ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১১ আগস্ট ২০১৯

 কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ কাশ্মীর ইস্যুতে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। ঈদের ডামাডোলের সুযোগে জঙ্গী ছাড়াও কোন কোন উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা সীমান্তপথে ভারত হয়ে কাশ্মীরে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। তারা কাশ্মীরের মুসলমানদের পক্ষে কাজ করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করছে। উগ্রবাদী এসব গোষ্ঠীকে নানাভাবে মদদ যোগাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। তারা কাশ্মীর ইস্যু পুঁজি করে দেশে আন্দোলন গড়ে তুলতে গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে থাকা কূটনৈতিক সুসম্পর্ক নষ্ট করতেই এমন অপতৎপরতা শুরু করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারত সরকার সম্প্রতি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত করে কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় শাসনের আইন জারি করে। এ সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিন্ন ও কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করে। ইসলামাবাদ ভারতের হাইকমিশনার বহিষ্কার করলে নয়াদিল্লীও পাক হাইকমিশনারকে বহিষ্কার করে। এই নিয়ে পাকিস্তান ও কাশ্মীরের টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কাশ্মীরে কারফিউ চলছে। ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যে সংবিধান প্রদত্ত স্বীকৃতি বিলুপ্ত করায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কাশ্মীরের এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দলের ভেতরে বিশেষ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কাশ্মীর ইস্যুতে গত ৪ আগস্ট ঢাকায় অন্তত এক শ’ ব্যক্তি রাজপথে নেমে মাত্র কয়েক মিনিটের একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলকারীরা কাশ্মীর ইস্যুতে কাশ্মীরবাসীর পক্ষ নিয়ে স্লোগান দেয়। তারা ভারত সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশের অধিকাংশ ইসলামী ও সমমনা দল গোপনে তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। তারা সংগঠিত হয়ে কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশে প্রতিবাদ হিসেবে মিছিল সভা সমাবেশের চেষ্টা করছে। যদিও পরে তারা আর কাশ্মীর ইস্যুতে রাজপথে নামেনি, তবে তারা রাজপথে নামার পরিকল্পনা থেকে সরে যায়নি। তারা ভেতরে ভেতরে ইসলামের দোহাই দিয়ে কট্টর ইসলামী মতবাদে বিশ্বাসী দলগুলোর নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে। তারা তাদের সদস্যদের সীমান্তপথে ভারত হয়ে কাশ্মীরে গিয়ে মুসলমানদের পক্ষে কাজ করতে প্ররোচিত করছে। এই ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সুসম্পর্কের অবনতি ঘটানোর চক্রান্তও চালাচ্ছে তারা। বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ থাকার দাবি করে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশেও নানা ধরনের অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে একটি গোষ্ঠী। বিশেষ এই গোষ্ঠীর সঙ্গে রয়েছে তাদের সমমনা কিছু ইসলামী দল। কিছু ইসলামী দলের শীর্ষস্থানীয় কতিপয় নেতা মুসলমান অধ্যুষিত কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশেও ব্যাপক তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে। কাশ্মীর ইস্যুতে তৎপর থাকা ব্যক্তিদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করে শুক্রবার দেশে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, ভারত সরকার নিরাপত্তার কারণে পুরো সীমান্ত জুড়েই কাঁটাতারের বেড়া দিতে চায়। সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপ করার বিষয়ে সে দেশের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকালে সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে বাংলাদেশকে ভারতের তরফ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র মতে, কাশ্মীর ইস্যু ছাড়াও ঈদ উপলক্ষ করে দেশের অভ্যন্তরে পলাতক জঙ্গীরা সীমান্তপথে পালানোর চেষ্টা করতে পারে। আবার বিদেশে পলাতক জঙ্গী-সন্ত্রাসীরাও দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারে। জঙ্গীদের গ্রেফতার করতে ভারত-বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথ্য আদান-প্রদানের ভিত্তিতে যার যার দেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যে পলাতক জঙ্গী সন্ত্রাসীদের ছবিসহ তালিকা হাতবদল হয়েছে। কাশ্মীর ইস্যুর পর অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকিয়ে এবং তাদের গ্রেফতার করতে সব স্থলসীমান্তে রেডএলার্ট জারি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তরফ থেকে জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, সিআইডি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটকে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম (সংঘবদ্ধ অপরাধ) নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, জালমুদ্রার কারবারি এবং এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গী অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযানের মাত্রা সামনে আরও বাড়বে।
×