ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুমান হাফিজ

সব বাধা পেরিয়ে সাদিয়ার স্বর্ণপদক

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২২ নভেম্বর ২০১৯

সব বাধা পেরিয়ে সাদিয়ার স্বর্ণপদক

মেয়ে বড় হয়েছে ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দাও, মেয়েকে আর বেশি পড়িয়ে কি হবে? এত বড় মেয়ে ঘরে রাখতে নেই সহ প্রচলিত সব কথার সঙ্গে সাদিয়ার পরিচয় স্কুলের গণ্ডি পেরুনোর আগে থেকেই। অদম্য সাদিয়াকে সেইসব নেতিবাচক কথাবার্তা মানসিক প্রভাব ফেলতে পারেনি বরং অনুপ্রেরণা লাভে সহায়তা করেছে। বলছিলেন নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার নোয়াকান্দী গ্রামের অধ্যাপক রিয়াজ উদ্দিন ও হাফছা বেগমের একমাত্র কন্যা সাদিয়া আফরিন। ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ ভাল। বাবারও ইচ্ছে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকল সাদিয়ার যাত্রা। কিন্তু আমাদের এই সমাজ আর পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছে বারবারই, কিন্তু স্বপ্নের পূর্ণতায় বিশ্বাসী বাবার মেয়েটার সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ একদমই নেই। স্কুল, কলেজের গ-ি পেরিয়ে সাদিয়া ভর্তি হন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে। শ্রেণীকক্ষের পড়ালেখার বাইরেও নিজেকে নানা বিষয়ে সবসময় যুক্ত রাখতে পছন্দ করতেন সাদিয়া। স্কুল, কলেজের কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিতে তার ছিল সরব পদচারণা। বিতর্কতে সেরা হয়েছেন অনেক প্রতিযোগিতায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও যুক্ত হন বিতর্ক সংগঠনসহ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। সেই সঙ্গে চলে উপস্থাপনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনুষ্ঠানে তার মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনা সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়। বর্তমানে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ইংরেজী মাধ্যম) এর সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলা সাদিয়া আফরিন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সেরা মেধাবী হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। মাস্টার্স ইন ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ এ্যান্ড লিটারেচার (এম এ ইন ইএলএল) পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করায় এ পুরস্কার লাভ করেন তিনি। গত ১৬ নবেম্বর ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাদিয়া আফরিনকে স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। সাদিয়া আফরিনের বাবা অধ্যাপক রিয়াজ উদ্দিন মনোহরদী সরকারী কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। পারিবারিক জীবনেও দুই সন্তান, সালিত ও সাওদার জননী সাদিয়া। টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার আদাজান গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক যুবাইর হাসানের স্ত্রী। তিনি পিকজেল গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এবং সাউথনর্থ ট্যাক্সের চেয়ারম্যান। আগামীর দিনগুলোতে সাদিয়া নিজের যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান আরও। এমফিল, পিএইচডিও করতে চান ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে। আর কর্ম জীবনে বাবার মতো শিক্ষকতা পেশাকেই আপন করার ইচ্ছে। সেই সঙ্গে সমাজের পিছিয়ে পড়া মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। শুরু“থেকে বাবার সাহস আর অনুপ্রেরণাই ছিল তার চলার পাথেয়। সাদিয়া বলেন, আমি সত্যিই বিমুগ্ধ। মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার এ অর্জনের জন্য আমার মা-বাবা, আমার জীবনসঙ্গী এবং শিক্ষকবৃন্দের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সংসার সামলেও আমি পড়াশোনা থেকে পিছপা হইনি। নারীদের অগ্রযাত্রায় বিয়ে কোন বাধা নয়। অভিভাবক ও স্বামীরা সচেতন হলেই নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জন সম্ভব ভবিষ্যতের জন্য সকলের কাছে আমি দোয়াপ্রার্থী।
×