ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৬৪ বাংলাদেশীসহ ৭৫ অভিবাসীকে সাগর থেকে উদ্ধার

প্রকাশিত: ১২:৪১, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

৬৪ বাংলাদেশীসহ ৭৫ অভিবাসীকে সাগর থেকে উদ্ধার

ফিরোজ মান্না ॥ আবারও তিউনিসিয়ার উপকূলে ৬৪ বাংলাদেশীসহ ৭৫ অভিবাসীকে সাগর থেকে উদ্ধার করেছে দেশটির নৌবাহিনী। কিন্তু তাদের তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ১৩ দিন ধরে আটকে থাকা উপকূল এলাকায় তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা দিচ্ছে রেডক্রস। অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত তিউনিসিয়া ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রয়টার ও ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগ এ খবর দিয়েছে। জানা গেছে, দালাল চক্রের প্রলোভনে পড়ে ভাল চাকরি আর নিরাপদ জীবন যাপনের আশায় তারা ইউরোপ যাত্রা করেছিলেন। দালালের হাতে লাখ লাখ টাকা দিয়ে স্বপ্নচারী মানুষগুলো যখন ঘর থেকে বের হন তখন থেকেই বিপদ শুরু হয়। তাদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় দালাল চক্র। দালালদের হাতে তারা জিম্মি হয়ে পড়েন। ইউরোপ পর্যন্ত যেতে দেশে দেশে বেশ কয়েক দফা দালাল চক্রের কাছে বিক্রি হন। বিক্রি হতে হতে কারো ভাগ্য প্রসন্ন হলে ধাপে ধাপে বিরাট অঙ্কের টাকা দিয়ে ইউরোপে যেতে পারেন। আবার যাদের ভাগ্য সহায় হয় না তারা বিভিন্ন দেশের জেলে স্থান পান। পাচারকারীরা প্রথমে তারা ইউরোপের উদ্দেশ্যে প্লেনে উড়ে ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ লিবিয়ায় নামেন। লিবিয়ায় দালালরা তাদের একটি ঘরে বন্দী রাখেন। এরপর শুরু হয় লোমর্হষক-ভয়ঙ্কর সব ঘটনা। ইউরোপগামীদের ওপর দালাল চক্র চালায় নির্মম নির্যাতন। দফায় দফায় টাকা নেয়ার পর সাগরপথে পাঠানো হয় ইতালির উদ্দেশ্যে। সেখানেও দালাল চক্রের আরেকটি অংশের হাতে আটক থাকতে হয়। যারা তীরে ভিড়তে পারে তাদের কাছ থেকে আবারও টাকা আদায়ে নির্যাতন চলে। কয়েক দফা টাকা দেয়ার পর ভাগ্য সহায় হলে অবৈধভাবে কাজের সুযোগ পান অনেকে। আবার কেউ কেউ জেলহাজতে স্থান পান। অনেকে ইতালির উপকূলে পৌঁছতে পারেন আবার অনেক সাগরে ডুবে মারা যান। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, ১৩ দিন ধরে তিউনিসিয়ার উপকূলে ৬৪ বাংলাদেশী ও অন্যান্য দেশের ১১ নাগরিক লিবিয়া থেকে সাগরপথে ইউরোপ যাচ্ছিলেন। তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী সাগরের ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে তাদের উদ্ধার করে উপকূলে নিয়ে এসেছে। কিন্ত এই অভিবাসীদের তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি। ফলে বাংলাদেশও খবরটি ‘অফিসিয়ালি’ জানে না। তবে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অভিবাসীদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য জানানো হয়েছে। রয়টারের খবরে বলা হয়েছে, লিবিয়া থেকে একটি ছোট নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সময় তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী তাদের আটক করে। আটক করে তাদের তিউনিসিয়ার উপকূলে নিয়ে আসে। সেখানে তাদের এক প্রকার বন্দী অবস্থায় রাখা হয়। খবর পেয়ে আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটি আটকে থাকা অভিবাসীদের খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। তিউনিসিয়া কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এদের বিষয়ে তিউনিসিয়া কোন ধরনের ভূমিকা রাখবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
×