ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৯ বছর ধরে চোট বয়ে বেড়াচ্ছেন এ পেস অলরাউন্ডার, অস্ত্রোপচার হলে কী ধারাবাহিকতা থাকবে?

ঝুঁকিতে সাইফউদ্দিনের ক্যারিয়ার!

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ৫ আগস্ট ২০১৯

ঝুঁকিতে সাইফউদ্দিনের ক্যারিয়ার!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ খুব অল্প সময়ের মধ্যে আকাশচুম্বী সাফল্য পেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। অস্ত্রোপচার হতেই সেই সাফল্যে ভাটা পড়েছে। দলের মূল পেসার বলে ভালভাবেই টিকে আছেন। কিন্তু পিঠের চোটে অস্ত্রোপচার হলে নৈপুণ্যে ভাটা পড়লে কী মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও দলে টিকে থাকতে পারবেন? অস্ত্রোপচার হলে স্বাভাবিকভাবেই নৈপুণ্যে ব্যাঘাত করবে। আর তা হলে তো সাইফউদ্দিনের ক্রিকেট ক্যারিয়ারই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন। টি২০ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হয়ে ওয়ানডে খেলেছেন। ৯টি টি২০ ও ২০টি ওয়ানডে খেলেছেন। এর মধ্যে চোট এমনভাবে ঘিরে ধরেছে সাইফউদ্দিনকে, খেলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যথানাশক ওষুধ নিয়ে, ইনজেকশন নিয়ে আর কত খেলা যায়! তিনি আবার নয় বছর ধরে এ জটিল রোগে ভুগছেন। তার মানে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর পাঁচ বছর আগে থেকেই পিঠের চোটে ভুগছেন সাইফউদ্দিন! এখন এ রোগের স্থায়ী চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। স্থায়ী চিকিৎসা মানেই এমনও হতে পারে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে। আর অস্ত্রোপচার করলে এখন যে দলের নির্ভরযোগ্য পেস অলরাউন্ডার হয়ে উঠেছেন সাইফউদ্দিন, তা কী শেষ পর্যন্ত থাকবেন? বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বুঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘যেভাবে আমরা আগাচ্ছি সেটা হচ্ছে ওর এই সমস্যার কারণটা বের করতে হবে। সেটা নির্ণয় করা আমাদের দেশে সম্ভব না। এ জন্য আমরা চেষ্টা করছি ওকে বাইরে কোথাও পাঠিয়ে ওর একটা বায়োমেকানিক্যাল পরীক্ষার জন্য। কোন বায়োমেকানিক্যাল সমস্যার জন্য ওর কোমরে কোন বিশেষ জায়গায় বারবার চাপ পড়ছে কি না, তা নির্ণয় করতে গেলে এ ধরনের সুবিধা আছে এমন জায়গায় ওকে পাঠাতে হবে। বিসিবি প্রধান নির্বাহী (নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন) জানিয়েছেন, কোথায় এ ধরনের সুবিধা আছে সে ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার জন্য। আমরা যোগাযোগ শুরু করেছি, আশা করছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে জানতে পারব। ওর কোন মেকানিক্যাল সমস্যা আছে কি না, তা ধরা গেলে সেটি ঠিক করতে ওদের (বাইরের চিকিৎসক) নির্দেশনা অনুসরণের চেষ্টা করব।’ অস্ত্রোপচার হলে বোলিং এ্যাকশনে পরিবর্তন কিংবা ধারাবাহিকতায় কোন প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিকদের দেবাশীষ চৌধুরী জানান, ‘এটা পুরোপুরি কৌশলগত ব্যাপার। ওর (সাইফউদ্দিনের) সঙ্গে যিনি থাকবেন তিনি ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝে আসার চেষ্টা করবেন। ওখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং এক কথায় বলা যায় যে, যেটা ওর ক্যারিয়ারের জন্য সবচেয়ে ভাল মনে করবেন ওখানকার বিশেষজ্ঞরা, আমরা সেটাই অনুসরণের চেষ্টা করব। এখন টেকনিক্যাল পরিবর্তন আসবে কি না, সেগুলো এ্যাসেসমেন্টের (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) পর জানতে পারব। ওদের নির্দেশনা এবং আমাদের যিনি থাকবেন এ দুটো মিলিয়েই আমরা চেষ্টা করব ওর খেলোয়াড়ী জীবনটা দীর্ঘায়িত করার।’ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কতদিন পর ফিট হয়ে খেলতে পারবেন সাইফউদ্দিন? বিসিবির এ চিকিৎসক বলেন, ‘এ্যাসেসমেন্ট কোন চিকিৎসা নয়, এটা এক ধরনের পরীক্ষা। এ্যাসেসমেন্টের পরদিনই আপনি খেলতে পারবেন না। আমরা জানতে চাইছি ওর (সাইফউদ্দিন) সমস্যাটা কোথায়। এ ধরনের পরীক্ষা বিশেষ কিছু জায়গায় হয়। অস্ট্রেলিয়াতে আছে, ইংল্যান্ডে আছে, এমনকি ভারতেও আছে। আমরা সবার সঙ্গে চেষ্টা করব যোগাযোগ করার। যারা সাড়া দেবে আমরা তাদের সঙ্গে এগোনোর চেষ্টা করব।’ বিশ্বকাপে এই চোট নিয়েই খেলেছেন সাইফউদ্দিন। এর আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও খেলেছেন। আর ঘরোয়া লীগ তো আছেই। এ চোটের জন্য শ্রীলঙ্কা সফরে যেতে পারেননি সাইফউদ্দিন। চোটে পড়ার প্রবণতা যেন জাতীয় দলে বেড়েই চলেছে। এখান থেকে বের হওয়ার উপায়ও খুঁজছেন দেবাশীষ চৌধুরী, ‘আমরা একটানা ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টের আওতায় নিয়ে আসছি। প্রতিদিন কয়টা বল করবে কিংবা প্রতি সপ্তাহে কয়টা বল করবে এটার একটা বৈজ্ঞানিক নীতিমালা আছে। যাদেরই এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে, যেমন এ মুহূর্তে সাইফউদ্দিন যেহেতু ব্যাক-পেইনে ভুগছে, ওর বোলিং ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্টের আওতায় আছে। তবে এর আওতায় ও কিন্তু এখন বল করছে না। যখন ও বোলিংয়ে ফিরে আসবে তখন কিন্তু ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট ধরে সে এগোবে। প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য এভাবে ওয়ার্ক লোড ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া চলমান আছে।’ সাইফউদ্দিনের আসল সমস্যা কী? কয় বছর ধরে ভুগছেন? সেটিও জানান এ চিকিৎসক, ‘সাইফউদ্দিন একটা ক্রনিক লো ব্যাক পেইনে (কোমরের ব্যথা) ভুগছে। প্রায় নয় বছর ধরে এ সমস্যাটার কথা সে মাঝে-মধ্যেই আমাদের বলে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওর ব্যথাটা বেড়ে যাওয়ায় মাস ছয়েক আগে আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হই, ও এক ধরনের ফ্যাসেট জয়েন্ট (অস্থিসন্ধির) সমস্যায় ভুগছে। ফলশ্রুতিতে চিকিৎসার অংশ হিসেবে বিশ্বকাপের আগে আমরা ওর পুনর্বাসন ও ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করি। এ চেষ্টায় পুরোপুরি সাফল্য না আসায় আমরা ওকে ইনজেকশন দিই। এতে ওর ব্যথা কিছুটা কমে এবং সে তার খেলা চালিয়ে যেতে পারে।’ টানা খেলতে থাকলেই ব্যথা হচ্ছে। আর ব্যথা হলেই ইনজেকশন নিয়ে খেলতে নেমেছেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। আর তাই বিসিবি স্থায়ী চিকিৎসার চেষ্টা করছে। সেই স্থায়ী চিকিৎসা সাইফউদ্দিনের নৈপুণ্যে ব্যাঘাত ঘটালেই ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে বিপাকে পড়ে যাবেন তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্থায়ী চিকিৎসা শেষে আবার পুরোদমে নৈপুণ্যে ফিরুক সাইফউদ্দিন এটাই এখন সবার চাওয়া। এ পেস অলরাউন্ডার যে মাশরাফি বিন মর্তুজার ভাষায়, ‘ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সেরা সম্পদ।’
×