ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চালক বা শ্রমিককে সাজা দিলেই দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না ॥ শাজাহান খান

প্রকাশিত: ১০:১৩, ১ নভেম্বর ২০১৯

 চালক বা শ্রমিককে  সাজা দিলেই  দুর্ঘটনা  বন্ধ হবে না ॥ শাজাহান খান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চালক বা শ্রমিককে সাজা কিংবা ফাঁসি দিলেই সড়কে দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না। যারা এ অলিক কল্পনা করেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। পাশাপাশি নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ তে কিছু অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে। মালিক-শ্রমিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আপত্তি আছে এমন ধারাগুলো বিবেচনায় নেয়া হোক। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও সংগঠনটির কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান। উল্লেখ্য নানা আলোচনা সমালোচনার পর আজ থেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকারের সকল পর্যায়ে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে নতুন আইন প্রয়োগ হবে। শাজাহান খান বলেন, রেলপথের ওপর যখন পথচারী মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে, এর জন্য কি রেলগাড়ির চালক দায়ী হয়? তাহলে সড়কে দ্রুতগামী যানবাহনের সামনে কেউ মোবাইল ফোন কানে আনমনা হয়ে সড়ক পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটালে এর দায়ভার কি চালককে নিতে হবে? শাজাহান খান বলেন, নিরাপদ সড়ক আমাদের সবার দাবি। দুর্ঘটনায় শুধু পথচারী নয়, চালকও নিহত হয়। অন্যায় হলে শাস্তি হবে। তাই বলে অন্যের দোষ সব চালক-শ্রমিক কেন নেবে? তিনি বলেন, সম্প্রতি দুর্ঘটনার কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছেন। ঢালাওভাবে এ ধরনের রায় কোন দেশে নেই। এতে মালিক-শ্রমিক গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। এসব রায় সড়কে কতটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। বরং সড়ক আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের প্রস্তাবিত ১১১টি সুপারিশের বাস্তবায়ন জরুরী। সাবেক নৌমন্ত্রী বলেন, সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিলেও এখনও বিধি প্রণয়ন করা হয়নি। বিধি প্রণয়ন ছাড়া আইন প্রয়োগে জটিলতার অবসান কীভাবে হবে? সবার সচেতনতার ওপর নির্ভর করবে দুর্ঘটনা। সবাই সচেতন হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে কোন সমাধান আসবে না। নতুন সড়ক আইন প্রসঙ্গে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের এই নেতা বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮তে কিছু অসামঞ্জস্য রয়ে গেছে। বিষয়গুলো আমরা সেতুমন্ত্রীকে জানালে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহ্বায়ক এবং আইনমন্ত্রী ও রেলপথ মন্ত্রীকে সদস্য করে কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে আমাদের কয়েকটি প্রস্তাব জানালে তারা এর যৌক্তিকতার সঙ্গে একমত হন, যা পরে বিবেচনায় আনার কথা বলা হয়েছে। নতুন আইনে মালিক-শ্রমিকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক ধারা রয়েছে যেগুলো নিয়ে আপত্তি রয়েছে। সেসব ধারা বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানাই। সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সড়ক দুর্ঘটনা মামলাকে জামিনযোগ্য করতে হবে, তদন্ত ছাড়া মামলা ৩০২ ধারায় দায়ের করা যাবে না, মামলাগুলো পুলিশ ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে তদন্ত করতে হবে, সড়কে দুর্ঘটনা রোধে প্রস্তাবিত ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং লোডিং পয়েন্টে ওভারলোড চেক করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
×