ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৩৭০ ধারার জন্য আমি জীবন দিতেও রাজি ॥ ফারুক আব্দুল্লাহ

ভূ-স্বর্গ এখন কারাগার

প্রকাশিত: ১১:৪৮, ৮ আগস্ট ২০১৯

ভূ-স্বর্গ এখন কারাগার

কারাগারের রূপ নিয়েছে পুরো কাশ্মীর উপত্যকা। উপত্যকার সব হোটেল, অতিথিশালা, সরকারী ও বেসরকারী ভবন এই জেলখানার অংশ। নরেন্দ্র মোদি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর সেখানকার চার শ’ জনের বেশি রাজনীতিবিদ, কর্মকর্তা ও স্বাধীনতাকামী নেতাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডে। দিল্লীর নির্দেশে কাশ্মীরের সকল হোটেল, দুটি বড় অতিথিশালা চেন্তার ও হরিনিবাশ, ফরেস্ট অতিথি ভবন, সরকারী অফিসারদের কলোনিসমূহকে সাব-জেলখানায় পরিণত করা হয়েছে। রাজ্যের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ ও মেহবুবা মুফতিকে হরিনিবাশের দুটি আলাদা ভবনে আটকে রাখা হয়েছে। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান লোকসভার এমপি ডক্টর ফারুক আব্দুল্লাহ ও স্বাধীনতাকামী নেতা সৈয়দ আলী শাহ জিলানির সহযোগীদেরও আটক করা হয়েছে। অনেক চেষ্টার পর মঙ্গলবার ৯১ বছর বয়সী ফারুক আব্দুল্লাহর শরণাপন্ন হয় ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যম। এদের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ভারতের এই বর্ষিয়ান নেতা। কাশ্মীরের ‘দ্য ন্যাশনাল কনফারেন্সের এই নেতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। গৃহবন্দী অবস্থায় দরজার ওপাশ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফারুক আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, আমাকে আটক রাখা হয়েছে কিন্তু সরকার এ তথ্য বেমালুম অস্বীকার করছে। কাশ্মীরের শ্রীনগর লোকসভা আসনের এই এমপি দাবি করেন যে, তাকে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের আইন বিলোপের সময় ভোটদান ঠেকাতে মোদি সরকার এই কাজ করেছে। এ সময় ফারুক আব্দুল্লাহর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাফকাত খানকেও বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ফারুক আব্দুল্লাহকে তার বাড়িতে যাওয়া নিষেধ করা হয়েছে। এমনকি আমাকেও তার কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না। মোদি সরকারের এসব পদক্ষেপ সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে আবেগতাড়িত ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, ৩৭০ ধারার জন্য আমি জীবন দিতেও রাজি। আমি জানি না আমার সন্তান এখন কোথায় আছে। সরকার আমাকে গৃহবন্দী করে রেখেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার ফারুক আব্দুল্লাহ সম্পর্কে সংসদে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, ফারুক আব্দুল্লাহকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়নি। তবে তার (ফারুক আব্দুল্লাহ) ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। কাশ্মীরের একাধিক সূত্র জানায়, কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে আটকের সময় তাকে মাত্র দুই-তিন সেট পোশাক নেয়ার অনুমতি দেয় মোদি সরকারের আধা-সামরিক বাহিনী। মেহবুবা মুফতির দুই মেয়ে তাদের মায়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েও পাননি। ওই সূত্র আরও জানায়, সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহকে পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ওমর আব্দুল্লাহ অঝোরে কাঁদছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ প্রধান দিলবাগ সিং বলেন, প্রশাসনের অনুমতি ক্রমেই এসব রাজনৈতিক নেতাকে আটক করা হয়েছে। এর এসব নেতার শীঘ্রই জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কাশ্মীরের একাধিক সূত্র জানায়। কাশ্মীরের যেসব নেতা জ্বালাময়ী ভাষণ দিতে পারেন অথবা যাদের বক্তব্যে জনতা উদ্দীপ্ত হয়- তাদেরই আটক করা হয়েছে। তবে এসব পদক্ষেপে কাশ্মীরে জনবিক্ষোভ ঠেকানো যাবে বলে মনে করে না- এসব সূত্র। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারী কর্মচারী বলেন, মোদি সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠতে জনতা সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে। সময় আসলে তারা ঠিকই রাস্তায় নামবে। ৩৭০ ধারা বাতিল প্রসঙ্গে মঙ্গলবার ভারতীয় সংসদে দেয়া বক্তৃতায় অমিত শাহ বলেন, আমরা ভোট ব্যাংক রক্ষার জন্য সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করিনি। দেশের ভালর জন্য ৩৭০ ধারা তুলে দেয়া হয়েছে। আমরা কাশ্মীর উপত্যকার জনতার সুবিধার ও উন্নয়নের জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছি। উল্লেখ্য, সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে একটি আইন পাস করে মোদি সরকার। এই ৩৭০ ধারায় কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। ৩৭০ ধারা বলে কাশ্মীরের জন্য আলাদা পতাকা ছিল এবং কাশ্মীরে ভারতের অন্য রাজ্যের কেউ জমি কিনতে পারত না। এখন কাশ্মীরের এই আলাদা পতাকার বদলে ভারতের তিন রঙের পতাকা ও অন্য রাজ্যের লোকেরা কাশ্মীরে গিয়ে জমি কিনতে পারবে। অনেক বিশ্লেষক মোদি সরকারকে কাশ্মীরী জনগণকে ভবিষ্যতে কোণঠাসা করার একটি পাঁয়তারা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
×