ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কট সমাধানে সব করব- মাহাথির ॥ ইরানও পাশে থাকবে

রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনই সমাধান ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৪০, ২৬ অক্টোবর ২০১৯

রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনই সমাধান ॥ প্রধানমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজভূমিতে স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়াই সঙ্কটের একমাত্র সমাধান। এই সঙ্কট কেবল বাংলাদেশে নয়, এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকু কংগ্রেস সেন্টারে সমসাময়িক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত ও পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিশ্চিতে ‘বান্দুং নীতিমালা’ সমুন্নত রাখা বিষয়ে এক সাধারণ আলোচনায় একথা বলেন। আর্থসামাজিক সাফল্য সত্ত্বেও বাংলাদেশ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সঙ্কট এই দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট একটি রাজনৈতিক সঙ্কট এবং এর মূল গভীরভাবে মিয়ানমারে প্রোথিত। তাই এর সমাধানও মিয়ানমারের অভ্যন্তরেই খুঁজতে হবে।’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সঙ্কট কেবল বাংলাদেশে নয়, এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছি। এটির আমাদের দেশ এবং এর বাইরেও অস্থিতিশীলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এই সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করছি।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটির বেশি বাংলাদেশী নাগরিককে ভারত আশ্রয় দেয়ার কথা স্মরণ করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায় খুবই নগণ্য হওয়া সত্ত্বেও দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাবে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোকে তাই অবশ্যই জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের প্রতি পূর্ণ সম্মান জানাতে হবে। সঙ্কট সমাধানে প্রয়োজনীয় সব করব ॥ মাহাথির রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু করার অঙ্গীকার করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) আজারবাইজানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজের করণীয় সম্পর্কে একথা বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ১৮তম জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন-ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে আজারবাইজান সফরে রয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাকু কংগ্রেস সেন্টাওে বৈঠকে বসেন দুই প্রধানমন্ত্রী। পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করেন। খবর বাংলানিউজের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধান বিষয়ে মাহাথির বলেছেন, উনি (মাহাথির মোহাম্মদ) এবং আসিয়ান সদস্যরা যেটা করা প্রয়োজন তিনি সেটা করে যাবেন। তিনি (মাহাথির) দৃঢ়ভাবে এটা অনুভব করে যে গণহত্যা, ওখানে গণহত্যা হয়েছে এবং এর বিচার হওয়া দরকার। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বলেছেন- রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নির্যাতন হয়েছে। সুতরাং, মালয়েশিয়ার একটি ফিল্ড হসপিটাল রয়েছে, কক্সবাজারে ওটার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকবে। শহীদুল হক বলেন, মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভাসানচরের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাসানচরে নিরাপত্তাসহ অন্য দিক তুলে ধরেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও ব্যাখ্যা করেছেন শেখ হাসিনা। দুই দেশের বিনিয়োগ বিষয়ে মাহাথিরের বক্তব্য প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার যে বিনিয়োগ রয়েছে তা আরও বাড়ানোর কথা বলেন মাহাথির মোহাম্মদ। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক গভীর- এ বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। শহীদুল হক বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক নিরাপত্তাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা এবং বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী যাতে মালেশিয়ায় যায় সে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন মাহাথির। রোহিঙ্গা সঙ্কটে ‘পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি’ ইরানের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য যা প্রয়োজন, ইরান তা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। আজারবাইজানে অষ্টাদশ ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শুক্রবার বাকু কংগ্রেস সেন্টারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট এই প্রতিশ্রুতি দেন বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান। আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদেল কাদের বেনসালার সঙ্গেও এদিন আলাদাভাবে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পরে শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অব্যহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মাহাথিরের সঙ্গে বৈঠক জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে আজারবাইজান সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুরে ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ফাঁকে দুই প্রধানমন্ত্রী বাকু কংগ্রেস সেন্টারে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ও মুসলিম উম্মাহর বিষয়ে আলোচনা করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এর আগে শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা এগারোটার দিকে বাকু কংগ্রেস সেন্টারে শুরু হয় ন্যাম শীর্ষ সম্মেলন। এতে অন্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ন্যামের নতুন চেয়ারম্যান ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যামের বিদায়ী চেয়ারম্যান ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে বিগত ন্যাম শীর্ষ সম্মেলন থেকে এখন পর্যন্ত যেসব ন্যাম নেতা মারা গেছেন তাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মেলন ঘিরে সকাল ১০টার আগে থেকে বাকু কংগ্রেস যোগ দেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সেখানে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। উদ্বোধনের আগে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গ্রুপ ফটোসেশনে অংশ নেন। ১২০ উন্নয়নশীল দেশের জোট ন্যাম জাতিসংঘের পর সবচেয়ে বড় ফোরাম হিসেবে পরিচিত। ২৫ ও ২৬ অক্টোবর বাকুর কংগ্রেস সেন্টারে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জোটের ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সদস্যভুক্ত ৫০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ছাড়াও অন্য দেশের প্রতিনিধি, ১৭ পর্যবেক্ষক দেশ এবং ১০ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ, জিবুতির প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদ্দো, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি, ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু, তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাঙ্গুলি বেরদিমুহামেদাউ, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি প্রমুখ অংশ নিয়েছেন। রাতে বাকু কংগ্রেস সেন্টারে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে নেশভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা। সম্মেলন শুরু ফোরামের চেতনা সমুন্নত রাখার এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বানের মধ্যদিয়ে শুক্রবার আজারবাইজানের বাকুতে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) ১৮তম সম্মেলন শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাকু কংগ্রেস সেন্টারে ১২০ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের ফোরাম ন্যামের দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং সরকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাকু কংগ্রেস সেন্টারের প্লেনারি হলে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে যোগ দিয়েছেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ১০টায় সম্মেলন স্থলে এসে পৌঁছলে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট তাকে স্বাগত জানান। অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে সম্মেলনে আরও যোগ দিয়েছেন- ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহনী, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, জিবুতির প্রেসিডেন্ট ইসমাইল ওমর, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আড্ডো, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শার্মা ওলী, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী, ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি এম. ভেনকাইয়া নাইডু, তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাংগুলি বেরদিমুহামেদো, চেয়ারম্যান অব দি প্রেসিডেন্সি অব বসনিয়া এ্যান্ড হার্জেগোবিনা বাকির ইজতেবেগোভিচ, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ মুস্তাফা আল-সারাজ। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট এবং ন্যামের বর্তমান চেয়ারপার্সন নিকোলাস মাদুরো সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত ভাষণ দেন। তার ভাষণের পরই আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ সর্বসম্মতিক্রমে আগামী তিন বছরের জন্য ন্যাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরই প্রদত্ত ভাষণে তিনি ন্যামকে বাংদুং আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের সভাপতি তিজানি মুহাম্মাদ-বান্দে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার সংযোগ স্থলে এই সম্মেলনের আয়োজক দেশ আজারবাইজানের ভৌগলিক অবস্থান এবং এর জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি। বহু জাতিগত এবং এবং ধর্মাবলম্বীদের এই দেশের শতকরা ৯৬ জন নাগরিকই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। সম্মেলনের শুরুতেই ২০১৬ সালে ভেনিজুয়েলায় অনুষ্ঠিত ১৭ তম ন্যাম সম্মেলনের পর থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারী ন্যাম নেতৃবৃন্দের সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এবারকার ১৮তম ন্যাম সম্মেলনের সাধারণ বিতর্কের বিষয়বস্তু হচ্ছে- সকলের সম্মিলিত এবং পর্যাপ্ত সাড়া প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে বাংদুং নীতিমালা সমুন্নত করা।’ রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের প্রধানদের সম্মানে সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত ওয়ার্কিং লাঞ্চিয়ন এবং প্ল্যানারী সেশনেও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে হায়দার আলিয়েভ সেন্টারে অনুষ্ঠেয় আজারাইজানের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনাতেও তিনি যোগদান করবেন। সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এদিন বিকেলেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে সৌজন্য স্বাক্ষাত করার কথা। ন্যাম বিশ্বের ১২০ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রনিয়ে গঠিত একটি ফোরাম, যা বড় কোন পাওয়ার ব্লকের সঙ্গে বা বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত নয়। জাতিসংঘের পর এটি বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলোর বৃহত্তম গ্রুপিং। এতে ১৭ পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র এবং ১০ পর্যবেক্ষণ সংস্থা রয়েছে। এটি জাতিসংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সংগঠন, বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৫৫ শতাংশ জনগণ এই ন্যামের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিবাসী। এই দেশগুলোতে বিশ্বের তেলের ৭৫ শতাংশেরও বেশি মজুদ এবং ৫০ শতাংশেরও বেশি গ্যাস মজুদ রয়েছে, পাশাপাশি বৃহত্তম মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ও সাবেক যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট যোসেপ ব্রোজ টিটোর উদ্যোগে ১৯৫৫ সালে বাংদুং সম্মেলনে সম্মত নীতিমালা প্রণয়নের পর ১৯৬১ সালে যুগোস্লাভিয়া বেলগ্রেড ন্যাম প্রতিষ্ঠিত হয়। ভেনেজুয়েলার মারগারিটা দ্বীপে ২০১৬ সালে ১৭তম ন্যাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার পতন এবং আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা সহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরাশক্তির মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালীন ন্যাম প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর ক্রিয়াগুলি ডিক্লোনাইজেশন প্রক্রিয়ার মূল কারণ ছিল, যা পরে অনেক দেশ এবং জনগণের দ্বারা স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা অর্জন এবং বহু নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করে। ঐতিহাসিকভাবেই ন্যাম বিশ্বশান্তি এবং নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তিনটি প্রধান করণীয়কে কেন্দ্র করে ন্যামের চেয়ারম্যানশিপ গঠিত হবে, যার মধ্যে আন্দোলনের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে সংগঠনের সুনাম বৃদ্ধির বিষয়টি রয়েছে। এছাড়া, বাংদং নীতি সমুন্নতকরণ এবং আন্দোলকারীদের মধ্যে সংহতি জোরদারকরণের বিষয়টি রয়েছে।
×