ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাতের অন্ধকারে খাদ্য গুদামে ব্যবসায়ীদের ধান ॥ কৃষক বঞ্চিত

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ৭ জানুয়ারি ২০২০

রাতের অন্ধকারে খাদ্য গুদামে ব্যবসায়ীদের ধান ॥ কৃষক বঞ্চিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, ৬ জানুয়ারি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারীভাবে ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ শুরু থেকেই রয়েছে। দৌলতপুরের কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সরকারী নির্দেশনা থাকলেও সেসব ধান ক্রয় করা হচ্ছে দৌলতপুরের বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। আর এসব ধান ব্যবসায়ী ও তাদের পোষা বাহিনীর কড়া প্রহরায় ধান ট্রলি বোঝাই হয়ে দিনের বেলায় সরবরাহ না করে রাতের আঁধারে দৌলতপুর খাদ্য গুদামে সরবরাহ করা হচ্ছে। ধান ক্রয়ের প্রকাশ্য এমন অনিয়মের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নির্বিকার ও নিশ্চিুপ ভূমিকা পালন করছেন। এর ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রয় থেকে দৌলতপুরের ধান উৎপাদনকারী কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। জানা গেছে, দৌলতপুর খাদ্য গুদামে কৃষকদের পরিবর্তে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মনোনীত ব্যবসায়ীরা ধান সরবরাহ করছেন। তবে এক্ষেত্রে ওইসব ব্যবসায়ীরা চাতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। ধান ক্রয়ে লটারি ও লটারির বাইরে যেসব কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে সেই সব কৃষকের কাছ থেকে ধান সরবরাহকারী ব্যবসায়ীরা কৃষক কার্ড সরবরাহ করেছেন। কোন কৃষককে টন প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে আবার কোন কোন কৃষককে হুমকি দিয়ে তাদের কার্ড কেড়ে নেয়া হয়েছে। জোর করে বা অর্থ দিয়ে সংগ্রহ করা ওইসব কৃষক কার্ড দিয়ে গুটিকয়েক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করছেন। যা দৌলতপুরের বাইরে এমনকি জেলার বাইরে থেকে ধান ক্রয় করে ট্রলি ভর্তি করে রাতের আঁধারে দৌলতপুর খাদ্য গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। রবিবার রাত সাড়ে ১০টার সময়ও ৮ ট্রলি ভর্তি ধান খাদ্য গুদামে সরবরাহ করতে দেখা গেছে। কাবিল হোসেন, সাইদুর রহমান, আব্দুল জব্বার, খালেকসহ কয়েকজন কৃষক জানান, ধান বিক্রয়ের কৃষক তালিকায় তাদের নাম থাকলেও তারা ধান বিক্রয় করতে পারেননি। তাদের কার্ড স্থানীয় নেতারা ভয়ভীতি দেখিয়ে নিয়ে নিয়েছেন। চলতি মৌসুমে সরকারীভাবে দৌলতপুরে ২ হাজার ৪শ’ ২৪ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যে ২ হাজার ৪শ’ ২৪ কৃষককে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়। উপজেলা পরিষদ কনফারেন্স রুমে লোক দেখানো লটারি করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে লটারির মাধ্যমে ঘোষিত নির্ধারিত কৃষকদের নাম ধান ক্রয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদিও লটারি হওয়ার দুই সপ্তাহ পর ইচ্ছেমতো ব্যক্তিদের নাম আবার ভৌতিক নাম তালিকাভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেদের সুবিধা আদায়ে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ধান ক্রয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত দৌলতপুর খাদ্য গুদামে প্রায় ৭শ’ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে বলে দৌলতপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন। রাতের আঁধারে ধান ক্রয়ের বিষয়ে তিনি জানান, রাতে ট্রলি ভর্তি ধান খাদ্য গুদাম চত্বরে আনা হলেও তা ওজন দেয়া হয়নি। সে সময় খাদ্য গুদামে লেবার থাকে না।
×