ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তি যেখানে স্বপ্ন...

প্রকাশিত: ০৮:২৮, ১২ অক্টোবর ২০১৯

  শান্তি যেখানে স্বপ্ন...

আফগানিস্তানে জন্ম নেয়া এক প্রজন্ম কেবল যুদ্ধ দেখেই বড় হয়েছে। গত সোমবার আফগান যুদ্ধের ১৮ বছর পূর্তি হয়েছে। এ সময়ে জন্ম নেয়া শিশুরা কেবল সংঘাত দেখেছে। যুদ্ধের কারণে অনেক শিশু স্কুলে যেতে পারেনি। এদেরই একজন ১৩ বছর বয়সী হামিদুল্লাহ। ছেলেটি এখন জুতা পালিশ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দারিদ্র্যের কারণে ১১ বছর বয়সী সাবির কাবুলের রাস্তায় শুকনো ফল বিক্রি করে। পেটের দায়ে ৯ বছরের নিয়ামতুল্লাহ একটি পার্কে কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছে। শুধু তারা নয়, আফগানিস্তানের প্রায় সব শিশুর অবস্থা এখন হামিদুল্লাহ, সাবির ও নিয়ামতুল্লাহদের মতো। ১৭ বছর বয়সী কাবুল উচ্চ বিদ্যালয়ে পডুয়া মোহাম্মদ মবিন বলেন, আমাদের দেশে শান্তি যেন এক স্বপ্ন। তার মতে, আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্য স্রেফ শান্তি দরকার। ১৮ বছর বয়সী মেডিক্যাল শিক্ষার্থী সাইদ ইব্রাহিম বলেছেন, আমাদের দেশে কোন শান্তি নেই, এখানে কেবল লড়াই আর সংঘাতই হচ্ছে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ আফগানিস্তানের ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চলমান সহিংসতার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, গত চার বছরের তুলনায় আফগান শিশুরা বেশি মাত্রায় সহিংসতায় জড়াচ্ছে। আফগানিস্তানের সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওনো ভ্যান মানেন বলেছেন, আপনি ১৮ বছর বয়সী হয়ে একবার কল্পনা করে দেখুন, আপনার পুরো শৈশব এবং কৈশর কেটেছে শুধু যুদ্ধ দেখে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে জীবন মানেই প্রতিদিন বিস্ফোরণ আর ভয়। এখানে স্কুলে অনুপস্থিত থাকাটাই যেন খুব বেশি নিরাপদ এবং কেউ জানে না যে তার বাবা-মা অথবা ভাইবোনরা ঘরে ফিরতে পারবে কিনা। ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০১৭ সালের তুলনায় আফগান স্কুলগুলোতে গত বছর হামলার সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে। ২০১৮ সালের শেষদিকে দ্বন্দ্বের কারণে এক হাজারেরও বেশি আফগান স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১১ বছর বয়সী সাবির তার নিজ প্রদেশ গজনী থেকে মধ্য কাবুলে এসেছে চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ ও শুকনো ফল বিক্রি করতে। সাবির জানায়, ‘আমি পড়াশোনা করি না কারণ আমার কাছে অর্থ নেই, আমার পরিবারকে সহায়তা করার জন্য আমাকে অর্থ উপার্জন করতে হবে। আমাদের স্কুলে যেতে হবে এবং পড়াশোনা করতে হবে। আমরা শিক্ষার মাধ্যমে লড়াই শেষ করতে পারি। আফগানিস্তানের অর্থনীতি বর্তমান এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, দরিদ্র পরিবারগুলো প্রায়ই তাদের বাচ্চাদের স্কুল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে এবং অতিরিক্ত নগদ অর্থ উপার্জনের জন্য তাদের বিপজ্জনক রাস্তায় পাঠিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে। ১১ সেপ্টেম্বর আল-কায়েদার নাইন ইলেভেন হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হওয়ার কারণেই আফগানিস্তানে এই হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানরা আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হস্তান্তর করতে অনীহা প্রকাশ করার এক সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তান মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম যুদ্ধে পরিণত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে সহিংসতা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং শিশুদের তুলনামূলকভাবে প্রভাবিত করছে। -এএফপি অবলম্বনে
×