ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুন সিনেমা হলের মালিক পেলেন প্রায় এক শ’ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

মুন সিনেমা হলের মালিক পেলেন প্রায় এক শ’ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে মুন সিনেমা হলের জমির মালিক ও ইতালিয়ান মার্বেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলমকে ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সার চেক বুঝিয়ে দিয়েছে আপীল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগে সরকার এ চেক হস্তান্তর করে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মুন সিনেমা হলের পক্ষে ছিলেন ব্যরিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। সঙ্গে ছিলেন এ্যাডভোকেট সাইফুল্লাহ মামুন। আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আদালত। চেক পাওয়ার পর আদালত থেকে বেরিয়ে মাকসুদুুল আলম সাংবাদিকদের বলেন আমি সন্তুষ্ট। ১৯৭২ সাল থেকে আমি অপেক্ষায় ছিলাম। আজ তার অবসান হলো। আমার ছেলেমেয়েরা এখন দেশের বাইরে থাকেন। এই অর্থ আমি ব্যবসায় বিনিয়োগ করব। মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে মামলার পর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায় এসেছিল। এটি মুন সিনেমা হল মামলা নামে বহুল পরিচিত। মঙ্গলবার মামলাটির শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বিভাগে। এ সময় মুন সিনেমা হলের জায়গা ও ওই সম্পত্তি আজকাল বা সুবিধাজনক সময়ের মধ্যে হস্তান্তর করার অঙ্গীকার করেন মাকসুদুল আলম ও তার আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত চেক হস্তান্তরের আদেশ দেয়া হয়। আপীল বিভাগ আদালতে উপস্থিত মাকসুদুল আলমের হাতে চেক হস্তান্তর করে জানতে চায়, কত টাকা পেলেন? তখন মাকসুদুল আলম আল আরাফা ব্যাংকের একাউন্টপেয়ী ওই চেক পড়ে বলেন, ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা। মামলা সূত্রে জানা যায়, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে একসময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে তুলে দেয়া হয়। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোন সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের বৈধতা দেয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু সিনেমা হল ফেরত না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করে। এক পর্যায়ে জানা যায়, মুন সিনেমা হলের জায়গায় একটি ডেভলপার কোম্পানিকে দিয়ে একটি বিশাল মার্কেট তৈরি করেছে তা সেলামি মূল্যে বিক্রি করেছে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। তাই ওই সিনেমা হলের জায়গা আর ফেরত দেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপীল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি ওই সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেন। এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে সরকার। এরপর আপীল বিভাগ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন। পরে আপীল বিভাগ ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি এক আদেশে ক্ষতিপূরণসহ ভবন ও জমির মূল্য বাবদ ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি নির্দেশ দেয়।
×