ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ডিসিসিআইর সেমিনারে সালমান রহমান

’২১ সালে দেশ ব্যবসা পরিচালনার সূচকে দুই অঙ্কে পৌঁছাবে

প্রকাশিত: ১১:১১, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

’২১ সালে দেশ ব্যবসা পরিচালনার সূচকে দুই অঙ্কে পৌঁছাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও উন্নয়নে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বর্তমান সরকারের গৃহীত কর্মকা- যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যবসা পরিচালনার সূচকে দুই অংকের ঘরে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। কৃষি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের সহজলভ্যতা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ, এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিযোগী সক্ষমতায় টিকে থাকার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। শনিবার রাজধানীর সিক্স সিজন হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা : চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত’ প্রেক্ষিত শীর্ষক সেমিনারে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এ সময় বিজিএমইএএর সভাপতি ড. রুবানা হক, এটুআই প্রকল্পের পলিসি এ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী এবং প্রাণ আরএফএলের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বিশেষ অতিথি ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেম এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত কর্মকা- যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ব্যবসা পরিচালনার সূচকে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত নীতিমালা সংস্কারের বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সরকার গৃহীত উদ্যোগগুলো সাধারণ জনগণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিম-লে পৌঁছানোর জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ কৃষি খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে, তিনি কৃষি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের সহজলভ্যতা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ, এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের জন্য তিনি ব্যাংকের বিকল্প হিসেবে পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিযোগী সক্ষমতায় টিকে থাকার পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। মূল প্রবন্ধে ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশ বেসরকারী বিনিয়োগ আকর্ষণে পিছিয়ে পড়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে জিডিপিতে রফতানি, প্রবাসী আয় ও বেসরকারী বিনিয়োগের পরিমাণ বেশ কমেছে। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক নীতিমালা দ্রুততার সঙ্গে সংস্কার ও তা কার্যকরের ওপর জোরারোপ করেন। বিশেষ করে, তিনি দ্রুততার সঙ্গে মেগা প্রকল্পসমূহের কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে ওপর আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি মনে করেন, বৃহৎ পরিমাণে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ মূল নির্ণায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে। রুবানা হক সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দ্রুততর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থাসমূহের আন্তঃসমন্বয় আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে উদ্ভাবন, গবেষণা এবং উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পোশাক খাত ছাড়াও অন্যান্য রফতানি খাতের পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করতে হবে। এটুআই প্রকল্পের পলিসি এ্যাডভাইজর আনির চৌধুরী বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়নের প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা গ্রহণ করা সম্ভব। তিনি জানান, সরকার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষিত যুবকদের আইওটির (ইন্টারনেট অফ থিংকস) ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। অনুষ্ঠানে আহসান খান চৌধুরী বলেন, প্রতিটি শিল্প খাতের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতপূর্বক আমাদের অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্দরসমূহের আধুনিকায়ন ও সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ওসামা তাসীর বেসরকারী খাতকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে বলেন, দেশের সক্ষমতার ওপর বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো বিষয়সমূহ অনেকাংশে নির্ভর করে। গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৯ সূচক অনুযায়ী পৃথিবীর ১৪১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫তম, যেখানে সিঙ্গাপুর প্রথম স্থানে রয়েছে এবং সম্প্রতি প্রকাশিত ডুইং বিজনেস ইনডেক্স অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। অবকাঠামো খাতে সরকার গৃহীত ফাস্ট ট্রাকের প্রকল্পসমূহের কাজ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়বে। তবে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বেকারত্ব ও অদক্ষতা, বাণিজ্যিক নীতিমালার সংস্কারের ধীরগতি, জলবায়ু পরিবর্তন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা গ্রহণের অপারগতা সর্বোপরি শিল্প খাতের অবকাঠামো স্বল্পতার বিষয়সমূহের ফলে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশকে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখোমুখি করেছে। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার নিজেদের অবস্থান উন্নয়নে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং এক্ষেত্রে ডুইং বিজনেস ইনডেক্স ও কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্সে উল্লেখজনক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ যদি প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে পারে, তাহলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে চামড়া, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক, ফার্নিচার, পাট, ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারবে।
×