ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নীলকরদের স্নেকপ্রুফ কক্ষ নাচঘর, প্রতিবাদী কৃষকের জন্য মৃত্যুকূপ

প্রকাশিত: ১১:১৫, ৮ আগস্ট ২০১৯

নীলকরদের স্নেকপ্রুফ কক্ষ নাচঘর, প্রতিবাদী কৃষকের জন্য মৃত্যুকূপ

মোরসালিন মিজান, মেহেরপুর থেকে ফিরে ----------------------------------------- বর্ষা যাই যাই করছে। বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টো রোদ। দুপুরের রোদে পুড়ে আমঝুপি পৌঁছতেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। এখানে আমবাগান তো আছেই। আরও অনেক প্রাচীন বৃক্ষ। সারি সারি বৃক্ষের ছায়া ও মায়া দুটোই অকৃত্রিম। দারুণ একটা অনুভূতি হয়। তবে নীলকুঠিতে প্রবেশ করার পর যে অনুভূতি, সেটি মিশ্র। ইংরেজ আমলের প্রতœনিদর্শন। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো বাড়ি। দেখার সময়, হ্যাঁ, একটা রোমাঞ্চ কাজ করে। একইসঙ্গে বাংলার নির্যাতিত কৃষকের কথা ভেবে শিউরে ওঠে গা। চাবুকের আঘাতে জর্জরিত কৃষক নীল চাষে বাধ্য হচ্ছেনÑ ভেতরের চোখ দিয়ে সেই ছবিটা দেখা যায় বৈকি। একই ভবন পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, বিদ্রোহ বিপ্লবের মুখে ইংরেজরা টিকতে না পারলেও টিকে আছে নীলকুঠি। মেহেরপুরের আমঝুপি গ্রামে অবস্থিত পুরনো বাড়ি ইতিহাসের দায় শোধ করছে এখন। আগামী প্রজন্মের কাছে বাঙালীর বঞ্চনার অতীত আর রুখে দাঁড়ানোর বীরগাথা তুলে ধরছে। অমূল্য প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী কৌতূহল নিয়ে বাড়িটি ঘুরে দেখছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৭৭ সালে বাংলায় সর্বপ্রথম নীলকুঠি স্থাপন করা হয়। সূচনা করেছিলেন ফরাসী নাগরিক লুই বর্মো। পরের বছর ১৭৭৮ সালে উদ্যোগী হন ইংরেজ বণিক ক্যারেল বুম। নদীয়া জেলায় নীল চাষ শুরু করেন তিনি। সেখানে নীলকুঠিও স্থাপন করেন। ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ইংরেজরা নীলকুঠি গড়ে তোলে। এসব কুঠিতে বাস করে তারা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করত। ইংরেজদের অর্থনৈতিক আগ্রাসন, অন্যায়, অত্যাচার, ষড়যন্ত্রÑ সব কিছুর সাক্ষী হয়ে ছিল এক একটি নীলকুঠি। ইতিহাসবিদদের মতে, অভিন্ন উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে ১৮১৮ থেকে ১৮২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মেহেরপুরের একাধিক স্থানে নীলকুঠি গড়ে তোলা হয়। আমঝুপি নীলকুঠি সেগুলোর অন্যতম। ইংরেজ আমলের সর্বশেষ নায়েব মোঃ দবিরউদ্দিনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, নীলকুঠি স্থাপিত হওয়ার পূর্বে এ অঞ্চলে তেমন কোন জনপদ ছিল না। সাপখুপে ভর্তি ঘন জঙ্গল সাফ করে কাজলা নদীর তীরে নীলকুঠি গড়ে তোলা হয়। ৭৭ একরের বেশি জায়গা নিয়ে কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হলেও, মূল ভবনটির অবস্থান মাঝখানে। এখনও এটি শতভাগ দৃশ্যমান। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর আমঝুপি নীলকুঠির দায়িত্ব চলে যায় মেদিনীপুরের জমিদারের হাতে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এই ভূসম্পত্তি পূর্ব পাকিস্তানের হয়। ১৯৫১ সালে জামিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে নীলকুঠি চলে যায় জেলা প্রশাসনের অধীনে। বাংলাদেশ জন্মের পর ১৯৭২ সালে ভবনটি সংরক্ষণে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরে ১৯৭৮ সালে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এর নবরূপ দান করে। নীলকুঠিতে মোট কক্ষ রয়েছে ১৫টি। কয়েকটি কক্ষ সাধারণ দর্শনার্থীদের দেখার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে। দেয়ালে টানানো ছবি ও নিদর্শনের সাহায্যে সীমিত পরিসরে তুলে ধরা হচ্ছে ইতিহাস। আমঝুপি নীলকুঠি মেহেরপুর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বৃক্ষ ঘেরা ছায়া সুনীবিড় পরিবেশ। তার মাঝখানে মোটামুটি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে নীলকুঠি। ভবনের মূল কাঠামো এখনও মজবুত। উত্তরমুখী কুঠির দৈর্ঘ্য ৩৭.৬৪ মিটার। প্রস্ত ২০.২৫ মিটার। সামনে ও পেছনের বারান্দার ছাদ নিচের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে আছে। ফলে উপরে এ্যাসবেস্টসের চমৎকার ব্যবহার দৃশ্যমান হয়। ভবনের কার্নিশে আকর্ষণীয় নক্সা করা হয়েছে। ছাদে ব্যবহার করা হয়েছে বর্গা। খরছড়ি বিশিষ্ট দরজা ও জানালার কপাটগুলো কাঠের তৈরি। সংস্কারের কোন এক পর্যায়ে নতুন করে এগুলো তৈরি করা হয়েছে বলে ধারণা দেন মহসিন। কুঠির সামনের অংশ দেখতে পুরনো স্কুল কিংবা কলেজ ভবনের মতো। অনেক দরজা জানালা। সবই বন্ধ। পেছন দিক দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেদিকে কিছুটা এগিয়ে দেখা গেল, একইরকম বন্ধ দরজা। তবে কী আজ বন্ধের দিন? দর্শনার্থীদের ঘুরে দেখার নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে? প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়ে এদিক-ওদিক তাকাতেই দুর্বল শরীরের দুই প্রবীণ সামনে এসে দাঁড়ান। বোধকরি, আশপাশেই ছিলেন তারা। খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে এসেছেন। পে-রোলে নিয়োগ পাওয়া দুই কর্মচারীর একজন মহসিন। অতি সামান্য বেতন। তবু ৩৫ বছর ধরে এখানে আছেন। তিনিই ঘুরে দেখান নীলকুঠির পুরোটা। দূর থেকে লক্ষ্য করে দেখা যায়, বাড়ির পেছনের দিকের বিন্যাস সামনের তুলনায় অনেক বেশি সুন্দর। বৈচিত্র্যপূর্ণ। ভবনের পুরনো কাঠামো এবং স্থাপত্যশৈলী এ পাশ থেকে বিশেষ চোখে পড়ে। খোলা বারান্দা যথেষ্ট লম্বা এবং প্রশস্ত। বারান্দার মাঝামাঝি স্থানে উঁচু দরজা। কাঠের কপাট খুলে দিয়ে মহসিন বললেন, আসুন ভেতরে। দেখুন। আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ ছানাভরা! নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এসেও নীলকররা ফায়ারপ্লেসের প্রয়োজন অনুভব করেছে। ডান পাশের দেয়ালে দৃশ্যমান হলো সেই ফায়ারপ্লেস। শীতপ্রধান দেশের স্থাপত্য কাঠামোতে এমনটি দেখা যায়। আর দেখা যায় বিদেশী সিনেমায়। বাংলাদেশের কোন বাড়িতে এমন ফায়ারপ্লেসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তাও বহুকাল আগে, আজ তা দেখে সত্যি অবাক হতে হয়। কক্ষটিও সাধারণ কক্ষের মতো নয়। গোলাকার। ওপরের দিকে তাকালে দুই তলার সমান উঁচু বলে মনে হয়। মেঝেতে পা পড়তেই অন্যরকম শব্দ। বোঝা হয়ে যায়, কাঠের তৈরি। মহসিন বললেন, এটি ছিল নাচঘর। দেয়ালেও তা-ই লিখে রাখা হয়েছে। মিলিয়ে নিতে কষ্ট হয় না। থিয়েটারে মঞ্চ তৈরিতে যে ধরনের মেঝে ব্যবহার করা হয়, অনেকটা সেরকম। সারাদিন নীল চাষ ও ব্যবসার নামে সাধারণ মানুষদের অত্যাচার করে রাতে নাচ গান আর মদের পার্টিতে ডুবে থাকত কোম্পানির লোকেরা। কক্ষটি তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। নাচ ঘরের অনেক দরজা। মাল্টিপল এন্ট্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পাশের কক্ষটিতে মৃত্যুকূপ, নীলকরদের বিরুদ্ধাচরণ করা প্রতিবাদী কৃষকদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। মাঝারি আকারের কক্ষে একটি টেবিল পাতা রয়েছে। চেয়ার দিয়ে ঘেরা টেবিলের ঠিক নিচে ভয়ঙ্কর সুরঙ্গ। কাঠের পাটাতন দিয়ে ঢেকে রাখার কারণে দেখা যায় না বটে। বিবরণ শুনে গায়ে কাটা দেয়। জনশ্রুতি আছে, কেউ নীল চাষে রাজি না হলে, খাজনা দিতে অপারগ হলে কিংবা অন্য কোন কারণে বিরাগভাজন হলে তাকে এখানে ধরে এনে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হতো। তরবারি দিয়ে মু-ুপাত ঘটিয়ে তা সুরঙ্গ দিয়ে নদীতে চালান করে দেয়ার কথাও শোনা যায়। কারও কারও মতে, জরুরী প্রয়োজনে এই সুরঙ্গ পথ ধরে নীলকররা সরাসরি কাজলা নদীতে অপেক্ষমাণ নৌযানে উঠে যেতে পারত। মৃত্যুকূপ পার হয়ে ডান দিকে গেলে ¯েœকপ্রুফ রুম। মানে, সাপ ঢুকতে পারবে না এমন সুরক্ষিত কক্ষ। বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত ঝোপঝাড়ের কারণে সাপের উৎপাত ছিল খুব। বিষাক্ত সাপের ছোঁবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বিশেষ বৈশিষ্ট্যম-িত ¯েœকপ্রুফ রুম তৈরি করে নীলকররা। এ রুমটি ঘিরে সবচেয়ে বেশি কৌতূহল দর্শনার্থীদের। ¯েœকপ্রুফ রুম অন্য কক্ষগুলোর তুলনায় অনেক লম্বা। বেশ প্রশস্ত। মার্বেল পাথরের তৈরি সবুজাভ মেঝে। এত মসৃণ যে, এর ওপর দিয়ে সত্যি সত্যি সাপ চলতে পারার কথা নয়। এমনকি পিঁপড়েদের চলাও মুশকিল হতে পারে। সুরক্ষিত কক্ষে ইংরেজ বেনিয়াদের গোপন বৈঠক এবং নানা ষড়যন্ত্র হতো বলেই মত ইতিহাসবিদদের। ¯েœকপ্রুফ রুমের ডান পাশে আছে শয়ন কক্ষ। এর সংলগ্ন ছোট কক্ষগুলো সাজঘর বলে জানা যায়। অর্ধবৃত্তাকার সাজঘর ইংরেজদের বিলাসী জীবন সম্পর্কে ধারণা দেয়। বাম পাশেও কয়েকটি কক্ষ রয়েছে। তবে এগুলো পরিদর্শনের কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এখানে আরও ছিল কয়েদখানা, পুরাতন রেকর্ড রুম, কাছারি ঘর ও নায়েবদের আবাসন। ছিল ঘোড়ার আস্তাবলও। কিন্তু জায়গাগুলো চিহ্নিত করা হয়নি। তবে বাইরে পেছনের অংশে এখনও আছে কবুতরের ঘর। চিঠি পাঠানোর জন্য কবুতর পুষতো নীলকররা। দুর্লভ সেই চিঠি লেখার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে নীলকুঠির শূন্য খাঁচা। বর্তমানে সাজানো কক্ষগুলোর দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ওই সময় শিল্পীদের আঁকা ছবি। ফটোগ্রাফ। এসবের সাহায্যে সময়টাকে তুলে ধরার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। আশপাশের এলাকায় প্রতœতাত্ত্বিক খনন করে পাওয়া কিছু নিদর্শন রাখা হয়েছে গ্লাস শোকেসে। সব মিলিয়ে একটা আবহ তৈরির চেষ্টা। তবে নীলকুঠি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোন গবেষণা ভবনের কোথাও চোখে পড়েনি। কৌতূহল অনেক। সে তুলনায় তথ্য উপাত্ত দুর্বল। অসম্পূর্ণ। বিচ্ছিন্নভাবে বলা। কোন কর্মকর্তা বা গাইডও নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে আমঝুপি নীলকুঠি ঘিরে যে ইতিহাস চর্চা, তারও বেশি হচ্ছে জল্পনা-কল্পনা। ঘুরতে এসে অনেকেই সরল মনে গল্প তৈরি করছেন। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা হয়েছে। বড় অংশটি কাসিমবাজার কুঠির সঙ্গে আমঝুপি নীলকুঠিকে গুলিয়ে ফেলছিল। মীর জাফর, রবার্ট ক্লাইভসহ পাঠ্য পুস্তকে পড়া চরিত্রগুলোকে এখানে আবিষ্কারের নেশা পেয়ে বসেছিল তাদের। নীলকুঠির সামনের দেয়ালে একটি শিলালিপি খুব চোখে পড়ে। সংস্কারের পর স্থাপিত শিলালিপিতেও বিকৃত এবং অনুমান নির্ভর ইতিহাসের বয়ান। সাধারণ দর্শনার্থীদের কল্পনাপ্রিয় মনকে এটি সহজেই উস্কে দিচ্ছে। শিলালিপিতে খোদাই করে লিখে রাখা ইতিহাসটি এরকমÑ ‘পলাশীর পরাজয়ের নীলনক্সাও রচিত হয়েছিল এইখানেÑ এই আমঝুপিতে। জনশ্রুতি আছে যে, এখানেই রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে মীর জাফর ও ষড়যন্ত্রকারীদের শেষ বৈঠক হয়েছিল এবং তার ফলে শুধু নবাব সিরাজউদ্দৌলারই ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেনি, বাঙালী হারিয়েছিল তার স্বাধীনতা।’ অথচ এ তথ্য যে মূল ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তা সহজেই অনুমান করা যায়। ড. অজিত কুমার মুখোপাধ্যায় এবং কল্যাণ চক্রবর্তীর লেখা সমৃদ্ধ গ্রন্থ ‘ডিসকভার চন্দরনগর’ তথ্যটি সমর্থন করে না। ‘মেহেরপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থের লেখক সৈয়দ আমিনুল ইসলামও আমঝুপি নীলকুঠি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছেন। তার মতে, এই নীলকুঠিসহ বাংলার সকল নীলকুঠির প্রতিষ্ঠা হয় পলাশী যুদ্ধের (১৭৫৭ সাল) অন্তত কুড়ি বছর পরে। ফলে এখানে বসে রবার্ট ক্লাইভ ও মীর জাফরের ষড়যন্ত্র করা বা শেষ বৈঠকে অংশ নেয়ার তথ্য একেবারেই ভিত্তিহীন। তার মতে, আমঝুপি কুঠিবাড়িতে ষড়যন্ত্র হয়েছিলÑ ইতিহাসে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এমনকি রবার্ট ক্লাইভও তার কোন রিপোর্ট, চিঠি বা ডায়েরিতে এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। তার বিভিন্ন সময়ের রিপোর্ট ও বক্তৃতায় আমঝুপি, মেহেরপুর বা নদীয়ার কোন স্থানে কোন গোপন বৈঠকের কথা আসেনি। এ অবস্থায় অহেতুক চমক সৃষ্টির চেষ্টা না করে যত দ্রুত সম্ভব তথ্য সংশোধন করার ওপর জোর দিতে বলছেন ইতিহাসবিদরা। এদিকে, অপরিকল্পিত বাগান করার কারণে ভবনের পেছনের অংশটি একরকম আড়ালে চলে গেছে। ভাল করে দেখার সুযোগ হয় না। আছে আরও কিছু সীমাবদ্ধতা। ঢাকায় ফিরে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক হান্নান মিয়ার সঙ্গে। নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। এরই মাঝে অবগত হয়েছেন আমঝুপি নীলকুঠি সম্পর্কে। কথা বলে তা অনুমান করা যায়। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমি নিজেই প্রতœ স্থাপনাটি পরিদর্শনে যাব। ইতিহাসের ভুল চর্চা, অসঙ্গতি ইত্যাদির প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সেইসঙ্গে আমঝুপি নীলকুঠির বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস গবেষণা করে বের করা এবং সেখানে তা তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি কমিঠি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। নীলকুঠির বহিরাঙ্গন সম্পূর্ণ দেখার সুবিধার্তে অপ্রয়োজনীয় বাগান সরিয়ে ফেলা হবে বলেও জানান তিনি। আর তা হলে, নিশ্চিত করেই বলা যায়, আরও বেশি উপভোগ্য এবং শিক্ষণীয় হবে আমঝুপি নীলকুঠি ভ্রমণ। আপাতত সে অপেক্ষা।
×