ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে ভোগান্তি ॥ অভিযোগের শেষ নেই

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৩ আগস্ট ২০১৯

পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে ভোগান্তি ॥ অভিযোগের শেষ নেই

আজাদ সুলায়মান ॥ ভোগান্তির অপর নাম-পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। জরুরী প্রয়োজনেও সহজে মিলছে না পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। সরকারী-বেসরকারী চাকরিতে যোগদান ও অন্যান্য প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়াটা সৌভাগ্যের বিষয়। দেশ যখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনেক দূর এগিয়েছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা সম্ভব হয়েছে তখনও সহজে মিলছে না পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। এটা এখনও রয়ে গেছে সেই মান্ধাতা আমলের মতোই। ক্লিয়ারেন্স পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নোটিস পাঠাতে হবে জেলা পুলিশ সুপার ও ডিএসবি কার্যালয়ে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় তা পাঠিয়ে দিয়ে অপরাধের খতিয়ান যাচাই করা হয়। তারপর প্রকৃত গ্রহীতার কাছে সেই রিপোর্ট পৌঁছানো হয়। এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কমপক্ষে এক মাস লাগে। অনেক ক্ষেত্রে ২/৩ মাসও লাগে। আবার যিনি অন্য পথের আশ্রয় নেন তিনি ২/৩ দিনের মধ্যেই পেয়ে যান। এ জন্য তাকে খরচ করতে হয় বাড়তি অর্থ। অর্থাৎ টাকা দিলে সরাসরি থানা থেকেই একদিনে মিলছে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। না দিলে আইন দেখানো হয়, এসপি অফিসের মাধ্যমেই নিতে হবে এ রিপোর্ট। সম্প্রতি কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেই রিপোর্ট একদিনেই দেয়া সম্ভব সেটা পেতে সময় লাগে মাসেরও বেশি। জরুরী প্রয়োজনে ২/৩ দিনের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে হলে হয় বড় তদবির নয় নগদ নারায়ণ লাগবেই। প্রশ্ন উঠছে- কেন এত সময় লাগবে, কেন এত ভোগান্তি। ব্যক্তির নামে তার নিজ থানায় কোন মামলা মোকদ্দমা আছে কিনা বা তিনি রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তি কিনা সে তথ্য তো নিজ নিজ থানাতেই সংরক্ষিত থাকে। ওই থানা ইচ্ছে করলে এক ঘণ্টার মধ্যেই তা যাচাই-বাছাই করে একটা সনদ লিখে দিতে পারে। এ জন্য সেই জটিল পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে কেন? কেন সেই নোটিস জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যম হয়ে আসতে হবে থানায়? এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা বিষয়টি অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। মানুষ যাতে আরও দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট পায়- সে উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে এত সময় লাগছে কেন তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বলা যাবে। সাধারণত একটা প্রক্রিয়া তো ফলো করতে হয়। এখন আগের চেয়ে অনেক সহজে এটা পাওয়া যায়। রাজধানীবাসীর জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের অফিসে ওয়ান স্টপ সেন্টারের মাধ্যমে খুুব দ্রুত সময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ডেলিভারি দেয়া হচেছ। যাদের দরকার তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পারেন। সেখানে খুব সহজেই ক্লিয়ারেন্স পাওয়া যায়। এ নিয়ে কোন অভিযোগ এখনও শুনিনি। কতটা দরকার? ভুক্তভোগীরা যারা চরম ভোগান্তির মাধ্যমে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করেছেন, তাদের সচেতন অংশটা বেশ জোর ও যুক্তি দেখিয়ে বলছেন- বর্তমানে যেখানে ন্যাশনাল আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক-সেখানে কেন আবার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দরকার? এমনকি দুদকও সর্বশেষ তাদের মতামতে পাসপোর্ট তৈরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। পাসপোর্ট তৈরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং সত্যায়িত করার বিষয়টি বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাষ্ট্রপতিকে দেয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে দুদকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। গত ১৩ মে বঙ্গভবনে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে কমিশনের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির কাছে এ প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিবেদনের ৮.৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়, পাসপোর্ট যাচাই কার্যক্রমে পুলিশ কর্তৃক কথিত ঘুষ গ্রহণের সুযোগ থাকে। এ কারণে পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশকে একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া যেতে পারে অথবা এ পদ্ধতি বিলুপ্ত করা যেতে পারে। এ ছাড়া সম্প্রতি এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভীর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন বিষয়ক যে বৈঠক হয়- সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সামনে থেকে দেশের জনগণের পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থার আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখনও আলোর মুখ দেখেনি। বৈঠকের অধিকাংশ কর্মকর্তা পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যবস্থা তুলে নেয়ার পক্ষে মত দেন। সাধারণ মানুষও এতে আপত্তি তুলছে। তাদের মতে-পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা ভেরিফিকেশনের নামে সবচেয়ে বেশি হয় ঘুষ বাণিজ্য। এটি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা, গোলটেবিল বৈঠক হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে সেটি আর এগোয় না। একজন নাগরিকের যদি জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে- তাহলে কেন তাকে পুলিশ ভেরিফিকেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে? সম্প্রতি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সাংবাদিক জানান, তার বাসা কলাবাগান থানার অধীনে। তিনি পরিবারের পাঁচ সদস্যের জন্য পাসপোর্ট নবায়ন করতে গেলে পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার হয়। অনলাইনে তিনি আবেদন করে প্রতিটির জন্য ৫শ’ টাকার চালান জমা দিয়ে নিশ্চিন্তে বাসায় অপেক্ষায় থাকেন। অনলাইনের আবেদন ফরমে লেখা ছিল- নিজ বাসায় সরাসরি বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে সাতদিনের মধ্যে। কিন্তু পনেরো দিনেও তিনি সেটা না পাওয়ায় কলাবাগান থানায় খোঁজ নিতে গেলেন। তখন থানা থেকে তাকে বলা হয়, ডিএমপির ওয়ানস্টপ সেন্টার থেকে জীবনেও পাঠাবে না। তাকে কমিশনার অফিসে ১০৯ নং রুমে থেকে সশরীরে হাজির হয়ে কিছু খরচাপাতি দিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। বাধ্য হয়েই তিনি সেখানে হাজির হবার পর তাকে বলা হয়- এখনও তৈরি হয়নি। একজন পরিদর্শক তাকে পরামর্শ দেন ওই রুমের পিয়নকে কিছু খরচাপাতি দিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন তার পকেটে ছিল মাত্র পাঁচশ টাকা। তিনি সেটা দেয়ার পর ওই পরিদর্শক বললেন, ঠিক আছে আমার পকেট থেকে বাকি ২ হাজার টাকা দিয়ে দেই। পরে আপনি সেটা দিয়ে দিয়েন। ওই পরিদর্শকের এমন পরোপকারের (!) মনোভাব দেখে লজ্জিত হয়ে সেখান থেকে প্রেসক্লাবে গিয়ে ব্যাংক থেকে আরও দুই হাজার টাকা তুলে ১০৯ নং রুমে যান। পাঁচটি পাসপোর্টের জন্য ৫শ’ করে মোট আড়াই হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয় তাকে। এরপর যেদিন তিনি রিপোর্ট আনতে গেলেন তখন তাকে বলা হয়, পরিবারের অন্যদের রিপোর্ট তার কাছে দেয়া যাবে না। সবাইকে একযোগে সেখানেই উপস্থিত হয়েই এই রিপোর্ট নিতে হবে। এমন শর্ত শুনে তিনি উত্তেজিত হয়ে জানতে চান, বাবা হয়ে আমি ছেলের রিপোর্ট নিতে পারব না। এটা কি অপরাধ হবে? তার প্রতিক্রিয়া দেখে অপর একজন পরিদর্শক শেষ পর্যন্ত তার কাছে বাকিদেরটা রিপোর্ট দিতে বাধ্য হন। ভোগান্তির এর চেয়ে বড় নজির আর কি হতে পারে প্রশ্ন রেখে বললেন, নিজে সাংবাদিক হওয়ার পরও এই ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। যেটা ইচ্ছা করলে পুলিশ একদিনেই দিতে পারে- সেটা কমপক্ষে ২০ দিন লাগে। আমি নিজে এই ভোগান্তি সহ্য করেছি। এমনকি আমার সন্তানের জন্য তৈরি করা প্রতিবেদনও আমার পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। বৈধ অভিভাবকের প্রমাণাদি প্রদর্শনের পরও তারা দিতে চায়নি। তার মতো এমন অসংখ্য ভুক্তভোগী ও হয়রানির উদাহরণ পাওয়া গেছে। পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙগা আউলিয়াপাড়ার বাসিন্দা মিনহাজ বছর দুই ঘুরেও একটি পুলিশ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পারেননি। একটি হিটম্যান পেস্ট কন্ট্রোল নামের একটি কোম্পানির কর্মচারী হিসেবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজ করতে গেলে নিরাপত্তা পাস আবশ্যক। কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট বা ক্লিয়ারেন্স ছাড়া নিরাপত্তা পাস ইস্যু করা হয় না। বাধ হয়েই তাকে নিজ থানা পাকুন্দিয়ায় ছুটতে হয়। বছর দুয়েক আগে তিনি থানার তৎকালীন ওসির কাছে সরাসরি দরখাস্ত নিয়ে গেলে তাকে পরামর্শ দেয়া হয় এটা জেলা পুলিশ সুপার ও ডিবির অফিস হয়ে আসতে হয়। বারবার অনুরোধ করার পরও মিনহাজকে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। এরপর মিনহাজের জন্য একটি চিঠি পাঠানো হয় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। মিনহাজ আজও তার ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট হাতে পাননি। কবে নাগাদ পাবেন সেটাও তাকে কেউ নিশ্চিত করতে পাননি। উত্তরার গৃহবধূ ফারজানার মতে, পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি বা হয়রানির চেয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের হয়রানি পাসপোর্ট গ্রাহকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ক্ষেত্রে যারা দেশের বাইরে থাকে- জরুরী প্রয়োজনে তাদের আরও বেশি হয়রানির শিকার হতে হয়। হাবিব নামে বিমানের এক সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী জানান, তার চাকরির বেতন ভাতাদি নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। বিমান থেকে তার ভেরিফিকেশন চেয়ে মালিবাগের এসবি অফিসে বছর খানেক আগে একবার চিঠি পাঠানোর পরও কোন সাড়া আসেনি। সেই চিঠির খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন ওই অফিস থেকেই সেটা গায়েব হয়ে গেছে। পরে তিনি বিমান থেকে আবারও চিঠি পাঠিয়েছেন মাস তিনেক আগে। এখনও সেটার কোন খোঁজ নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়-পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা ভেরিফিকেশন আনতে হলে বিশেষ তদবির করতে হয়। সে ক্ষেত্রে আর এত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা লাগে না। সাধারণ নিয়মানুযায়ী তখন আর জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হতে হয় না। সরাসরি নিজ থানা থেকেই সংগ্রহ করা যায়। একই অবস্থা পিরোজপুরের মান্নান, শফিকুল ইসলাম, ঢাকার রেশমা ও মামুনের। তারা বারবার থানায় ধর্না দিয়েও পুলিশ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন। তাদেরও থানা থেকে পরামর্শ দেয়া হয় জেলা পুলিশ সুপারের অফিস হয়ে দরখাস্ত আনা লাগবে। তাহলে দেয়া যাবে। এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ হাবিবুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, অভিযোগ নিয়ে আসেন আমার কাছে। আমি তিন দিনের মধ্যে সমাধান দিয়ে দেব। আমি এ ধরনের সমস্যা নিয়েই কাজ করছি। আমি চেষ্টা করছি যাতে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে এ ধরনের সেবা পাওয়া যায়। তারপরও যদি কেউ সাহায্য চায় আমি তাকে সহযোগিতা করব। আমি তো বসেই আছি এভাবে মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে এত জটিলতা ও বিলম্ব হবার কোন যৌক্তিকতা নেই বলে উল্লেখ করে সাবেক আইজিপি নুরুল আনোয়ার জনকণ্ঠকে বলেন- ইচ্ছে করলে কোন নাগরিককে চাওয়ার মাত্র তিনদিনের মধ্যেই এটা দেয়া সম্ভব। মানুষ তার প্রয়োজনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চাওয়ার জন্য এখন জেলা পুলিশ সুপার ও এসবি অফিসের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে অনেক হেনস্তার শিকার হচেছ। এক সময় থানা থেকে সরাসরি দেয়া হতো। তখন আরও বেশি অনৈতিক সুবিধা আদায় করা হতো। পরে সেটা এসপি ও এসবি অফিসের মাধ্যমে চালু করা হয়। আমি মনে করি এই পদ্ধতি আরও সহজ করা যেতে পারে। কোন থানায় গিয়ে নাগরিক সরাসরি এটা চাইলে- তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ভাল মন্দ যেটা পাওয়া যায় সেটা তিন দিনের মধ্যে লিখে দেয়া সম্ভব। তিনদিনের মধ্যে কিছু না পাওয়া গেলে সেটা চিঠিতে শর্তও দেয়া যেতে পারে। যেমন এখন পর্যন্ত কোন কিছু পাওয়া যায়নি পরে পাওয়া গেলে জানানো হবে। তিনি বলেন এখন কোন নাগরিকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা মোকদ্দমা আছে কিনা কিংবা তার নাম ঠিকানা নাগরিকত্ব ঠিক আছে কিনা তা থানায় বসে ইউপি তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে দু’একদিনের মধ্যে জানা ও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কিংবা নিজস্ব সোর্সের আশ্রয়ে সেটা অনায়াসে করার সুযোগ আছে। আর থানার রেকর্ডে কিছু থাকলেও সেটা একদিনেই অনায়াসে বের করা সম্ভব। এজন্য মাসের পর মাস কিংবা দীর্ঘ সময় লাগার প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই আমি মনে করি এখনই এ বিষয়ে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এদিকে সম্প্রতি এক গবেষণায় টিআইবি নতুন পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতির কারণে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা ওই ব্যবস্থা বাতিলের সুপারিশ করেছে। টিআইবির মতে- নতুন পাসপোর্টের আবেদনকারীদের তিন-চতুর্থাংশকেই পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ‘ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত টাকা’ দিতে হয়। হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ করতে পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিয়ম বাতিল করা উচিত। এমনকি পাসপোর্ট অফিসের অনেক কর্মকর্তারও একই মত থাকলেও পুলিশের একটি অংশ চায় না এটি বাতিল হোক। টিআইবির ওই গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, গবেষণা প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে পুলিশ ভেরিফিকেশনে হয়রানি হচ্ছে কাজেই এটার কোন দরকারই নেই। এর বদলে সকল নাগরিকের জন্য ‘বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক’ এবং ‘অপরাধী তথ্য ভান্ডার- তৈরি করে তার সঙ্গে পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সংযোগ স্থাপন করার সুপারিশ করা হয়। টিআইবির জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। এর মধ্যে ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়েছেন। আর ২৭ শতাংশ উত্তারদাতা অযথা সময়ক্ষেপণের শিকার হওয়ার এবং ২ দশমিক ২ শতাংশ পাসপোর্টগ্রহীতা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার কথা বলেছেন। জরিপের তথ্যানুযায়ী, সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও অনিয়ম হয় পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে। ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ উত্তরদাতা এ কাজের জন্য অনিয়ম ও হয়ারনির শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য তাদের ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত টাকা দিতে হয়েছে। ঘুষের গড় পারিমাণ ৭৯৭ টাকা। আর পাসপোর্ট অফিসে ঘুষের গড় পরিমাণ দুই হাজার ২২১ টাকা। টিআইবির এই রিপোর্টের পর পাসপোর্ট অফিসের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে তিনি টিআইবির বেশ কিছু বিষয়ে আপত্তি তুললেও পুলিশ ভেরিফিকেশন এখনও দরকার বলে মত দেন। অনেক রোহিঙ্গা ও ভারতীয় কিছু নাগরিক পাসপোর্ট করতে এসেছে, যা ধরা পড়েছে বলেও জানান তিনি। সবার স্মার্ট আইডি কার্ড হয়ে গেলে তখন এটি বিবেচনা করা হতে পারে বলে জানান তিনি। প্রকৃতপক্ষে কী হয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা ভেরিফিকেশনে। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি), তাদের ছাড়পত্রের (ভেরিফিকেশন) জন্য। পুলিশের এই দফতর ‘অযথা’ আবেদনপত্রে ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। জঙ্গি কার্যক্রম বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সন্দেহের কথা বলে ভয় দেখায়। বাড়িতে না গিয়ে চায়ের দোকান বা থানায় ডেকে পাঠায়। ঘুষ দাবি করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমেও পাঠাতে বলে। পুলিশ জানিয়েছে- সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলে আসছে এই ভেরিফিকেশনের বিষয়টি। আগে কোন কাজে পুলিশের কাছে থেকে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট লাগত। সেখানে লেখা থাকত- ওই ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রবিরোধী কাজে জড়িত নয়। এ সম্পর্কে একজন অভিভাবক মামুন বলেন, যে নাগরিকের জাতীয় নাগরিকত্ব সনদ রয়েছে- সেই নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ারও অধিকার রয়েছে। যদিও পুলিশের একটি খোঁড়া অজুহাত থাকে, ভেরিফিকেশন না থাকলে খারাপ লোকেরা পাসপোর্ট পেয়ে যাবে। আমার প্রশ্ন- এখনও তো অনেক খারাপ লোক পাসপোর্ট পাচ্ছে। নইলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ গিয়ে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি করছে কেমন করে। পুলিশ ভেরিফিকেশনে এলে টাকা দিলেই যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায় তবে খারাপ লোকের তো ওই সামান্য টাকা দিতে সমস্যা থাকার কথা নয়। পাসপোর্ট তো কোন নাগরিকের সার্টিফিকেট নয়। একজন মানুষ অপরাধী কিনা বা কোন সামাজিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা সেটাতো পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা হতে পারে না। তাহলে তাকে কেন জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হলো। সে সময়ইতো তাকে আটকানোর কথা। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জনকণ্ঠকে বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা ভেরিফিকেশনের কোন ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রক্রিয়াজনিত কারণে কিছুটা সময় হয়তো লাগতে পারে, যেমন এটা বিভিন্ন দফতর হয়ে ধাপে ধাপে যেতে হয়। রাজধানীতে হলে, কমিশনার অফিসে ওয়ান স্টপ সেবা কেন্দ্র্র রয়েছে। ঢাকার বাইরে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের মাধ্যমে থানা থেকে নিতে হয়। এর জন্য হয়তো দিন সাতেক বা আরও কিছু সময় লাগতে পারে। কিন্তু তিন চার মাস লাগে এমনটা আমার জানা নেই।
×