ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উভয় দিক থেকে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করবে দার্জিলিং এক্সপ্রেস

ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চলবে আগামী জুলাইয়ে

প্রকাশিত: ১১:২৭, ৪ জানুয়ারি ২০২০

ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা সরাসরি ট্রেন চলবে আগামী জুলাইয়ে

তাহমিন হক ববী, চিলাহাটি (নীলফামারী) থেকে ॥ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন আরেকটি পথে রেল যোগযোগ শুরু হতে যাচ্ছে। সরাসরি ট্রেন চলবে ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা। এছাড়া শিলিগুড়ি ও কলকাতার উভয় দিক থেকে বাংলাদেশের রেলপথ দিয়ে চলাচল করবে দার্জিলিং এক্সপ্রেস। জুলাই মাসেই বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ি সীমান্ত পথ দিয়ে এই রেলযোগাযোগ শুরু করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এটি চালু হলে রেলপথে আন্তর্জাতিকভাবে যাত্রী পরিবহনসহ মালামাল আমদানি ও রফতানিও শুরু হয়ে যাবে। চিলাহাটি পয়েন্টে দ্রুতগতিতে রেলপথ স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। এ পর্যন্ত ৫০ ভাগের উপরে কাজ শেষ হয়েছে। অপরদিকে ভারতের অংশের রেলপথ স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। এই রেলপথ চালু হলে চতুর্দেশীয় বাণিজ্যেরও একটি বড় পথ খুলে যাবে। বর্তমানে এই রেলপথ চালুর অপেক্ষায় দিন গুনছে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের আমদানি ও রফতানিকারনরা। ব্যবসায়ীরা সড়ক পথের চেয়ে রেলপথকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে খানিকটা পথ অতিক্রম করার পরে আবার ভারতে প্রবেশ করত। এছাড়া নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ভারতের হলদিবাড়ি হয়ে নিউজলপাইগুড়ি পর্যন্ত চলাচল করত পার্সপোট ট্রেন। কিন্তু ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তুলে ফেলা হয়েছিল রেলপথটি। ৫৫ বছর পরে সেই পথ আবার চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। বর্তমানে ঢাকা কলকাতা, খুলনা কলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। চিলাহাটি-হলদিবড়ি রুটটি চালু হলে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রী পরিবহনে এটি হবে আন্তর্জাতিকভাবে তৃতীয় রেলপথ। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় এই রেলপথের বিষয়ে একটি চুক্তি হয়। গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, চিলাহাটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেছিলেন, এক সময় দার্জিলিং মেইল শিয়ালদহ থেকে ছেড়ে আসা রেল, রানাঘাট, ভেড়ামারা, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, সান্তাহার, হিলি, পার্বতীপুর, নীলফামারী, চিলাহাটি, ভারতের হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িতে চলাচল করত। সেটার আদলেই এই পথে আবারও দুই দেশের মধ্যে রেল চালু হবে। এর ফলে কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা একটি রেল বাংলাদেশের ভূখ-ে প্রবেশ করে খানিকটা পথ পাড়ি দিয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করে গন্তব্যে পৌঁছাবে। এভাবে যাতায়াতের ফলে ভারতের রেলে যাত্রাপথ অন্তত ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে। বর্তমানে শিয়ালদহ থেকে শিলিগুড়ির দূরত্ব ৫৩৭ কিলোমিটার। বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক খোন্দকার শহিদুল ইসলাম জানান চিলাহাটি থেকে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রেলপথ আগামী জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ শেষ করা হবে। তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী ভারত তাদের দেশের ভেতরের রেলপথ ইতোমধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। বাংলাদেশ অংশের কাজ শেষ হলেই রেল চলাচল শুরু করা যাবে। চিলাহাটি থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হলে ভারত ও বাংলাদেশের মূল রেলপথের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হবে। তিনি আরও জানান মালামাল আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে মংলা বন্দর থেকেও সরাসরি রেলযোগাযোগ সৃষ্টি করবে এই রেলপথ। বিশেষ করে এই রেলপথকে গুরুত্ব দিয়েছে নেপাল ও ভুটান। পাশাপাশি ভারতের শিলিগুড়ির ব্যবসায়ীরাও রেলপথে আমদানি-রফতানি করতে আগ্রহী বেশি। নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার চিলাহাটি রেলস্টেশনে নির্মাণ কাজের এলাকা সরজমিনে গেলে তদারকিতে থাকা রেলওয়ের বিভাগীয় উর্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। যা প্যাকেজ মূল্যে প্রকল্পটির কাজ চলছে ৬৮ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। তিনি আরও জানান, চিলাহাটি থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার এবং ২ দশমিক ৬৩৬ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৯ দশমিক ৩৬০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অংশে সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথে ৭টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই শেষ করা হবে। এরপর বসানো হবে ব্রডগেজ লাইন। ইতোমধ্যে লাইনগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করে চিলাহাটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। নির্মাণ কাজের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ রোকনুজ্জামান শিহাব জানান, বাংলাদেশ অংশে এ পর্যন্ত ৫০ ভাগ কাজ এগিয়েছে। নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মারুফ হাসান কোয়েল জানান, দীর্ঘদিনের চিলাহাটি হলদিবাড়ি রেলপথ চালুর দাবিটি আজ পূরণ করছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের এ অঞ্চলের আমদানি ও রফতানি কারকরা বুড়িমারী, হিলি, বাংলাবান্ধা দিয়ে সড়ক পথে মালামাল আনা নেয়া করছে। এতে খরচ বেশি পড়ে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলযোগাযোগ চালু হলে নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশের আমদানি কারকরা এই পথটি বেছে নেবে। নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, ঢাকা-নীলফামারী চিলাহাটি হয়ে শিলিগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেন চললে তাহলে এই ট্রেনের চাহিদা বাড়বে। কারণ বাংলাদেশের পর্যটকরা দার্জিলিং ঘুরতে যায় বেশি। তিনি মনে করেন বর্তমানে ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা রুটে চলা ট্রেনের চেয়েও এই রুটে যাত্রী বেশি থাকবে। এতে সরকারের রাজস্ব খাতে আয়ও বেড়ে যাবে। তিনি আরও জানান, আমরা আশা করছি চলতি বছরের জুলাই মাসেই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেলপথ উদ্বোধন করতে পারবেন। রেলপথ মন্ত্রী এ্যাড. নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেন, আমরা আশা করছি চলতি বছরের জুলাই মাসেই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই রেলপথ উদ্বোধন করতে পারবেন। আমরা দুই দেশের রেলযোগাযোগের মাধ্যমে ঢাকা-শিলিগুড়ি সরাসরি যাত্রী পরিবহনে ট্রেন সার্ভিস ও আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে মালামাল পরিবহন চালু করতে সক্ষম হব।
×