ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলায় গণধর্ষণ

আটদিন পার হলেও গ্রেফতার হয়নি মূল আসামিরা

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৩ নভেম্বর ২০১৯

 আটদিন পার হলেও  গ্রেফতার হয়নি  মূল আসামিরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ২ নবেম্বর ॥ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার দুর্গম চরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের আলোচিত ঘটনার আটদিন পরও মূল আসামিকে পুলিশ গ্রেফাতার করতে পারেনি। এদিকে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক কারণে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুলকে ধর্ষণ মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে দাবি করে শনিবার ভোলা প্রেসক্লাবে তার মা, বাবা ও স্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। নজরুলের স্ত্রী রিমা সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ২৬ অক্টোবর চার লম্পট স্পীডবোট থামিয়ে চরপিয়াল নিয়ে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। এ বিষয়টি স্পীডবোটের চালক নজরুল ইসলামকে জানালে তিনি খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে ওই ধর্ষিতা নারীকে উদ্ধার করেন এবং ধর্ষক লম্পট চারজনকে মারধর করেন। এ সময় ওই নারী নজরুলকে জানায় ধর্ষকরা তার পূর্ব পরিচিত। এসব ঘটনা ওই নারীর কাছ থেকে নজরুল মোবাইলে রেকর্ড করেন। ওই নারীর কথামতো তাকে তার বাপের বাড়ি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে ওই নারীকে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদে আনা হয়। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ কাজল ধর্ষিতা নারীকে মনপুরা থানায় পুলিশ হেফাজতে পাঠান। রাতে ওই নারী চারজনকে আসামি করে মামলা দিতে চাইলেও অজ্ঞাত কারণে নজরুলকে ৫নং ও স্পীডবোট চালক রিয়াজকে ৬নং আসামি করে মামলা করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত চেয়ারম্যান অলিউল্ল্যাহ কাজলকে সমর্থন না করে অপর প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর হাওলাদারের সমর্থন করেন নজরুল। এছাড়াও জনতা বাজার টু রামনেয়াজ আন্তঃথানা ফেরিঘাটটি উপজেলা পরিষদ থেকে নজরুলের সহায়তায় মোঃ আলমগীর নামে এক ব্যক্তি ইজারা পান। বিষয়টি বর্তমান প্রভাবশালীরা মেনে নিতে পারেননি। তাই নজরুলের ওপর অনেকের ক্ষোভ। এসব কারণে নজরুলকে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করে নজরুলের পরিবার। নজরুলের স্ত্রী আরও বলেন, নজরুল নির্দোষ বলেই তিনি মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন। নজরুল যে নির্দোষ তা ওই সময় ফুটে ওঠে। কিন্তু বিভিন্ন মহলের চাপে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ প্রকৃত ৪ ধর্ষক এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় সবাই বিস্মিত। প্রকৃত ধর্ষকদের শাস্তি দাবি করেন তিনি। পাশপাশি কোন নিরাপদ ব্যক্তি যেন কোন প্রভাবশালী মহলের রোষাণলে পড়ে অপবাদ মাথায় নিয়ে শাস্তি না পায় তা উল্লেখ করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এ সময় নজরুলের স্ত্রী ছাড়াও তার পিতা আলী আজগর, মাতা পিয়ারা বেগম উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ কাজল বলেন, নজরুল যদি উদ্ধার করতে যায় ওই নারীকে, তা হলে সে কেন একা আনতে গেল। এলাকায় গণ্যমান্য ২/৪ জনকে কেন নিয়ে গেল না। থানায় কেন গেল না বলে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং মামলা থেকে বাঁচার জন্য তার বিরুদ্ধে এখন কথা বলা হচ্ছে। মনপুরা থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন জানান, গৃহবধূকে গণধর্ষণের মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত নজরুল ছাড়া অন্য কোন আসামিকে গ্রেফতার করেনি। উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচা বাবার বাড়ি থেকে মনপুরায় শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য মনপুরার জনতাগামী এক স্পীডবোটে আড়াই বছরের শিশুকে নিয়ে ওই ধর্ষিতা নারী ওঠে। তখন ওই স্পীডবোটে আরও ২ যাত্রী ওঠে। পথিমধ্যে জনতার খালের পাড় থেকে আরও ২ যাত্রী ওঠে। তারা হলেন, বেলাল পাটোয়ারী (৩৫), মোঃ রাসেদ পালোয়ান (২৫), শাহীন খান (২২), কিরণ (২৬)। তাদের সবার বাড়ি দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রামে। তারা গন্তব্যে না গিয়ে স্পীডবোট ড্রাইভারকে জোর করে চরপিয়াল নিয়ে যায়। ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেন, চরপিয়াল নিয়ে স্পীডবোট থেকে জোর করে নামিয়ে তাকে সবাই মিলে ধর্ষণ করে। পরে স্পীডবোটটি চরপিয়াল থেকে জনতা বাজার চলে যায়। পরে স্পীডবোটের মালিক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল চরপিয়াল গিয়ে ওই ৪ ধর্ষককে মারধর করে। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা রেখে তাদের ছেড়ে দেয়। এরপর অসহায় ওই গৃহবধূকে নজরুলও ধর্ষণ করে এক হাজার টাকা দিয়ে চরফ্যাশন বেতুয়া ঘাটে পৌঁছে দেয়। এ ঘটনায় ওই ধর্ষিতা গৃহবধূ বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে মনপুরা থানায় ওইদিন রাতেই একটি মামলা করেন।
×