ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে শাস্তি

ব্যাংক কর্মকর্তাদের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়া তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১১:১০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ব্যাংক কর্মকর্তাদের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়া তদন্তের নির্দেশ

শংকর কুমার দে ॥ দেশের সকল সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ইউনিটকে নজরদারি করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থের উৎসের সন্ধানের মাধ্যমে যোগান পেতে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করার কৌশল বেছে নিয়েছে জঙ্গী গোষ্ঠী। এ জন্য দেশের সকল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখার নির্দেশ দিয়ে সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের অফিস চলাকালীন তাদের চলাফেরা ও সমাজিকভাবে ওঠাবসা মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারও বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পেলে সাময়িকভাবে বরখাস্তসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) কর্মকর্তারা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে জঙ্গীবাদে তদন্ত, নজরদারি, সতর্কতাসহ আইনানুগ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ)। বেশকিছু ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীর জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে তদন্ত সংস্থা। দেশের সকল ব্যাংক কর্মকর্তাদের জঙ্গীবাদ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারও বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদে সংশ্লিষ্টতার তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে পেলে, তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। এজন্য সকল ব্যাংক কর্মীদের জঙ্গীবাদ বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় গত ২৭ জুলাই রাজধানীর রূপনগরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়া সোনালী ব্যাংক মতিঝিল শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার আহম্মদ আলীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা আলী আহম্মদের সকল ব্যাংক এ্যাকাউন্ট যাচাই-বাছাই করছে। আহম্মদ আলীর পরিবারের সকল সদস্য জঙ্গীবাদে জড়িত। বিশেষ করে তার বড় ছেলে জাকারিয়া জঙ্গী কার্যক্রম প্রচার ও দাওয়াতী কাজে একজন অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রচারণা চালাতেন জাকারিয়া। পরিবারের সদস্যরাও এ ধরনের প্রচারণার সঙ্গে জড়িত ছিল। গত ২৭ জুলাই দিবাগত রাতে রাজধানীর রূপনগরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সোনালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আহম্মদ আলী, তার স্ত্রী সালমা আহাম্মদ, মেয়ে আসমা ফেরদৌসী রিফা, ছোট ছেলে কিবরিয়া ও বড় ছেলে জাকারিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। পরে জাকারিয়ার দেয়া তথ্য থেকে শামসু নামে আনসার আল ইসলামের আরেক সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার করে। জাকারিয়ার সঙ্গে আনসার আল ইসলামের পলাতক নেতা মেজর (চাকরিচ্যুত) জিয়ার যোগাযোগ ছিল কিনা- সে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা জানান, আহাম্মদ আলীর ছেলে জাকারিয়া অনলাইনে আনসার আল ইসলামের প্রচারণা চালাতেন। রূপনগরের ওই বাড়িতে অবস্থান করে তিনি জঙ্গী প্রচারণা চালাতেন। বিষয়টি জাকারিয়ার বাবা, মা ও ভাই বোনদের সম্মতি ছিল। আহম্মদ আলী জঙ্গী কার্যক্রমে কি পরিমাণ টাকা ব্যয় করেছেন-তা এখনও জানা যায়নি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জাকারিয়ার চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে আহম্মদ আলী পরিবারসহ জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হয়েছে। এই পরিবার থেকে অনলাইনে আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রচারণা চালানো হচ্ছিল বলে তদন্তকারী সংস্থার ওই কর্মকর্তার দাবি। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে আজিমপুরে একটি জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম ইউনিট অভিযান চালালে আনসার আল ইসলামের অর্থের যোগানদাতা ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সাবেক এভিপি তানভীর কাদেরী গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, নুরুল ইসলাম ওরফে মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি এবং বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেটের স্ত্রী শায়লা আফরিন। গ্রেফতারের পর খাদিজা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তার স্বামী ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা পেয়েছিলেন। এই টাকা তার স্বামী আনসার আল ইসলামের পেছনে ব্যয় করেন। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যাংকার তানভীর কাদের ও তার পরিবারের পর সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা আহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পেয়ে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা। পুলিশের এ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গী সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যানুযায়ী তারা ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জঙ্গীবাদে ভিড়ানোর দিকে নজর দিয়েছে। কারণ জঙ্গী সদস্যদের জঙ্গীবাদ কার্যক্রম চালাতে বিশাল অর্থের যোগানের প্রয়োজন হয়। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জঙ্গীবাদে ভিড়িয়ে জঙ্গী সংগঠনগুলোর অর্থের উৎসের সন্ধান করা হচ্ছে। জঙ্গীবাদ তৎপরতা চালাতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের বেআইনী কার্যকলাপের মাধ্যমেও অর্থের সংস্থান করে আসছে জঙ্গী গোষ্ঠী। এমনকি আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতি করেও তারা অর্থের সংস্থান করার অভিযোগে জঙ্গীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন আবার ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতে জঙ্গীবাদে ভিড়াতে না পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সকল ব্যংকের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তার দাবি।
×