ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলকপি, পাতাকপি চাষ শুরু, ব্যস্ত উত্তরের কৃষক

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ফুলকপি, পাতাকপি চাষ শুরু, ব্যস্ত উত্তরের কৃষক

জনকণ্ঠ ফিচার বগুড়া অঞ্চলে শীতকালীন সবজি আগেই হয়। এবার আরও কিছুটা আগেই শুরু হয়েছে। বন্যার পর মৃত্তিকা ও আবহাওয়ার কারণে রোপা আমনের আবাদ সব এলাকায় একই সময়ে শুরু হয়নি। যে এলাকায় আমন চাষের অপটিমাম পিরিয়ড পার হয়েছে সেখানকার কৃষক সবজি চাষে নেমে পড়েছে। বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ এলাকার কৃষক সবচেয়ে আগে ফুলকপি ও পাতাকপি চাষ শুরু করেছে। অন্যান্য সবজি চাষ পর্যায়ক্রমে শুরু হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়ার উপ-পরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ^াস জানান, সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সব কৃষককে সহযোগিতা দিচ্ছে। বগুড়া ছাড়া ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জামির বীজতলায় চারা তৈরি হয়েছে। এসব চারা বগুড়ার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ১৭ হাজার হেক্টরের কৃষককে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। যে এলাকায় আমন চারা রোপণের সময় অতিবাহিত হয়েছে সেখানকার কৃষক আগেভাগেই সবজি আবাদ শুরু করেছে। যে কারণে এবার বগুড়া অঞ্চলে সবজি আবাদের টার্গেট ৮শ’ হেক্টর অতিক্রম করবে। উৎপাদন হবে বেশি। মহাস্থান এলাকার কৃষক জসিম উদ্দিন জানালেন, আগস্ট মাসের মধ্যভাগের মধ্যে আমন চারা রোপণ করলে ভাল ফলন মেলে। যদিও এখন অনেক উন্নত জাতের ধান এসেছে। তারপরও আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ অনুযায়ী মহাস্থান, শিবগঞ্জ, আমতলি, চন্ডিহারা এবং বগুড়া সদরের বেশিরভাগ কৃষক সবজি আবাদ শুরু করেছে। একটি সবজি ফসল ঘরে তোলার পর আরেকটি সবজি চাষ শুরু করবে। এভাবে অনেক কৃষক আমন আবাদের বদলে কয়েকটি সবজি চাষ করবে। এই সময়ে সবজি মাঠে আছে ফুলকপি,বাঁধাকপি (পাতাকপি), মুলা, পালংশাক, লালশাক। এর পর আলু, টম্যাটো, করলা, ঢেঁড়শ, সিম, বরবটি, চিচিঙ্গা ও অন্যান্য সবজি আবাদ হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জানালেন,একটা সময় অঞ্চলভিত্তিক ফসল ফলত। একবিংশ শতকে উন্নতজাতের ফসলের অগ্রযাত্রায় নানাভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। আবাদের ধরন যেমন পাল্টে গেছে তেমনই ফসলের বহুমুখী জাত এসেছে। যেমন অতীতে পেয়ারার (স্থানীয়ভাবে বলা হয় শবরি) স্বাদ ছিল কিন্তু বর্তমানের পেয়ারার স্বাদ পাল্টেছে। পেয়ারার ভেতরের বীজ কম। আকারে বড়। অতীতে সিম মিলত শীতের আগের সময়টায়। সিমের জন্য সূর্যালোক ও শিশিরের প্রয়োজন। বর্তমানে সিম, টম্যাটো, চিচিঙ্গা, করলা প্রায় সকল মৌসুমেই ফলে। কৃষক প্রায়োগিক অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজেরাই মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। বগুড়ার শেরপুর ও ধুনট এলাকায় টম্যাটোর আবাদ ভাল হয়। বগুড়ার দীঘলকান্দি এলাকার কৃষক মন্তেজার জানালেন, আমনের পাশাপাশি ১৪ শতক জমিতে সবজি চাষ করেছেন। আগামজাতের ফুলকপির ২ হাজার চারা রোপণ করেন। দুই মাসের মধ্যে এই ফুলকপি বাজারে বিক্রি করা যাবে। আশা করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৮ হাজারের বেশি পিস ফুলকপি তুলতে পারবেন। এর পরই নেমে পড়বেন আলু আবাদে। সবজি চারা নার্সারির মালিক আব্দুল আজিজ জানালেন,আগাম সবজি আবাদের দিকে লক্ষ্য রেখে একমাস আগেই চারা উৎপাদন করেছেন। প্রতিহাজার ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা বিক্রি করেন ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকায়। বগুড়া ছাড়াও দিনাজপুর,নওগাঁ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, নাটোরের লোকজন তার নার্সারির চারা কিনে নিয়ে যায়। মহাস্থানের কৃষক বদিউজ্জামান বললেন, সবজির আবাদ এই অঞ্চলে (বগুড়া) বেশি হয়। তবে কখনও কৃষক সবজির প্রকৃত দাম পায় না। ঢাকার মহাজনরা মহাস্থান থেকে কম দামে সবজি কিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্রি করে চড়া দামে।
×