ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

জাস্টিন গোমেজ

গণপিটুনি গণবিরোধী

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ১ আগস্ট ২০১৯

গণপিটুনি গণবিরোধী

কিছুদিন যাবত দেশ বেশকিছু বিষয় নিয়ে আলোড়িত হচ্ছে। কিছুদিন আগে রটানো হলো পদ্মা সেতু তৈরিতে মানুষের মাথা লাগবে। রাতারাতি এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল আর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে উঠল। সরকার ও প্রশাসন তা বন্ধ করার জন্য মিডিয়াকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করল। কিন্তু বাংলাদেশের সহজ-সরল ধর্মবিশ্বাসী মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূর হচ্ছে না। কেননা একটার পর একটা ঘটনা ঘটে চলেছে। বেশকিছু দিন ধরে এই গুজবকে পুঁজি করে ছেলেধরাদের উৎপাত অসহনীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর যারা এসব কাজ করছে তাদের হাতে বলি হচ্ছে নিরীহ মানুষগুলো। ফলে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজ তথা রাষ্ট্রে বিরাজ করছে এর ধরনের বিশৃঙ্খলা। গুজব একটার পর একটা রটে যাচ্ছে। একটি বন্ধ হচ্ছে তো আরেকটি গজিয়ে উঠছে। আর একটি স্বার্থান্বেষী মহল সুপরিকল্পিতভাবে দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। এটি পরিষ্কার যে, একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এখন গুজব ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ দেশের বাইরে থেকেও এগুলো করছে। সরকারের পক্ষ থেকে এর প্রতিরোধের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। গুজবের ঘটনায় এ পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের কয়েকজনের লিংক পাওয়া গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে এবং তাদের প্রোফাইল তৈরির কাজ চলছে। তারপরও মানুষের মন থেকে শঙ্কা দূর হচ্ছে না। এ শঙ্কা দূর করার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যে মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে তা কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গুজবে ক্ষতির শিকার হয় অনেক নিরপরাধী মানুষ। আর ক্ষতিটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে মানুষের প্রাণ পর্যন্ত নাশ হয়ে যাচ্ছে। আর যারা এসব করে তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, প্রতিপক্ষের চরিত্র হনন, কলঙ্ক লেপন, অনুভূতিতে আঘাত, তথ্য বিকৃতি এবং গুজব রটানো। আর এসব করে তারা এক ধরনের বিকৃত আনন্দ পায়। এরা স্বাভাবিক উপায়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে না বলে গুজব রটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে। কারও কাছ থেকে কাজ উদ্ধার করতে না পারলেই গুজব রটিয়ে দিলেই হয়। এভাবে গুজব রটিয়ে, আগুন ধরিয়ে দিয়ে অনেকেই ‘আলুপোড়া’ খায়। ফলে অনেকের সর্বনাশ হলেও স্বার্থান্বেষীরা লাভের আশায় এমন কাজ সুযোগ পেলেই করে! পরিতাপের বিষয় আমাদের শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তিরাই গুজব রটানো ও গুজব ছড়ানোতে তাদের পারদর্শিতা প্রকাশ করে যাচ্ছে। আমাদের সচেতন হতে হবে যেন আমাদের কাজ-কর্ম, আচার-আচরণ কোনক্রমেই গুজবের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় এবং সামাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে। গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে সামিল হওয়ার নাম ধার্মিকতা বা নেতৃত্ব নয়, ররং এগুলো নিছক ভ-ামি বা কপটতা ছাড়া আর কিছু নয়। এমনকি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বা আবেগ-অনুভূতি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য যাতে হুমকি না হয়, সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখা ও সচেতন হওয়া দরকার। আসুন, নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। মিথ্যা, বিকৃত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ষড়যন্ত্র ও উস্কানিমূলক তথ্য এবং গুজব প্রচার থেকে বিরত থেকে প্রকৃত সত্য প্রকাশে সচেষ্ট হই। জীবনের সর্বক্ষেত্রে মূল্যবোধবর্জিত আবেগ পরিহার করি এবং সহানুভূতিসম্পন্ন বিবেকবোধ জাগ্রত করি। সত্য সন্ধান ও সত্য প্রচারে নিজ নিজ অবস্থান থেকে একটু সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি। যাতে করে কোন অশুভ শক্তি আমাদের আবেগ-অনুভূতি ও অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে না পারে, আমাদের সমাজকে অস্থিতিশীল করতে না পারে। গুজব ছড়িয়ে মানুষকে দিকভ্রান্ত করে কোন মহল বড় ধরনের কোন নাশকতা করার পরিকল্পনা করছে কি-না সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সচেতন থাকবেন এবং তা রোধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা করবেন বলে বিশ্বাস করি। আমাদের ধর্ম যদি হয় মানব ধর্ম আর প্রেম যদি হয় মানবপ্রেম তাহলে গুজব রটবে না ও গণপিটুনির মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। যারা গ্রামে, সমাজে, দেশে গুজব রটায় তাদের চিহ্নিত করে সংশোধনের যথাযথ ব্যবস্থা করা দরকার। প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থা করে হলেও গুজব বন্ধ করা দরকার। গুজব বন্ধ হলে অনেক মানুষের জীবন শান্তি-আনন্দে ভরে উঠবে। ঢাকা থেকে
×