ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজ ছাড়াই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার?

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

পেঁয়াজ ছাড়াই পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার?

এমন কিছু সমস্যা যা প্রতি মুহূর্তে মানুষের জীবনকে সঙ্কটাপন্ন করে তুলছে। সেখানে পেঁয়াজের সমস্যা- কী ঠিক তেমন? লবণ হলে তা অবশ্যই হতো। চালের বেলায়ও তা সত্য। কিন্তু পেঁয়াজ না খেলে কি মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয় কিংবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, হাত-পা অবশ বা অন্য কিছু হয়? ভারতবর্ষের অর্ধেক জনগোষ্ঠী তো মোটেও খায় না। অথচ এই পেঁয়াজের জন্য বিভিন্ন মিডিয়া তৎপর হয়েছে এবং ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থেই তৎপরতা দেখাচ্ছে। জনগণের চিন্তায় তারা কতই না ব্যাকুল! ২ সেপ্টেম্বর সকালে জঞঠ চ্যানেলে যখন এমন বিতর্ক চলছিল তখন আমাদের সাহায্যকারী হাজেরা বেগম বলে উঠলেনÑ ‘পেঁয়াজের দাম যখন ১০০ টাকা তখন পেঁয়াজ খাওনের দরকার কি? না খাইলেই তো হয়’। আমি আগের দিন ফেসবুকে পেঁয়াজ ছাড়া বা অল্প দিয়ে রান্নার কথা লিখেছিলাম, অনেকে পছন্দ করেছেন। প্রশ্ন করেছিলাম তারা কি ভাবে রান্না করেন? সোজা সাপ্টা উত্তর- ‘কড়াইতে তেল দিয়া সব ময়মসলা দিয়া খানিক নাড়ানাড়া কইরা যা রান্না করতে চায় তা ঢাইলা দেয়।’ এটাই বাস্তবতা। তা ছাড়াও ব্রাহ্মণ ঠাকুররা যে, মাছ ও শাক সবজি রান্না করেন, তা তো পেঁয়াজ ছাড়াই। সে রান্না তো ঘ্রাণেই অর্ধ ভোজন হয়ে যায়। তারা সব্জিতে পাঁচফোড়ন এবং মাছে কালোজিরা বা মেথি ব্যবহার করেন। অন্য ধর্মাবলম্বীরা যখন গরুর মাংস রান্না করবেন, তখন তারা পেঁয়াজের পরিমাণ মিষ্টি কুমড়ার ছোট ছোট টুকরাসহ অন্যান্য সকল মসলা দিয়ে রান্না করলে পেঁয়াজের অভাব মনেই হবে না। খুব সামান্য পেঁয়াজ শেষে ভেজে উপরে দেয়া যেতে পারে। আর খাসি বা মুরগির মাংসে পেপের কুচি এবং শেষে লবণের চেয়ে কম পরিমাণে চিনি ব্যবহার করলে পেঁয়াজের প্রয়োজন কমে যাবে। মাংসের কোরমা করলে সামান্য ময়দা/আটা গুলিয়ে দিলে ঝোল ঘন হয়ে এলে দুধের গুঁড়া দিতে হবে। এতে স্বাদে কোনো ঘাটতি পড়বে না। অথবা এখানে বাদাম বা পোস্ত বাটাও হতে পারে আর শেষে ওই সমাান্য বেরেস্তা। পেঁয়াজ ছাড়া ইলিশ মাছ রান্নাÑ অনেকে ভাবতে না-পারলেও তা সম্ভব। কড়াইতে তেল গরম করে জিরার ফোড়ন দিয়ে অল্প আদা-রসুন, ধনে দিয়ে সামান্য কষতে হবে। তারপর প্রয়োজনমতো মিহি সরিষা বাটা দিয়ে অল্প সময়ের জন্য নাড়াচাড়া করে লবণ, হলুদ মাখা ইলিশ (ইচ্ছে করলে হাল্কা ভেজে) বিছিয়ে দিতে হবে এবং কিছুক্ষণ রেখে পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে এবং নামানোর আগে অল্প ভাল সরিষার তেল, কাঁচা মরিচ ও সামান্য চিনি (লবণের অর্ধেক পরিমাণ) দিয়ে নামিয়ে নিলেই পেঁয়াজ ছাড়াই সুস্বাদু ইলিশ রান্না হবে। একইভাবে ভিন্ন ভিন্ন বড় মাছ কালোজিরা বা মেথির ফোড়ন দিয়ে পছন্দমতো মসলাসহ কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা দিয়ে রান্না করা যায়। ধনে পাতা না থাকলে ভাজা জিরার গুঁড়া আর শীতের সবজি শিম, ফুলকপি, বরবটি অল্প পরিমাণ দিয়ে ঝোল পাতলা করলে ভালই হয়। আর ছোট মাছ বা গুঁড়া মাছে সামান্য পেঁয়াজ দিয়ে আলু চিকন কুচি করে লবণ, হলুদ, মরিচ, তেল ঠিকমতো দিয়ে শেষে কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা বা ভাজা জিরার গুঁড়া দিয়ে নামালে স্বাদের কমতি হয়না। এভাবে বুদ্ধি করে সব রান্নাই করা যায়Ñ পেঁয়াজ ছাড়া বা অল্প দিয়ে। পোলাওতে যে পরিমাণ বেরেস্তা আগে দেয়া হতো এখন থেকে চার ভাগের এক ভাগ নিয়ে সামান্য চিনি দিয়ে বেরেস্তা হাল্কা গুঁড়া করে ব্যবহার করলে পেঁয়াজের ব্যবহার কমে আসবে। ডালের পেঁয়াজু বানানোর সময় আগের চাইতে চার ভাগের এক ভাগ বা একটু বেশি পেঁয়াজ, আলুর খুব ছোট ছোট কুচি দিয়ে ছোট ছোট পেয়াজু বানানো যায় লবণ, মরিচ সহযোগে। পেঁয়াজু মচমচে থাকবে বেশিক্ষণ। এভাবে সব রান্নাতেই মুন্সিয়ানার ছাপ রাখা যাবে এবং এভাবেই উদ্ভাবন হবে নতুন নতুন রেসিপি। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলসহ অনেক অঞ্চলে পেঁয়াজ ব্যবহারই করে না। কৃষি বিজ্ঞানীরা সারাবছর পেঁয়াজ চাষের পাঁচ রকমের ভ্যারাইটি আবিষ্কার করছেন। কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে আগামী এক বছরের মধ্যেই পেঁয়াজ চাষে দেশকে স্বনির্ভর করা যায়। তাহলে ব্যবসায়ী শ্রেণীর পেঁয়াজ নিয়ে এত পেরেশান হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। দেশের শ্রমিকের, কৃষকের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি না- করে বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ শৌচাগার, পলেস্তারা খসে পড়া ছাদ ও জরাজীর্ণ ভবন, রেল, সেতু, কালভার্ট মেরামত করা যাবে। খেলার মাঠ উদ্ধার ও যেসব জেলায় জলাবদ্ধতা বা পানির কষ্টÑ তা দূর করতে হবে। রেল ব্যবস্থার প্রকৃত উন্নয়ন করে লাখো মানুষকে মৃত্যুঝুঁকি থেকে উদ্ধার আর সড়কের প্রাণহানি বন্ধ করার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আর কৃষক যখন যে ফসল উৎপাদন করে তার লাভজনক দাম নিশ্চিত করে প্রতি উপজেলায় কষিপণ্যের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হিমাগার তৈরি করতে হবে। যে সব ব্যক্তি জুয়া, ক্যাসিনো বা নানা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তÑ তাদর কৃষক লীগের সকল পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য না- পাওয়ার এরাই কারণ। এক সময় আলু অধিক উৎপন্ন হওয়ায় বিএডিসি আলুর নানা রকম উপাদেয় খাদ্য তৈরি করে প্রদর্শনীর আয়োজন করত। এখনও হতে পারে পেঁয়াজ ছাড়া বা সামান্য ব্যবহার করে বা বিকল্প কিছু পথ উদ্ভাবন করে নানা রকম উপাদেয় খাদ্য তৈরি করা এবং প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা। আর বিভিন্ন চ্যানেলে শুধু বিদেশী রান্নার আয়োজন না-করে পেঁয়াজ ছাড়া রান্নাও দেখানো যেতে পারে।
×