ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে ঋণের খেলাপী

শিল্প ঋণে খেলাপী বেড়েছে ৩৬ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৩১ জুলাই ২০১৯

শিল্প ঋণে খেলাপী বেড়েছে ৩৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শিল্প খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ ও আদায় দুই বাড়ছে। বিশেষ করে শিল্প স্থাপনের মেয়াদী ঋণ বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খেলাপী ঋণের পরিমাণও। দীর্ঘদিন ধরেই বকেয়া থেকে যাচ্ছে এ অর্থ। ফলে এ খাতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত নয় মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ৩৬ শতাংশের বেশি। এ পরিমাণ বকেয়া ব্যাংক খাতের মোট খেলাপী ঋণের প্রায় অর্ধেক। এসব ঋণের বড় অংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-মার্চ) এ খাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় বেড়েছে যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। একই সময়ে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি বা ৩৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে গত তিন মাসে এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ কমেছে ১০ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকাররা জানান, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতি বেড়েই চলেছে। এখন সব খাতের ঋণেই খেলাপীর পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে বিশেষ সুবিধা নিলেও এখন ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করছেন। সাধারণভাবে বড় শিল্পের মালিকদের অনেকেই উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশসহ নানা সুবিধা নিয়ে খেলাপী দেখানো থেকে বিরত থাকেন। ফলে অন্য খাতের তুলনায় শিল্পের ঋণখেলাপী কম হয়। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষ কয়েক গ্রাহকের কাছে শিল্প ঋণের টাকার বড় অংশ খেলাপী হওয়ায় এবার শিল্প ঋণের খেলাপী বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃহৎ শিল্প ঋণে সুদ হার বেশি নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। যদিও সম্প্রতি ঋণ খেলাপীদের নানা সুবিধা দিয়েছে সরকার। জানা গেছে, গত মার্চ শেষে দেশের শিল্প খাতে বকেয়া ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৪৮৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। গতবছরের এই সময়ে যা ছিল ৩৬ হাজার ৯৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। নয় মাসের ব্যবধানে বকেয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ হাজার ৮৯৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা বা ৩৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এই সময়ে এ খাতে মোট ঋণ বিতরণ হয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ১৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে এ খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। ফলে এ সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। এর মধ্যে মেয়াদী ঋণ বিতরণ হয়েছে ৫৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। আর চলতি মূলধন ঋণ বিতরণ হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) পর্যন্ত সর্বোচ্চ শিল্প ঋণের যোগান দিয়েছে বেসরকারী ব্যাংকগুলো, এই হার ৭৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১ দশমিক ১৮ শতাংশ, বিদেশী ব্যাংকগুলো ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ যোগান দিয়েছে। এ সময়ে শিল্প ঋণ আদায়ও বেড়েছে। এ সময়ে মোট শিল্প ঋণ আদায় হয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদী শিল্প ঋণ ৫২ হাজার ৯৪০ কোটি এবং চলতি মূলধন ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে শিল্প ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জুলাই-মার্চে শিল্পের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। এ সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ শিল্প ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। এছাড়াও একই সময়ে মোট শিল্প ঋণের শ্রেণীকৃত স্থিতির মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ৫০ দশমিক ৭৬ শতাংশ, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ৩৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ রয়েছে।
×