ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে নদী ভাঙ্গনরোধ প্রকল্পে অনিয়ম

প্রকাশিত: ১২:০১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বরিশালে নদী ভাঙ্গনরোধ প্রকল্পে অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ২০৯ কোটি টাকা বরাদ্দে বরিশালে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ড্রেজিং করে নদীর বালু নদীতে ফেলা, পর্যাপ্ত বালুর বস্তা না ফেলাসহ ব্লক তৈরিতেও রয়েছে এ অনিয়মের অভিযোগ। প্রকল্পের সময়সীমার মধ্যে বালুর বস্তা, ব্লক ও নদী খনন করার কথা থাকলেও আদৌ তা সম্ভব কিনা এ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত পরিবারগুলোর দাবি, দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে রাক্ষসী নদীর কবলে ভিটামাটি হারিয়ে তাদের পথে বসতে হবে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ব্লক তৈরিতে অনিয়মের বিষয়টি তার নজরে এসেছে। জানা গেছে, কীর্তনখোলা নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে ২০৯ কোটি টাকা প্রকল্পের এ কাজটি শুরু হয় চলতি বছরের শুরুতে। নদীর গতিপথ ফেরাতে ৪১ লাখ ঘনমিটার বালু উত্তোলনের জন্য বরাদ্দ করা হয় নদী খনন বাবদ ৫৬ কোটি টাকা। তবে এজন্য চারদিকে বেষ্টনি দিয়ে নদীর তীরে দুটি ডাইক তৈরি করার নির্দেশনা থাকলেও ডাইক করা হয়েছে একটি। অপরটি ডাইক তৈরি না করে নদীর বালু কেটে নদীতেই ফেলছে জোডিয়াক ড্রেজিং লিমিটেডের শ্রমিকরা। খুলনা শিপইয়ার্ড থেকে সাবকন্ট্রাকে নেয়া কনফিডেন্স গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জোডিয়াক ড্রেজিং লিমিটেডের এ প্রকল্পটি ২০২০ সালের মে মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের বাকি ১৫৩ কোটি টাকা বালুর বস্তা ও ব্লকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। সূত্রমতে, ব্লকের মান নিয়েও নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ব্লক তৈরিতে যে সাইজ এবং মানের পাথর ব্যবহার করার কথা রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাও ব্যবহার না করার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিম সরদার জানান, নদীর বালু কেটে নদীতেই ফেলা হচ্ছে। এতে করে কোন সুফল পাওয়া যাবে না। তিনি আরও জানান, তাদের ঘরবাড়ি নদীর তীরে। ধীরগতিতে প্রকল্পের কাজ চলায় রাক্ষসী নদীর ভাঙ্গনে যেকোন সময় তাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে তাদের থাকতে হচ্ছে। নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, তারাই এখানে প্রথম আন্দোলন করেছেন ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য। দাবি পূরণ হয়েছে ঠিকই কিন্তু তা অপরিকল্পিত। তারা বলেন, প্রধান সড়কসহ যেখানকার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বালুর বস্তা না ফেলে অন্যপাশ দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, বালুর বস্তা ফেলতে হবে নদীর তীরের কমপক্ষে ৫০ফুট নিচ থেকে শুরু করে উপর পর্যন্ত। নতুবা নিচের দিকে ভাঙ্গতে শুরু করলে উপরের বস্তাগুলো আস্তে আস্তে নদীর তলদেশে চলে যাবে। সে নিয়মও মানছেন না ঠিকাদারের লোকজন। এমনকি ব্লক তৈরিতেও মরা পাথর এবং বড় পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে জোডিয়াক ড্রেজিং লিমিটেডের প্রকল্প প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের সিডিউল মোতাবেক তারা কাজ করছেন। নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ডাইকের বিষয়ে তিনি বলেন, আরেকটি ডাইক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু চর অনেক নিচু হওয়ার কারণে আগে ডাইকের স্থানে বালু ফেলে ওই এরিয়া উঁচু করতে হবে। নতুবা চারদিক বেষ্টনি দিয়ে ডাইক তৈরি করা সম্ভব হবে না। বালু ভরাট করেই ডাইক তৈরি করা হবে। ব্লক এবং বালুর বস্তার বিষয়ে তিনি জানান, সাবকন্ট্রাকে এগুলোর কাজ অন্য প্রতিষ্ঠান নিয়েছে। ব্লকের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরতরা জানান, ব্লক তৈরিতে যে পাথর অর্ডার করা হয়েছিল পাথর বিক্রেতা ট্রাকের উপরে তা দিয়ে ভেতরে বড় পাথর দিয়েছে। যা ফেরত দিয়ে সিডিউল অর্ডার অনুযায়ী পাথর আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বিষয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম জানান, ব্লক তৈরিতে অনিয়মের বিষয়টি তার নজরে এসেছে। তার কাছে একটি ছবিও রয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধীরগতিতে কাজ হোক, তবুও অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। ফ্রেশ পাথর আনার পর কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
×