স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর গ্রামের কুয়েত প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের মাসহ দুই পুরুষ ও এক নারীর (তিনজন) লাশ শনিবার সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম (৭০), মেজো বোন মমতাজ বেগমের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শফিকুল আলম (৬০) এবং খালাত ভাই মোঃ ইউসুফ হোসেন (২৮)। ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক গ্রাম্য কবিরাজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
বাড়ির মালিক প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত বেগম জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। ওই সময় ঘরে তিনিসহ তার দুই শিশুসন্তান নুরজাহান (৪), ইশফাত (৯), দেবর হারুন-অর রশিদের মেয়ে আছিয়া ওরফে আফিয়া, শাশুড়ি মরিয়ম বেগম, ননদ জামাতা শফিকুল আলম এবং শাশুড়ির বোনের ছেলে (দেবর) ইউসুফ ছিলেন। এর পর ভোরে ফজরের আযানের পর আফিয়ার চিৎকারে সবাই ঘুম থেকে উঠে ওই ভয়াবহ দৃশ্য দেখেন।
নিহত বৃদ্ধ মবেগমের নাতআসিয়া আক্তার বলেন, শুক্রবার রাসাড়ে নয়টার দিকে খাবার খেয়ে ঘরে থাকা আমরা সাতজন ঘুমাতে যাই। ভোরে ফজরের নামাপড়ার জন্য ঘুম থেকে উঠে দাদিকে ডাকতে গিয়ে দেখি দাদির রুমের বারান্দার দরজা খোলা এবং তিনি বারান্দায় পড়ে রয়েছেন। ডাকাডার পরে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে চিৎকার করলে পরের অন্য সদস্যরা এসে দাদির মৃতদেহ দেখেন। এর পঘরের অন্য একটি কক্ষ থেকে ফুপার (শফিকুল আলম) এবং ঘরের পাশের পুকুরের ঘাটলা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চাচার (ইউসুফ) লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত মমের পুত্র হারুন-অর রদ বলেন, আমার বোনের জামাই শফিকুল ইসলাম দুদিন আগে নিজ বাস্বরূপকাথেকে আমাদের বাতে বেড়াতে আসেন। দুদিন পতার ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল।
অপরদিকে পার্শ্ববর্তী দাড়াগ্রাম থেকে খালাত ভাই ইউসুফ হোসেন রাতে থাকার জন্য আমাদের এখানে আসেন। মূলত বাতে পুরুষ মানুষ না থাকায় প্রায়ই তিনি (ইউসুফ) এসে থাকতেন।
বামাপ্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের স্ত্রী মিশরাত বেগম জানান, জমিজমাসহ নানান বিষয় নিয়ে আশপাশের কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে তাদের বিরোধ রয়েছে। এরই সূত্র ধরে এ হত্যাকা- ঘটতে পারে। তিনি আরও জানান, বাছাদের দরজা ছাড়া আর কিছুই খোলা পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওইদিক দিয়েই দুর্বৃত্তরা বাতে প্রবেশ করেছে। তবে, সকালে পুলিশের কাছে ঘরের কোন মালামাল ‘খোয়া যায়’ বলা হলেও বিকেলে পরিবার থেকেই দাবি করা হয়, ঘরের ভেতরের একটি আলমারি থেকে ‘কিছু অলঙ্কার খোয়া গেছে।’
জেলা পুসুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে প্রত্যেকটি লাশের নাকের কাছে রক্ত দেখা গেছে। এছাড়া শরীরে তেমন কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। আবার তেমন কিছু লুট করে নেয়ার খবরও পাওয়া যায়নি। তাই পুরো বিষয়বিœ দিক থেকে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকা- ঘতে পারে বলে তার ধারণা। তবে কিছু আলামত ও ঘরের বান্দাদের বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছে, যা তদন্তের স্বার্থে এখন বলা যাবে না। তবে দ্রুত এ মামলার অগ্রগতি জানানো হবে।
এদিকে বানারীপাড়া থানার ওসি জাফর আহমেদ জানান, প্রবাসী হাফেজ আব্দুর রবের পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় জাকির হোসেন (৩৫) নামে এক গ্রাম্য কবিরাজকে আটক করা হয়েছে। শনিবার বেলা তিনটার দিকে ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আটক জাকির হোসেন নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠী ইউনিয়নের উত্তর রাজপাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের পুত্র।
পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ এহসানউল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামসহ র্যাব, পুলিশ, সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবিআই) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুর রকিব আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জাকির হোসেন কবিরাজি কাজে ওই বাড়িতে প্রায়ই আসা-যাওয়া করত। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতেও তিনি ঐ বাড়িতে যান এবং পরে বাড়ি থেকে চলেও যান। তাই তাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বানারীপাড়া থানায় আনা হয়েছে।
অপরদিকে শনিবার সকাল থেকে বাড়িটি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি গ্রামবাসী অবস্থান করছে। তিনজনের এক সঙ্গে অপমৃত্যুর ঘটনায় শোকাহত স্বজনসহ গ্রামবাসী।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: