ভারতের মোদি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর চলমান ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকাকে একটি খোলা গারদে পরিণত করেছে দিল্লী। সেখানকার ৫০০ জনের বেশি রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও স্বাধীনতাকামী নেতাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। গত রবিবার থেকে কাশ্মীরের ইন্টারনেট পরিষেবা, টেলিফোন লাইন কেটে দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-ল থেকে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে মোদি সরকার। এসব বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। খবর বিবিসি, এনডিটিভি, পিটিআই ও ডন অনলাইনের।
৭০ বছর পর কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া বিষয়ে মোদি সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে আগে কিছুই জানায়নি বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর স্বীকার করেছে। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এ বিষয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দাবি করেছিলেন যে, কাশ্মীর প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই অবহিত করা হয়েছিল। এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা এলিস ওয়েলস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কাশ্মীর ইস্যুতে মোদি সরকারের নেয়া পদক্ষেপের ওপর পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রাখছে। এ বিষয়ে আমরা আগে কিছুই জানতাম না। পাকিস্তান ভারতের দূতকে ইসলামাবাদ থেকে বহিষ্কারের কয়েক ঘণ্টা পর ওয়াশিংটন এই ধরনের মন্তব্য করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অত্যন্ত প্রভাবশালী মুখপাত্র এলিস ওয়েলস পিটিআইয়ের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এ সময় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যাসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নিরসনে পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ চিরবৈরী এই প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার প্রস্তাব দেন ওই মার্কিন কর্মকর্তা। এ সময় দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক উত্তেজনা রোধে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে জরুরী আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া কাশ্মীরের সাবেক তিন মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক রাজনৈতিক ও স্বাধীনতাকামী নেতাকে আটক, ইন্টারনেট ও টেলিফোন সেবা বন্ধ করাসহ পুরো কাশ্মীর উপত্যকার থমথমে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওয়াশিংটন। জাতিসংঘ মহাসবি আন্তোনিও গুতেরেসের মানবাধিকার বিষয়ক মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতির ওপর একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেন, কাশ্মীরী জনতার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এখানে ভিন্নমত পোষণকারীদের আটকে রাখা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে। এসব বিষয়ে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন।
এদিকে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন, আকসাই কাশ্মীর নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে দিল্লীর মতপার্থক্য, একই সঙ্গে জাতিসংঘের উদ্বেগ, যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কূটনীতিকদের সামনে পাক রাষ্ট্রদূত মালিয়া লোধির ব্রিফিং ও আসন্ন জাতিসংঘ বৈঠকে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে অবস্থান নিতে পারে আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে দিল্লী। দেশটির একাধিক সূত্র বিষয়টিকে কূটনৈতিক চাপ হিসেবে দেখছে। ভারতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, লাদাখ নিয়ে বেজিং ও দিল্লীর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ফলে ভারতের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পাক-ভারত বিবাদে তারা পক্ষ নেবে না। কিন্তু চীনের স্বার্থে আঘাত লাগলে তা সহ্য করা হবে না। এর উত্তরে ভারত বলেছে, ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করে না। আমরা আশা করি, অন্য দেশও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করবে না। ভারতের কূটনীতিকদের একাংশের মতে, সামনেই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। তাতে ভারতের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার মতো বিষয় হাতে পেয়েছে পাকিস্তান। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরানোর সাহায্যের বদলে কাশ্মীর প্রসঙ্গে সমর্থন পেতে পারে তারা। ফলে চাপে পড়তে পারে ভারত।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: