাড়ানো সম্ভব।
×