ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীরের প্রকৃত অবস্থা জানা যাচ্ছে না, ছড়াচ্ছে গুজব

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১০ আগস্ট ২০১৯

 কাশ্মীরের প্রকৃত অবস্থা জানা যাচ্ছে না, ছড়াচ্ছে গুজব

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ভারতের বাকি অংশ এবং পুরো বিশ্ব থেকে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। যার ফলে সেখানকার প্রকৃত অবস্থা জানা যাচ্ছে না। এ সুযোগে ছড়াচ্ছে নানা গুজব। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে গত বুধবার বিবিসি বাংলার একজন প্রতিনিধি জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে যান। তার বর্ণনায় রাতারাতি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া কাশ্মীরের খণ্ডচিত্র উঠে এসেছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এমন কোন পদক্ষেপ না নিতেও দেশ দুটিকে অনুরোধ জানিয়েছেন। গুতেরেস তার আহ্বানে সিমলা চুক্তির কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ওই চুক্তিতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই কাশ্মীরবিরোধ মীমাংসার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিবিসি ও এনডিটিভির। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর বিক্ষোভ ঠেকাতে কাশ্মীরের প্রায় তিন শ’ রাজনীতিক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে আটক বা গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। গুপকার রোড, যেখানে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক থাকেন সেখানে কাউকে ঢুকতেই দেয়া হচ্ছে না। ডাল লেকের ধারে গবর্নর হাউসের দিকেও কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। গুজবের শহর হয়ে উঠেছে শ্রীনগর। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও শ্রীনগরের কোথাও বিক্ষোভ দেখা যায়নি। বলা হচ্ছে, দিনের বেলায় কার্ফু থাকায় রাতের বেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। পাকিস্তানের দৈনিক ডন শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিং হাসপাতলের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে শুক্রবার জানায়, ছররা গুলি ও রাবার বুলেটে আহত অন্তত ৫০ জন তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কেউ কেউ বেরামিতে ১০ হাজার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং লোকজন পথে নেমে বিক্ষোভ করছে। কার্ফু এক সময় শেষ করতে হবে। তখন কি পরিস্থিতি হবে সেটা বলা মুশকিল। গত সপ্তাহে ভারতের পার্লামেন্ট তাদের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে যে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল তা তুলে নিয়ে ওই এলাকাটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার কয়েকদিন পর জাতিসংঘের মহাসচিব বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, মহাসচিব জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি উদ্বেগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি ১৯৭২ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ক চুক্তির কথা স্মরণ করেছেন, যে চুক্তিটি সিমলা চুক্তি নামে পরিচিত; সেখানে জাতিসংঘের সনদ অনুসারে শান্তিপূর্ণ উপায়ে জম্মু ও কাশ্মীরের চূড়ান্ত মর্যাদা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতায় গুতেরেস জাতিসংঘ কিংবা তার নিজের নাম প্রস্তাব করেননি। জাতিসংঘ এর আগে কাশ্মীরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছিল। কাশ্মীরে সর্বশেষ বড় ধরনের ধরপাকড় অভিযান চালানো হয়েছিল ২০১৬ সালে; ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে জনপ্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বুরহান ওয়ানি নিহত হওয়ার পর। সে সময় কয়েক মাস ধরে কাশ্মীরে ভারতবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, ধরপাকড় তখনও হয়েছে। তবে এবার ভারতীয় বাহিনী কেবল বিদ্রোহীদের গ্রেফতার করেই থামছে না; স্বায়ত্তশাসনপন্থী অবস্থানে থাকা ভারতপন্থী রাজনীতিকদেরও সমর্থকসহ গ্রেফতার করছে। মোদি সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে কার্ফুর মধ্যেই ফুঁসছে সেখানকার জনসাধারণ। ভারতের সরাসরি শাসন মানতে নারাজ ‘বিশেষ মর্যাদা’ হারানো এই উপত্যকা। তবে পরিস্থিতিকে আড়াল করতে প্রবলভাবে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। সেখানে সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে গত সোমবার থেকে কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরভিত্তিক অধিকাংশ ইংরেজী ও উর্দু ভাষার সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে না। এ ঘটনায় হতাশ সাংবাদিকরা পরিস্থিতিকে ‘অভূতপূর্ব’ আখ্যা দিয়েছেন। তাদের লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। কাশ্মীরের ভেতরেই অদৃশ্য কাশ্মীর হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীর খুব বেশি দিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকবে না বলে কাশ্মীরবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কাশ্মীরে শীঘ্রই স্থানীয় বিধানসভার জন্য নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। মোদি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের জনগণই তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সেখানে আগের মতো মুখ্যমন্ত্রীও থাকবে। ওই অঞ্চলে একবার শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এলেই জম্মু-কাশ্মীর আবারও পুরো রাজ্য হয়ে যাবে। এরপরই প্রথম ভাষণে সরকারের এ সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা জাতিকে দিলেন। ৩৭০ ধারা থাকায় এত দিন জম্মু-কাশ্মীরের কী ক্ষতি হয়েছে, এখন এর বিলুপ্তিতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় রাজ্যবাসীর কি লাভ হবে সে সব প্রতিশ্রুতিরই কথা তুলে ধরেছেন জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখবাসীর সামনে। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, অন্ধকার যুগ থেকে আলোর পথে যাচ্ছে কাশ্মীর উপত্যকা। ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার ॥ এদিকে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের জম্মু জেলার পৌরসভাগুলো থেকে জারিকৃত ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুক্রবার জম্মুর ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুষমা চৌহানের সই ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। আজ শনিবার থেকে এখানকার সব স্কুল, কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে। এদিন সকালে কাশ্মীরে আংশিকভাবে ফোন ও ইন্টারনেট সেবা এবং জুমার নামাজের আগে রাস্তাঘাটে চলাচল সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা হয়। ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতির নির্দেশ জারির মাধ্যমে সোমবার ভারত সরকার দেশটির সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করে।
×