ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:১০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শহর ঢাকার বুকে অনেক ক্ষত জমা হয়ে আছে। কিন্তু ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান বেকারিতে যে জঙ্গী হামলা হয়েছিল, তা হয়তো কোনদিনই ভোলা যাবে না। মানবিক মানুষের শরীর আত্মা সেদিন একসঙ্গে কেঁপে ওঠেছিল। এত চেনা শহর অথচ ভীষণ অচেনা একটি রাত। সেই রাতে ধর্মের ঠিকাদাররা খুন করেছিল বাইশ জন নির্দোষ নিরপরাধ মানুষকে। নারী-পুরুষের কাটা শরীর ছটফট করতে থাকে। রক্তে ভেসে যায় রেস্তরাঁর মেঝে। আরও বেদনার শোনায় যখন জানা যায়, নিহতদের বেশিরভাগই বিদেশী নাগরিক। অতিথিপরায়ন বাঙালীর দেশে তারা রাতের খাবার শেষ করতে পারেননি। খাবার সামনে রেখে টেবিলেই নিহত হন। ভয়ঙ্কর হামলায় নিহতদের বড় অংশটি ছিল জাপানী নাগরিক। উন্নয়ন সহযোগী বন্ধু দেশের দুই নারীসহ সাতজন নির্মম মৃত্যুর শিকার হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো। তালিকার ছয়জনই ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সমীক্ষার কাজ করছিলেন তারা। বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি সিদ্ধান্ত নামগুলোকে নতুন করে সামনে এনেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, জাপানের এই সাত ব্যক্তির নামে মেট্রোরেলের সাতটি স্টেশনের নামকরণ করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত বুধবার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? রাজধানীর মানবিক মানুষ মাত্রই সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলছেন, নিহতদের তো আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কলঙ্ক দাগটিও গা থেকে মুছতে পারবে না ঢাকা। তবে জঙ্গীরা যাদের হত্যা করেছিল তাদের নামে মেট্রোরেলের স্টেশন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান আরও একবার স্পষ্ট করল। নিহতদের প্রতি ভালবাসা আর স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানালো। মেরে ফেলা হলেও মানুষগুলো আর হারিয়ে যাবে না। এভাবে খুনীদের বিরুদ্ধে আর মানবিক সমাজের পক্ষে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে যাবে মেট্রোরেলের স্টেশনগুলো। এ প্রসঙ্গে আরও উল্লেখ করা চাই, জাপানেরই অর্থায়নেই এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের কাজ। এর প্রস্তাবিত স্টেশন সংখ্যা ১৬। স্টেশনগুলো হচ্ছে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও হোটেল, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা। যে কোন সাতটি স্টেশনের নামকরণ করা হবে জাপানী বন্ধুদের নামে। আগামী ২০২১ সালে মেট্রোরেলের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর তা হলে প্রতি ৪ মিনিট পরপর ১ হাজার ৮০০ যাত্রী নিয়ে চলবে মেট্রোরেল। ঘণ্টায় চলাচল করবে প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী। প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের কম। এবার একটি মন্দ খবর। না দিলেই নয়। পৃথিবীর বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় আবারও নাম এসেছে ঢাকার। বাংলাদেশের রাজধানী শহর এ তালিকার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। নিয়মিত গবেষণা শেষে গত মঙ্গলবার ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এই তথ্য প্রকাশ করে। এতে কোন শহর কতটা বসবাসের উপযোগী তা বিভিন্ন সূচকের আলোকে তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ছিল স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামোসহ বেশ কয়েকটি ইস্যু। ইউনিট মোট ১৪০টি শহরের নাম প্রকাশ করে। তালিকায় ১৩৮তম স্থানে খুঁজে পাওয়া যায় ঢাকাকে। ঢাকার নিচে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কো এবং তার পর নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোস। অন্যদিকে গত বছরের মতো বাসযোগ্য শহরের তালিকায় এবারও শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। তৃতীয় স্থানে সিডনি। চতুর্থ হয়েছে জাপানের ওসাকা। আর পঞ্চম অবস্থানে কানাডার ক্যালিগরি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের শহর দিল্লী ও মুম্বাই যথাক্রমে ১১৮ ও ১১৯তম স্থানে দখল করেছে। পাকিস্তানের করাচিও নষ্ট শহরের তালিকায়, দশম অবস্থানে। শেষ করা যাক শরৎ উৎসবের কথা জানিয়ে। বেশ কিছুদিন আগে শুরু হলেও, আজ শুক্রবার চারুকলার বকুল তলায় বরণ করে নেয়া হবে প্রিয় ঋতু শরতকে। দিনব্যাপী উৎসব আয়োজন করবে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। গান নাচ কবিতায় চলবে শরত বন্দনা। প্রভাতী অনুষ্ঠানে যোগ দিন। না পারলে বিকেলে যান। ঘুরে আসুন। ভাল লাগবে।
×