ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দরে ভিআইপি নিরাপত্তা তল্লাশি শিথিলের প্রস্তাব ফের নাকচ

প্রকাশিত: ১১:১৫, ২৯ আগস্ট ২০১৯

বিমানবন্দরে ভিআইপি নিরাপত্তা তল্লাশি শিথিলের প্রস্তাব ফের নাকচ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিমানবন্দরে ভিআইপিদের নিরাপত্তা চেকিং শিথিল করার প্রস্তাব আবারও নাকচ করা হয়েছে। দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বিচারপতি, সংসদ সদস্য, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীদের আলাদা পরিবেশে চেকআপে কিছুটা ছাড় দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তারা বলেছে, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) আইন ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে এ ধরনের কোন ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। বুধবার সংসদ ভবনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এতে কমিটির সভাপতি র, আ, ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, তানভীর ইমাম, আশেক উলাহ রফিক ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার অংশ নেন। বৈঠকে বেবিচকের সহকারী পরিচালক (অর্থবিভাগ) মোহাম্মদ মোস্তফিজুর রহমান ও পরিচালক (পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ সাঈদ হোসাইন মুরাদী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করা হয়। এর আগে ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে বিচারপতি, সংসদ সদস্য, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীদের আলাদা পরিবেশে চেকআপে ‘কিছুটা’ ছাড় দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এ নিয়ে পরে সমালোচনার মুখে পরে কমিটি। এমনকি দেশের বিমানবন্দরগুলোতে সংসদ সদস্যসহ ভিআইপিদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা তল্লাশি শিথিল করতে কমিটির অনুরোধ অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তা অগ্রাহ্য করার আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বেবিচকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হওয়ায় বাংলাদেশের সব বিমানবন্দর বিশেষত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আইসিএও প্রণীত এনেক্স-১৭ অনুযায়ী প্রিভেন্টিভ সিকিউরিটি মেজার নেয়া বাধ্যতামূলক। আইসিএওর আইন অনুযাযী প্রতিটি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশের আগে সিকিউরিটি স্ক্রিনিং করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র প্রতিপালন করে। এছাড়া ওই আইনের বিভিন্ন ধারা অনুযাযী বিমানবন্দরে এয়ার সাইডে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিমানের যাত্রী ও কেবিন চেকিং, হোল্ড ব্যাগেজ স্ক্রিনিং কার্গো, মেইল ও অন্য পণ্যের নিরাপত্তা চেকিং এবং বিশেষ ধরনের যাত্রীদের জন্য অনুচ্ছেদ ৪.৭ অনুসরণ করা হয়। আইকাও-এর রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের জন্য ন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশান সিকিউরিটি প্রোগ্রাম বা এনসিএএসপি প্রণীত হয় এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এনসিএএসপি অনুসরণ করে নিরাপত্তা কার্যক্রম গ্রহণ করে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সুনির্দিষ্ট সরকারী নির্দেশনার অভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তা চেকিংয়ে নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায়ই বিব্রত হচ্ছেন। যদিও এনসিএএসপি অনুযায়ী কেউই নিরাপত্তা চেকিংয়ের আওতামুক্ত নন। ন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি প্রোগ্রামের নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তা তল্লাশি হতে রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার, প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার, জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিরাপত্তা চেকিং থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই আইনের আওতায় জাতির জনকের পরিবারের সদস্যরা, রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রপতি পরিবারের সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা, স্পীকার, প্রধান বিচারপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঘোষিত কোন ব্যক্তি নিরাপত্তা চেকিংয়ের বাইরে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী এক্সাম্পট ফ্রম সিকিউরিটি স্ক্রিনিংয়ের আওতাভুক্ত ব্যক্তির বাইরে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে কোন ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। তবে ওই তালিকার বাইরে সরকার কর্তৃক সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রদান করা হলে তা প্রতিপালন করা হবে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কমিটির সভাপতিকে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তবে কমিটির সিনিয়র সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বেবিচক আমাদের আন্তর্জাতিক আইন দেখিয়েছে। বলেছে নিরাপত্তার কথাও। এজন্য সংসদীয় কমিটির সদস্যরা তা মেনে নিয়েছি।
×