ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রেডক্রসের নামে রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ছাড়!

প্রকাশিত: ১১:৫১, ৭ নভেম্বর ২০১৯

রেডক্রসের নামে রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ছাড়!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ছাড় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে পাহাড়তলীর সেগুন বাগান এলাকায় পরিচালিত জেলা প্রশাসনের অভিযানে। গত সোমবার উচ্ছেদ অভিযানের সময় সেগুন বাগানের বাগানবাড়ী বস্তির অবৈধ স্থাপনা প্রতারণার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। রেডক্রসের সদস্য দেখিয়ে এ ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। মূলত হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ ছাড়া সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের তালিকায় ছিল অভিযান টিমের। কিন্তু অভিযান টিম এ ধরনের প্রতারকদের প্রায় ৫শ’ স্থাপনা উচ্ছেদ না করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে রেলে কর্মরতরা। অথচ পারিবারিক প্রয়োজনে রেলের বরাদ্দকৃত ঘরের পাশে খালি জায়গায় মাথাগোঁজার ঠাঁই করেছিল কর্মরতরা। আরও অভিযোগ রয়েছে, গত রবিবারও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সেগুন বাগান এলাকায় ছাড় দিয়েছে অভিযান টিম। রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক বিভাগে কর্মরত এক কর্মচারী সেগুন বাগানের এ/১ দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ভবনের সিসি বিম ভেঙ্গে প্রাইভেট গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ করেছে। এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটালেও অভিযান টিম তা উচ্ছেদ করেনি। এছাড়াও পুরো ভবন ঘিরে খালি জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। যেখানে রয়েছে মাদক ও অসামাজিক কাজের রমরমা বাণিজ্য। এ ব্যাপারে রেলের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহবুবুল করিম জনকণ্ঠকে জানান, রেলের কোয়ার্টার সংলগ্ন অতিরিক্ত অবৈধ ঘর উচ্ছেদ করবে বিভাগীয় প্রকৌশলী/২। আর রেলের খালি জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অপরদিকে, ১৯৮৮ সালের আগে রেডক্রসের সদস্য পরিচয়ে অবাঙালীদের জন্য অলিখিতভাবে সেগুনবাগান এলাকায় কিছু জায়গা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯৮৮ এর পর থেকে রেডক্রস নামে আর কোন সংস্থা নেই এদেশে। অবাঙালীর পক্ষে ওয়াজেদ মাস্টার নামে এক ব্যক্তি বিপুল অর্থের বিনিময়ে রেডক্রসের নামে লাল ও হলুদ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এসব অবাঙালীর নামে ইস্যু করা হয়েছে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এ জায়গা গ্রামীণফোন ও ফায়ার সার্ভিসের নামে বরাদ্দ দিয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে। তবে এসব অবৈধ দখলদারদের কারণে রেল কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দিতে পারছে না বৈধদের। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, পাহাড়তলীর সেগুন বাগান এলাকায় বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দফতরে কর্মরত রেল কর্মচারী জাকির আহসানের নামে বরাদ্দ রয়েছে বাংলো নং-এ/১ এর নিচতলার একটি পার্শ্ব। ২০১৭ সালে এই কর্মচারী ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার রাখার জন্য দোতলা ভবনের নিচতলার একটি গ্রেটবিম ভেঙ্গে গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ করেছেন। কর্মরত অবস্থায় থেকে তিনি চাকরি ফাঁকি দিয়ে রেলের নামে বেনামে ব্যবসাও পরিচালনা করে আসছেন তিনি। অফিস চলাকালীন তিনি বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। রেলের সাপ্লাইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের ভোটার তালিকায় তাঁর নামও রয়েছে। এছাড়াও বরাদ্দকৃত বাংলোর আশপাশে মাদকের আস্তানা গড়ে তুলে ভাড়া বাণিজ্য চালিয়ে এলেও প্রকৌশল বিভাগ কিছুই বলছে না মাসোহারার কারণে। এদিকে, পাঞ্জাবী লেনখ্যাত শহীদ লেনে ৫৫৫/বি- নং কোয়ার্টারের পার্শ্বে জনতা কিন্ডার গার্টেন নির্মাণ করেছে রহিমা বেগম প্রকাশ লিলি। তিনি বিএনপি-জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট ও ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার সেলিমের বোন। ২০০৯ সাল থেকে ১০ বছর ধরে এ ধরনের অবৈধ স্কুল প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সাইনবোর্ডের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে এলাকায়। অপরদিকে, মাস্টার লেনে ই/৪৭ কোয়ার্টারের পার্শ্বে দোকান গড়ে তুলে ভাড়া দিয়েছে রেল কর্মচারী শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নিজাম (ওয়েম্যান/সীতাকুণ্ড)।
×