ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

৩ শতাধিক জনশক্তি রফতানিকারক কালো তালিকাভুক্ত

মেডিক্যাল না করে সৌদি যাওয়া কর্মীরা ফেরত আসছে

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

 মেডিক্যাল না করে সৌদি যাওয়া কর্মীরা ফেরত আসছে

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি দূতাবাস ৩শ’র বেশি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। দূতাবাস বলছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো মেডিক্যাল না করিয়েই চার হাজারের বেশি কর্মীকে সৌদি পাঠিয়েছে। গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) বা গালফ মেডিক্যাল কাউন্সিল (গামকা) আওতাভুক্ত দেশগুলোয় কর্মীদের মেডিক্যাল চেকআপ করে আসছে। বাংলাদেশে গামকার অনুমোদিত আটটি মেডিক্যাল সেন্টার কর্মীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে এই অপকর্মটি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সৌদি দূতাবাস ব্যবস্থা নিলেও ভুক্তভোগী কর্মীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের এখন সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে গামকার অনুমোদিত ৬৬টি মেডিক্যাল সেন্টারের মাধ্যমে কর্মীদের চেকআপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্ত এক্ষেত্রে জিসিসির বা গামকা আওতাভুক্ত আট মেডিক্যাল সেন্টার প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে ১০ হাজারের বেশি করে টাকা নিয়ে মেডিক্যাল না করিয়েই ফিট কার্ড দিয়েছে। ওই ফিট কার্ড নিয়ে কর্মীরা সৌদি যাওয়ার পর মেডিক্যালে ‘আনফিট’ হয়েছেন। এ অবস্থায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। বায়রা বলছে, সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বিষয়টি সমাধানের। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিয়ে দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছে। এ কারণে গত তিনমাস ধরে সৌদিতে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর যৌথ উদ্যোগে অনুমোদিত গালফ এ্যাপ্রুভড মেডিক্যাল সেন্টারস এ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশে (গামকা) মেডিক্যাল চেকআপ করে। কিন্তু মেডিক্যাল চেকআপে দুর্নীতির কারণে ৩শ’র বেশি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ওপর কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকার সৌদি দূতাবাস। ফলে এসব রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে থাকা সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানির হাজার হাজার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত-অন্যদিকে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে গামকার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জনকণ্ঠকে বলেন, গামকার সদস্য আট মেডিক্যাল সেন্টার সৌদি দূতাবাসের আট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে মেডিক্যাল না করিয়েই মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেয়। এদের কোন তথ্য সৌদি দূতাবাসের সার্ভারে নেই। পরে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর ওই আটটি মেডিক্যাল সেন্টারকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। একই সঙ্গে ৩শ’র বেশি বড় বড় জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকেও কালো তালিকায় রেখেছে। দূতাবাস মনে করছে, এ ক্ষেত্রে জনশক্তি রফতানিকারকদেরও হাত ছিল। এ ঘটনায় সৌদি দূতাবাসের ওই আট কর্মকর্তাকেও শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। বায়রার পক্ষ থেকে একজন কর্মকর্তা বলেন, সৌদি দূতাবাসের সার্ভারের আর গামকা সংযুক্ত। মেডিক্যালে কে ফিট আর কে আনফিট তা দূতাবাস ও গামকাই জানবে। অন্য কারও পক্ষে এটা জানা সম্ভব নয়। জনশক্তি রফতানিকারকদের ওপর কেন কি কারণে দোষ চাপানো হচ্ছে এটাই এখন বড় প্রশ্ন। সৌদিতে কর্মী নিয়োগ করে যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের পক্ষে মেডিক্যালের বিষয়টি জানা সম্ভব নয়। বিনা কারণে সৌদি দূতাবাস এতগুলো প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকা করে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সৌদি দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি।
×