ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৩ আগস্ট ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

আগস্ট বড় বেদনার। চির শোকের। ক্ষোভের। মাসটা যেন শেষ হতে চায় না। কাঁদো বাঙালী কাঁদো। কেঁদেই চলেছে বাঙালী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি রক্তে ভেসে গিয়েছিল সেদিন। প্রতি বছরের মতো এবারও দুঃসহ যত স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে আগস্ট। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি বারবার এই মাসটিকেই বেছে নিয়েছে। গত বুধবার ছিল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে আবারও রক্তাক্ত হয় ঢাকার মাটি। এবার বেছে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউকে। সেখানে তখন বহু মানুষের সমাবেশ। এমন সমাবেশে একটি ঢিল ছুড়ে মারলেও সব এলোমেলো হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ গ্রেনেড ছোড়া হলো! মূল টার্গেট ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে ১৯৭৫ সালের অসমাপ্ত মিশন সম্পন্ন করতে চেয়েছিল খুনীরা। সেটি হয়নি। তবে ২৪ জনের প্রাণ গেছে। রক্তের মধ্যে গড়াগড়ি করতে করতে করুণ মৃত্যু হয়েছে তাদের। জীবিতদের কারও হাত ওড়ে গেছে। কেউ পা হারিয়েছেন। শরীরে ক্ষত, মনে গভীর চোট নিয়ে বেঁচে আছেন আরও অনেকে। বুধবার জীবিত মৃত এই মানুষগুলোর কথা স্মরণ করেছে ঢাকাবাসী। নানা আয়োজন থেকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা জানোনো হয়। একইসঙ্গে মানুষ খুনের ঘৃণ্য রাজনীতিকে জানানো হয় ধিক্কার। আর এখন আগস্ট শেষ হওয়ার অপেক্ষা। আগস্ট শেষ হবে। কিন্তু আগস্টের কুশীলবরা কি বদলাবে এতটুকু? ঈদ শেষে মোটামুটি সচল হয়েছে ঢাকা। ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাওয়া মানুষজন অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফিরেছেন। বাকিরা ফিরছেন। অনেক আগেই সরকারী অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হয়ে গিয়েছিল। তার পর খুলেছে রাজধানীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে কর্মচঞ্চল ব্যস্ত নগরী। যানজট এখনও প্রকট হয়নি। তবে গণপরিবহনের সংখ্যা বেড়েছে। এভাবে ধীরে ধীরে সামনে আসছে চেনা ছবি। ডেঙ্গু প্রসঙ্গে আসা যাক। ঢাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতির খুব উন্নতি না হলেও বড় অবনতি ঘটেনি। ঈদের আগে অনেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যাওয়া মানুষজনের মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। বাস্তবে অবস্থা তত খারাপ হয়নি। তবে এখনও ঢাকায় নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আসছে মৃত্যুর খবরও। এ অবস্থায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এডিস মশার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। চলছে নানা কর্মকা-। এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি পরিচ্ছন্ন ঢাকার দাবিকে জোরালো করেছে। গোটা শহরটি নোংরা। আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এত মানুষের শহর। প্রতিনিয়ত ময়লা হচ্ছে। সে তুলনায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নেই বললেই চলে। শহরের শিক্ষিত মানুষেরা নিজেদের বাড়ি সুন্দর রাখছেন। বাইরে এলেই ভুলে যাচ্ছেন সব দায়িত্ব। কর্তৃপক্ষ বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। সারা শহরের দেয়ালে পোস্টার। ফ্লাইওভারের পিলারগুলোর দিকে তাকানো যায় না। সিনেমার পোস্টার, রাজনৈতিক দলের উদ্ভট প্রচারই দেখতে হয় শুধু। আর এখানে ওখানে মূর্ত বিসর্জনের ছবি তো যারপরনাই পুরনো। আরও কতভাবে যে ঢাকাকে নোংরা করা হচ্ছে। সবার চোখের সামনে ঘটছে এসব। ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই। মন খারাপ হচ্ছে না কারও। শুভবোধ পালিয়েছে এই শহর থেকে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? কে দেবে উত্তর?
×