ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মসজিদের ইমামসহ ছয়জন গ্রেফতার

এবার ঝাড়ফুঁকের কথা বলে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ৮ আগস্ট ২০১৯

এবার ঝাড়ফুঁকের কথা বলে ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ ফতুল্লার উত্তর চাষাঢ়ার চাঁনমারী এলাকায় এবার মসজিদের এক ইমামের বিরুদ্ধে ঝাড়ফুঁক দেয়ার কথা বলে ৮ বছরের এক শিশু মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ইমাম মোঃ ফজলুল রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম (৪৫) কে র‌্যাব-১১ সদস্যরা বুধবার সকাল ৬টায় গ্রেফতার করেছে। ফজলুল রহমান চাঁদমারী বায়তুল হাফেজ জামে মসজিদের ইমাম। ফজলুল রহমান নেত্রকোনার কেন্দুয়ার সরাপাড়া এলাকার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে। ওই শিশু ও তার বাবাকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ করার চেষ্টা চালানো অভিযোগে মোঃ রমজান আলী, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি, মোঃ মোতাহার হোসেন ও মোঃ শরিফ হোসেন নামে ইমামের ৫ সহযোগীকেও গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১ সদস্যরা। বুধবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর র‌্যাব-১১এর প্রধান কার্যালয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান। র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক গণমাধ্যমকে জানান, অভিযুক্ত ইমাম ফজলুর রহমান র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিশুকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া অফিসার) মোঃ আলেপ উদ্দিন ও সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মশিউর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী শমসের উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় বোরকা পরে এক ব্যক্তি র‌্যাব-১১ অফিসে এসে অভিযোগ দেন তার মেয়ে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ নগরীর ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মেয়েকে মসজিদের এক ইমাম ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের পর ইমামের অনুসারীরা তার মেয়েকে ও তাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার হাসপাতালে গিয়ে খুঁজছে। পরে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যায় র‌্যাবের সদস্যরা। পরে ধর্ষণের শিকার শিশু ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে দুই দিনের প্রচেষ্টায় বুধবার সকালে ওই ধর্ষক ইমাম মোঃ ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ইমামের ৫ সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার শিশুটি বয়স ৮ বছর। সে মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। শিশুটি রাতের বেলায় দুঃস্বপ্ন দেখে কান্না কাটি করত। বিভিন্ন প্রকার কবিরাজি চিকিৎসা করে ভাল না হওয়ায় ওই শিশুর বাবা জানতে পারে যে, অভিযুক্ত ইমাম মোঃ ফজলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ঝাড়ফুঁক ও পানি পড়া দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ওই শিশুর বাবা তার মেয়েকে এর আগে ২ থেকে ৩ বার ধর্ষক ফজলুর রহমানের কাছে ঝাড়ফুঁক করিয়ে নেয়। তারপরও তেমন উপকার না হওয়ায় ধর্ষক ফজলুর রহমান ওই শিশুদের বাসায় গিয়ে ‘বাড়ি বন্দী’ নামক চিকিৎসা দিয়ে আসে। পরে ঘটনার আগের দিন মাগরিবের সময় ওই শিশুর বাবা ধর্ষক ফজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে মেয়ের চিকিৎসার বিষয়ে আসতে চাইলে সে পরের দিন ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে আসতে বলে। কথা অনুযায়ী পরের দিন সকালে ওই শিশুর বাবা তার মেয়ে শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে চলে আসে। ফজরের নামাজের পর ধর্ষক শিশুটি তার বাবাকে নিয়ে মসজিদের তৃতীয় তলায় ইমামের বেডরুমে নিয়ে যায়। এরপর হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে ওই শিশুর বাবাকে ভোর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেয়। ওই সময় দোকানপাট খোলা না থাকায় শিশুটির বাবা কোনভাবেই মোমবাতি ও আগরবাতি কিনতে পারছিলেন না। এরমধ্যে সময় ক্ষেপণ করার জন্য ধর্ষক ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে ১টি পান আনতে বলে ও মসজিদের মোয়াজ্জিনকে ফোন করে নিচের গেটে তালা মারতে বলে। ভিকটিমের বাবা ফিরে আসতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেয়। এর মাঝে শিশুটির দুই হাত পেছনে বেঁধে ও মুখে টেপ মেরে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়। এরপরে শিশুটির গলায় ছুরি ধরে তার বাবা মাকে না বলার হুমকি দেয় এবং বললে জবাই করে ফেলবে বলে হুঁশিয়ার করে। শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে তাড়াহুড়া করে তার বাবাকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয়। এর পরে শিশুটি বাসায় গিয়ে তার বাবা মাকে সবকিছু খুলে বলে। এক পর্যায়ে শিশুটি ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ভুক্তভোগী পরিবারটি শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে এসে বিচার দিলে মসজিদ কমিটির কিছুসংখ্যক লোক ও আশপাশের ধর্ষকের কিছু ভক্ত মিলে সেখানেও শিশু ও পরিবারটিকে নানাভাবে হয়রানি করে। ধর্ষক ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যাতে ভুক্তভোগী পরিবারটি থানা কিংবা হাসপাতালে যেতে না পারে। এরপর শিশুটির শারীরিক অবস্থা আরও অবনহিত হলে শিশুটিকে নিয়ে শিশুটির পরিবারটি নারায়ণগঞ্জের জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে গোপনে ভর্তি করায়। ধর্ষক ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে অপহরণ করার উদ্দেশে কয়েক দফায় চেষ্টা চালায়। হাসপাতালে ধর্ষকের অনুসারীরা ভয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রেখে শিশুটির বাবা মাকে দীর্ঘসময় ধরে হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের নার্সের বোরকা পরে র‌্যাব অফিসে এসে অভিযোগ দেয়। নড়াইলে ৬ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ১ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নড়াইল থেকে জানান, লোহাগড়া উপজেলার পাঁচুড়িয়া গ্রামে ছয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে আকরাম শেখকে (৬০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পাঁচুড়িয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর বাবা বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় আকরাম শেখের নামে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ও ভুক্তভোগী শিশুর মা জানান, চটপটি খাওয়ানোর কথা বলে এবং ১০ টাকা হাতে দিয়ে শিশু শ্রেণীতে পড়ুয়া তার মেয়েকে মঙ্গলবার দুপুরে পাঁচুড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশের বাগানে নিয়ে আকরাম শেখ ধর্ষণ করে। অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ শেষে দুপুরে বাড়িতে এসে মেয়ের এ অবস্থার কথা জানতে পারেন তিনি। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। এদিকে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রিপন কুমার ঘোষ বলেন, শিশুটির লজ্জাস্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্যে নড়াইল সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
×